অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নৌকার ভরাডুবি

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ১২
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ০০

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার তিন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। ৮ টিতে বিজয়ী হয়েছেন দলটির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী। বাকি দুটির একটি গেছে জাসদের ঘরে, অন্যটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হন।

নৌকার এমন ভরাডুবিতে সর্বত্র চলছে সমালোচনা। বিপর্যয়ের জন্য প্রার্থীরা দুষছেন দলের নেতাদের বিরোধকে। অন্যদিকে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

জামানত বাজেয়াপ্ত তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন হরিপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সম্পা মাহামুদ, বটতৈল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ মোমিন মন্ডল এবং আলামপুর ইউনিয়নের আব্দুল হান্নান বিশ্বাস। এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ২৩২,১১৪ ও ১৭৭ টি। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০-এর ৪৪ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ অপেক্ষা কম পেলে তাঁর জামানতের অর্থ সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।

জানা গেছে, বটতৈল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মোমিন মণ্ডল পেয়েছেন ১১৪ টি। এই ইউনিয়নে ২৬ হাজার ৪৭০ ভোটের মধ্যে কাস্টিং হয়েছে ২০ হাজার ৭০৯ টি।

বিধিমালা অনুসারে মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগ হয় ২ হাজার ৫৮৯ টি। এই ইউনিয়নে আটজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে নৌকার প্রার্থী মোমিন মণ্ডলের অবস্থান পঞ্চম এবং তার প্রাপ্ত ভোট ১১৪। আর দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান মিন্টু ফকির ঘোড়া প্রতীকে ৮ হাজার ৬ ৮২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

এই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মোমিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মজিদ বাবলু সম্পর্কে বেয়াই। এই সম্পর্কের সূত্রে মোমিন ভোটের তিন দিন আগে চশমা প্রতীকের প্রার্থী বাবলুকে সমর্থন দেন বলে প্রচার আছে। যার কারণে ভোটের কোনো কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি। তবে তাঁরা দুজনই এই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

জানতে চাইলে নৌকার পরাজিত প্রার্থী জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোমিন মণ্ডল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা দলের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে ভোট করতে শুরু করেন। এ অবস্থায় ভোটের দুদিন আগে আমি হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘দলীয় নেতারা কেউ আমার সঙ্গে ছিলেন না। দলের নেতারা যদি দলের ভোট না করেন, তাহলে আমার কী করার আছে।’

আলামপুর ইউনিয়নেও নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান বিশ্বাস পেয়েছেন মাত্র ১৭৭টি ভোট। এ ইউনিয়নে মোট ভোট পড়েছে ১৮ হাজার ২৭৪ টি। এখানেও বিজয়ী হয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আখতারুজ্জামান বিশ্বাস। পরাজিত আব্দুল হান্নান বলেন, ‘দলের ভেতরে সমস্যা আছে।’ ভরাডুবি নিয়ে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন অভিযোগ করে আর কী করব? কিছু করার নেই, তাই অভিযোগ করছি না।’

হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সম্পা মাহমুদ পেয়েছেন ২৩২ ভোট। এ ইউনিয়নে ১৯ হাজার ২৮০ ভোট পড়েছে। এখানে জাসদ সমর্থিত এম মোস্তাক হোসেন মোটরসাইকেল প্রতীকে ৮ হাজার ৮৮৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এখানেও পঞ্চম হয়েছেন নৌকার প্রার্থী। নৌকার পরাজিত প্রার্থী ও বিজয়ী প্রার্থী সম্পর্কে দেবর-ভাবি।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী বলেন, ‘নেতাদের সমন্বয়ের অভাবেই এমন ফলাফল হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত