সাজিদ মোহন
দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বানান ভুলকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তৎপরতা। ১৬ ডিসেম্বর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ডায়াসে দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে শপথ পড়িয়েছেন, সেই ডায়াসের পোডিয়ামে ‘মুজিববর্ষ’র জায়গায় লেখা হয়েছে ‘মুজিবর্ষ’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তারের আগে, সাধারণত বানান ভুল দেখা যেত বইপুস্তক ও সংবাদপত্রে। দুর্বল সম্পাদনা ও অপেশাদার প্রুফ রিডারের কারণে সৃষ্ট ভুলকে ‘ছাপাখানার ভূত’ বলে চালিয়ে দিতেন লেখক, প্রকাশকেরা। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বানান ভুল হয় পরীক্ষার খাতায়। একবার এক পরীক্ষার খাতায় প্রচুর বানান ভুল দেখে মাস্টারমশাই খাতার মধ্যেই লিখে দিয়েছিলেন, ‘বানান ভুলের তাজ্জব কাণ্ড’। আর ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের বানান ভুলগুলোকে কবি-সাহিত্যিকেরা নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। কবি রফিক আজাদ ‘বিশ বছর আগে ও পরে’ কবিতায় লিখেছেন:
‘এমনি বহুতর ভয়াবহ ভুলে-ভরা ছিল তোমার ব্যক্তিগত অভিধান। কিন্তু সে-সময়, সেই সুদূর কৈশোরে ঐ মারাত্মক ভুলগুলো তোমার বড়-বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলুম।
তোমার পরীক্ষার খাতায় সর্বদাই সাধু ও চলতির দূষণীয় মিশ্রণ ঘটাতে। ভাষা-ব্যবহারে তুমি বরাবরই খুব অমনোযোগী ছিলে।’
ভুল বানানকে সবাই যে ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখেছেন, তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ আবার ক্ষুব্ধও হয়েছেন। কবি বেলাল মোহাম্মদ ছড়া লিখেছেন:
‘ভুল লিখতে ভুল যে করে
বজ্রপাতে যেন মরে
শুদ্ধ বানান যে না শেখে
মা’র মরা মুখ যেন দ্যাখে।’
বিভিন্ন দোকান, সরকারি-বেসরকারি অফিসের সাইনবোর্ড, ব্যানার, বাস, টেম্পো, রিকশার গায়ে মজার মজার বানান ভুলের দেখা মেলে। সেসব ভুল নিয়ে হাস্যরসের সীমা থাকে না। ইদানীং সবচেয়ে বেশি বানান ভুল দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। আবার কেউ যদি ভুলটা ধরিয়ে দেন, ভুলকারী উত্তর দেন, কি-বোর্ড বা কি-প্যাডে সমস্যা আছে। ‘মুজিববর্ষ’ বানান ভুলের ব্যাপারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির মিডিয়া কনসালট্যান্ট আসিফ কবীর স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা একটি চিপ-এ পিসি থেকে ট্রান্সফার করে এলইডি মিনি মনিটরে লেখাটি উৎকীর্ণ করেছি। ডিভাইস ট্রান্সফারের কোনো পর্যায়ে একটি ‘ব’ অক্ষর অমিট হয়ে গেছে। আমরা পিসিতে চেক করে দেখেছি এটি ঠিকই আছে। অ্যাডভান্স টেকনোলজির বিষয়টি হয়তো স্যুট করেনি।’
ভাষাবিষয়ক পণ্ডিতেরা শব্দের বানান ভুলের পেছনে দুটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন: (ক) শব্দের সঠিক বানান না জানা বা ভুলে যাওয়া, (খ) লিখতে লিখতে কলম-বিচ্যুতি বা আজকাল টাইপের সময় আঙুলের বিচ্যুতি। আগের দুটির সঙ্গে এবার নতুন করে যুক্ত হলো ‘প্রযুক্তিগত গোলমাল’।
বাস-টেম্পোর ভুলগুলোকে কিছুটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা যায়। কিন্তু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ও চিঠিতে হরহামেশাই দেখা মেলে বানান ভুলের। ২০০৯ সালে ঝিনাইদহের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এক সহকারী শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করার এক চিঠিতেই বানান ভুল করেছিলেন ৪০টির বেশি। একই বছর নরসিংদীর জেলা প্রশাসকের এক চিঠিতে পাওয়া যায় ২৪টি ভুল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউসি) মহাপরিচালকের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের মূল অংশে ২৭টি ভুল পাওয়া যায়।
মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। কবিগুরু বিশ্ববরেণ্য হতে পারেন, কিন্তু তিনিও ‘বাণান’ ভুল করেন–এই অভিযোগ জানিয়ে খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিঠি লিখেছিলেন বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলের খ্যাতিমান ছাত্র, অঙ্কে পণ্ডিত দেবপ্রসাদ ঘোষ। তাঁর অভিমত ছিল বর্ণন থেকে আসার জন্য ‘বাণান’ লিখতে হবে। চিঠি চালাচালির একপর্যায়ে শেষ চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ জানান, স্বাস্থ্য এবং সময়ের অভাববশত তাঁর পক্ষে এ তর্ক চালানো অসম্ভব।
বানান ভুলের জন্য জরিমানাসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। ভাষার প্রশ্নে শুদ্ধ বানানের বিষয়টি যদিও সিরিয়াস, আমাদের দেশে বিষয়টিকে হাসিঠাট্টা করে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতাই লক্ষণীয়।
সাজিদ মোহন, শিশুসাহিত্যিক
দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বানান ভুলকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তৎপরতা। ১৬ ডিসেম্বর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ডায়াসে দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে শপথ পড়িয়েছেন, সেই ডায়াসের পোডিয়ামে ‘মুজিববর্ষ’র জায়গায় লেখা হয়েছে ‘মুজিবর্ষ’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তারের আগে, সাধারণত বানান ভুল দেখা যেত বইপুস্তক ও সংবাদপত্রে। দুর্বল সম্পাদনা ও অপেশাদার প্রুফ রিডারের কারণে সৃষ্ট ভুলকে ‘ছাপাখানার ভূত’ বলে চালিয়ে দিতেন লেখক, প্রকাশকেরা। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বানান ভুল হয় পরীক্ষার খাতায়। একবার এক পরীক্ষার খাতায় প্রচুর বানান ভুল দেখে মাস্টারমশাই খাতার মধ্যেই লিখে দিয়েছিলেন, ‘বানান ভুলের তাজ্জব কাণ্ড’। আর ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের বানান ভুলগুলোকে কবি-সাহিত্যিকেরা নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। কবি রফিক আজাদ ‘বিশ বছর আগে ও পরে’ কবিতায় লিখেছেন:
‘এমনি বহুতর ভয়াবহ ভুলে-ভরা ছিল তোমার ব্যক্তিগত অভিধান। কিন্তু সে-সময়, সেই সুদূর কৈশোরে ঐ মারাত্মক ভুলগুলো তোমার বড়-বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলুম।
তোমার পরীক্ষার খাতায় সর্বদাই সাধু ও চলতির দূষণীয় মিশ্রণ ঘটাতে। ভাষা-ব্যবহারে তুমি বরাবরই খুব অমনোযোগী ছিলে।’
ভুল বানানকে সবাই যে ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখেছেন, তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ আবার ক্ষুব্ধও হয়েছেন। কবি বেলাল মোহাম্মদ ছড়া লিখেছেন:
‘ভুল লিখতে ভুল যে করে
বজ্রপাতে যেন মরে
শুদ্ধ বানান যে না শেখে
মা’র মরা মুখ যেন দ্যাখে।’
বিভিন্ন দোকান, সরকারি-বেসরকারি অফিসের সাইনবোর্ড, ব্যানার, বাস, টেম্পো, রিকশার গায়ে মজার মজার বানান ভুলের দেখা মেলে। সেসব ভুল নিয়ে হাস্যরসের সীমা থাকে না। ইদানীং সবচেয়ে বেশি বানান ভুল দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। আবার কেউ যদি ভুলটা ধরিয়ে দেন, ভুলকারী উত্তর দেন, কি-বোর্ড বা কি-প্যাডে সমস্যা আছে। ‘মুজিববর্ষ’ বানান ভুলের ব্যাপারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির মিডিয়া কনসালট্যান্ট আসিফ কবীর স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা একটি চিপ-এ পিসি থেকে ট্রান্সফার করে এলইডি মিনি মনিটরে লেখাটি উৎকীর্ণ করেছি। ডিভাইস ট্রান্সফারের কোনো পর্যায়ে একটি ‘ব’ অক্ষর অমিট হয়ে গেছে। আমরা পিসিতে চেক করে দেখেছি এটি ঠিকই আছে। অ্যাডভান্স টেকনোলজির বিষয়টি হয়তো স্যুট করেনি।’
ভাষাবিষয়ক পণ্ডিতেরা শব্দের বানান ভুলের পেছনে দুটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন: (ক) শব্দের সঠিক বানান না জানা বা ভুলে যাওয়া, (খ) লিখতে লিখতে কলম-বিচ্যুতি বা আজকাল টাইপের সময় আঙুলের বিচ্যুতি। আগের দুটির সঙ্গে এবার নতুন করে যুক্ত হলো ‘প্রযুক্তিগত গোলমাল’।
বাস-টেম্পোর ভুলগুলোকে কিছুটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা যায়। কিন্তু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ও চিঠিতে হরহামেশাই দেখা মেলে বানান ভুলের। ২০০৯ সালে ঝিনাইদহের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এক সহকারী শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করার এক চিঠিতেই বানান ভুল করেছিলেন ৪০টির বেশি। একই বছর নরসিংদীর জেলা প্রশাসকের এক চিঠিতে পাওয়া যায় ২৪টি ভুল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউসি) মহাপরিচালকের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের মূল অংশে ২৭টি ভুল পাওয়া যায়।
মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। কবিগুরু বিশ্ববরেণ্য হতে পারেন, কিন্তু তিনিও ‘বাণান’ ভুল করেন–এই অভিযোগ জানিয়ে খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিঠি লিখেছিলেন বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলের খ্যাতিমান ছাত্র, অঙ্কে পণ্ডিত দেবপ্রসাদ ঘোষ। তাঁর অভিমত ছিল বর্ণন থেকে আসার জন্য ‘বাণান’ লিখতে হবে। চিঠি চালাচালির একপর্যায়ে শেষ চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ জানান, স্বাস্থ্য এবং সময়ের অভাববশত তাঁর পক্ষে এ তর্ক চালানো অসম্ভব।
বানান ভুলের জন্য জরিমানাসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। ভাষার প্রশ্নে শুদ্ধ বানানের বিষয়টি যদিও সিরিয়াস, আমাদের দেশে বিষয়টিকে হাসিঠাট্টা করে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতাই লক্ষণীয়।
সাজিদ মোহন, শিশুসাহিত্যিক
১০ বছর ধরে নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াত। নাম দিয়েছেন ‘রবি পথ’। অবশেষে প্রকাশ হচ্ছে তাঁর আত্মজীবনী। আগামী ২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে রবি পথের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
১ ঘণ্টা আগেএকদিন ভোরবেলা জাকারবার্গ লক্ষ করলেন যে পৃথিবীতে একটা ছোট্ট দেশে তাঁর সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হচ্ছে। সামনের ফ্লোরটায় দেখলেন দেশটা ছোট বটে, কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। আর এই দেশের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুকে দেখতে পেলেন অসংখ্য বার্তা—সবই রাজনৈতিক এবং ছবিতে এ বিষয়ে বিপুল জনগণের
২ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৩ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের নেতা-কর্মীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে অসংখ্য আন্দোলনকারীকে হত্যা ও অনেকের জীবন বি
২ ঘণ্টা আগেইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম রোমান্টিক কবি ছিলেন জন কিটস। কবিতা ছাড়া কিটস কোনো গদ্য লেখার চেষ্টা করেননি। তাঁর কাব্যজীবন ছিল মাত্র ছয় বছরের। অর্থাৎ উনিশ থেকে চব্বিশ বছর বয়স পর্যন্ত। মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে তাঁর কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সমালোচকদের দ্বারা কিটসের কবিতা খুব একটা আলোচিত হয়নি। তবে মৃত্য
২ ঘণ্টা আগে