ধনু নদীর রুদ্র রূপ

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২১, ০৮: ২৪
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ১২

নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে ধনু নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনে ইতিমধ্যে শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাড়িঘর হারানো মানুষ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। কয়েকজন পরিবার নিয়ে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে রাতে থাকেন।

এমন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে নদীতে হারিয়ে যাবে শত বছরের পুরোনো একটি গ্রাম। যদিও ভাঙন রোধে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কোটি টাকার বালু ভর্তি বস্তা ফেলার উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ভাঙন রোধে স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়ার দাবি গ্রামবাসীর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভাঙন রোধে নদীতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

জানা গেছে, নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে খরস্রোতা ধনু নদী। নদীটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মালবাহী নৌযান চলাচল করে।

নৌযান চলার কারণে নদীর তীরে ঢেউ লাগে। এতে ভাঙন আরও তীব্র হয়। খালিয়াজুরী উপজেলার ২ নম্বর চাকুয়া ইউনিয়নের পাথরা গ্রামে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে ভাঙন শুরু হলেও চলতি বছর ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। এরই মধ্যে শতাধিক পরিবারের ভিটেমাটি নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে অনেক পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কোন রকম বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন তারা। সহায় সম্বল হারিয়ে, উপায় না পেয়ে রাতে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে থাকছেন ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবার।

পাথরা গ্রামের জমি হারানো হিমাংশু সরকার, নেপাল সরকার, সঞ্জিত সরকারসহ আরও অনেকে জানান, ‘ধনু নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে বর্তমানে গ্রামের পাথরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলায় বসবাস করছেন।

সবকিছু হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেঁচে থাকাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। সরকারি সহযোগিতার দাবি করছেন তারা।

পাথরা গ্রামের বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ কর্মী সাগর সরকার জয় জানান, আমাদের গ্রামের কয়েকশত মানুষ নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমাদেরও ৫০ শতাংশ জমি নদীতে চলে গেছে।

এখন গ্রামের অসহায় মানুষগুলোর শেষ আশ্রয়ের ঘরটাও বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীতে।

অমৃত চন্দ্র দাস নামের অপর আরেকজন জানান, পাথরা গ্রামটি ধনু নদীর তীরে অবস্থিত সবচেয়ে ভাঙন প্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। আশা করি সরকারের পক্ষ থেকে অসহায় মানুষগুলোর জন্য দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার সুবিন্দু কান্তি সরকার বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ ধনু নদীর ভাঙনে আমাদের গ্রামটি এখন বিলীনের পথে। ইতিমধ্যে সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছে গ্রামের অনেকেই। গ্রামটি রক্ষা করা না হলে এখানকার হাওরের একমাত্র ফসলি জমি রক্ষা করাও কঠিন হয়ে যাবে।

দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হলে সর্বশান্ত হয়ে যাবে এলাকার মানুষ। এছাড়াও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে গ্রামের টিউবওয়েল ও স্যানিটারি ল্যাট্রিন। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত বলেন, ইতিমধ্যে নদীতে জিও ব্যাগ দিয়ে গ্রামটি রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও নতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কাজী আব্দুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা বিতরণ করা হবে। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানিসহ পরিবেশ রক্ষায় কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসনের কথা জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত