পাখির জন্য ভিটেমাটি উৎসর্গ

শাহীন রহমান, পাবনা 
Thumbnail image

চারদিকে সবুজ আর সবুজ। কোলাহলমুক্ত সেই সবুজকে আশ্রয় করেছে হরেক রকম পাখপাখালি। আছে পরিযায়ী পাখিও। তাদের কলকাকলিতে মুখর চারপাশ।

পাখিদের নির্বিঘ্ন এ বিচরণক্ষেত্র পাবনার বেড়া উপজেলার কৈটোলা গ্রামে। গ্রামের সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে পাখিদের এই অভয়াশ্রম গড়েছেন আকাশ কলি দাশ। পাখিদের সঙ্গেই তাঁর বাস। সেই জমিতে কোনো এক সময় গড়ে তোলা একটি মাটির ঘরেই থাকেন আকাশ। ৮৭ বছর বয়সী এই পাখিপ্রেমী অবিবাহিত। তাঁকে সহযোগিতা করেন ছোট বোন ঝরনা দাশ (৭৩)। তিনিও বিয়ে করেননি।

আলাপকালে আকাশ কলি দাশ জানান, বাবা চন্দ্র কুমার দাশ পাবনার নগরবাড়ী এলাকার শ্রীনিবাসদিয়ার জমিদারবাড়ির নায়েব ছিলেন। তাঁর ১৬-১৭ বছর বয়সে বাবার মৃত্যু হলে সংসারের হাল ধরেন আকাশ। তিন ভাই ও তিন বোনের সংসারে তিনিই অভিভাবক ছিলেন। ছোটবেলায় এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়। আরেক ভাই ও দুই বোনকে স্বাধীনতার আগেই ভারতে বিয়ে দেন। তারপর থেকে তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই আকাশের।

আকাশ কলি দাশবর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আকাশ ছিলেন উপজেলার মাছখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে রাজনীতি করলেও রয়েছে অভিমান। ১৯৭৪ সালে গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছেন। পাবনা ও দেশের রাজনীতির অনেক চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষীও তিনি। কিন্তু সেসব বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে চান না তিনি।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ আকাশ এখন ঠিকভাবে কথাও বলতে পারেন না। ভুলে গেছেন অনেক কিছু। তারপরও স্মৃতি হাতড়ে বলেন, শিক্ষকতার শুরুর দিকেই পাখিপ্রেমে পড়েন তিনি। অবসর নেওয়ার পর এই ভিটেমাটি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে আছেন। নগরায়ণের ফলে পাখিরা যখন আবাস হারাচ্ছে, তখন এদের নিরাপদে থাকার জন্য নিজের বসতভিটাই উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। কেউ সেখানে পাখি শিকারের চেষ্টা করলেও শক্তভাবে তিনি প্রতিরোধ করেন। প্রায় পাঁচ দশক ধরে প্রকৃতি আর পাখি সংরক্ষণ করছেন তিনি। আকাশের সেই জন্মভিটাতেই বন বিভাগ পাখিদের অভয়াশ্রমসংবলিত সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠানে আকাশের অবদান আছে। সাড়ে ৬ বিঘা বসতভিটার পাশাপাশি মাঠেও আছে অর্ধশতাধিক বিঘা জমি। আছে গরুর খামার।

আকাশ প্রতিবেশী ও অন্যদের কাছে পরিচিত হলেও বোন থাকেন লোকচক্ষুর আড়ালে। প্রতিবেশীদের অনেকে তাঁকে কখনো দেখেননি। আকাশের দাবি, পশুপাখিগুলোই তাঁদের সঙ্গী।

তিনি মনে করেন, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে হবে, সচেতন হতে হবে। সরকার চাইলে তাঁর অভয়াশ্রম ঘিরে পরিকল্পনা করতে পারে; যাতে কোনো পশুপাখি শিকার করা না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত