পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় পরাশক্তি গোলকধাঁধা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৩১
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ২৩

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান শুরু, যা দ্বিতীয় বিশ্বের পর পাকাপাকি রূপলাভ করে। ২০০১ সালে আফগানিস্তান হামলার পরই মূলত মার্কিন সাম্রাজ্যের পতন নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়, যা গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা কে দখল করছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এই যে অমীমাংসিত এক পরিস্থিতি, তার একটা খণ্ডিত চিত্র ফুটে উঠেছে সিএনএনের এক বিশ্লেষণে।

এতে বলা হয়, এক দশকে বিশ্বের সর্বত্র যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, এখনো যার যথাযথ কোনো উত্তর চোখে পড়ছে না। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া নেতৃত্ব বার্নিশ না করে, উল্টো ঘরমুখো হতে দেখা গেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে। তার স্লোগানই ছিল, আমেরিকা ফাস্ট। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিজেদের সামরিক ছাউনি গুটিয়ে আনা।

ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে জো বাইডেনকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে বটে। কিন্তু মিত্রদের এতটা চাঙা করতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে না। তিনি যতই বলুন—আমেরিকা ইজ ব্যাক, ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে গত আগস্টে যে বিশৃঙ্খল এবং মাথা নিচু করে বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তান ছেড়েছে, তা মিত্রদের আস্থায় ফাটল তৈরি করেছে।

আফগানিস্তান থেকে পাততাড়ি গোটানোর সময় বলা হয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্য নয়, একবিংশ শতাব্দীতে চীনই যুক্তরাষ্ট্রের বড় চ্যালেঞ্জ। তাই বেইজিংয়ের দিকে নজর দিতে, আফগান অধ্যায় বন্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও চীনের উত্থান রুখতে এখনো পর্যন্ত ফলপ্রসূ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি ওয়াশিংটন।

বরং আপন গতিতে চীনকে এগিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। দেশটি নতুন নতুন স্থানে নিজেদের অবস্থান সংহত করছে। যেমন আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আমেরিকায় কিউবা, ব্রাজিল ইত্যাদির কথা বলা যায়। অন্যদিকে চাইলেও মধ্যপ্রাচ্য ছাড়তে পারছে না মার্কিন প্রশাসন।

ইউক্রেন নিয়ে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তা যতটা না ইউরোপের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়, তার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ধরে রাখার পরীক্ষা। তাই ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপের প্রধান দুই শক্তি জার্মানি ও ফ্রান্সকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর চেয়ে ভিন্ন সুরে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।

কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব মেনে ইউরোপীয়রা অনেক ঠেকেছে। একই ধরনের ভুল তারা আর করতে চায় না। ইউরোপের প্রায় ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস আসে রাশিয়া থেকে। রাশিয়া থেকে জার্মানিতে সরাসরি গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি ডলার ব্যয়ে সাগরের তলদেশে নির্মাণ করা হয়েছে ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইন।

কাতার থেকে গ্যাস আনার ব্যবস্থা করে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয়দের কতটা মন জয় করতে পারবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। তা ছাড়া ইরানের সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো হওয়ায়, গালফ অঞ্চলের দেশগুলো আগের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে ঢালাওভাবে সহায়তা দেবে কি না, সেটাও দেখার বিষয় বলে মনে করেন ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ ফিওনা হিল।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত