জাহীদ রেজা নূর
১৩ ডিসেম্বর ছিল অশান্ত একটি দিন। যৌথ বাহিনী তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাকিস্তান বাহিনীর পরাজয়ের খবর আসতে থাকে। তবে যেকোনো সময় বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবহর চলে আসতে পারে, এ রকম খবরে মানুষের মনে উদ্বেগ দেখা দেয়। তবে সে সময়ই খবর আসে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ষষ্ঠ নৌবহর নিঃশব্দে মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে অনুসরণ করছে, এতে কিছুটা স্বস্তি পায় সবাই।
এ দিন মানিকগঞ্জ মুক্ত হয়। ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল মুক্ত হয়েছিল আগেই। যৌথ বাহিনী ওই দিক থেকে ঢাকার ২০ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। কামানের গোলার শব্দে ঢাকার আশপাশ প্রকম্পিত হতে থাকে। ভারতীয় বাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেক শ বারবার পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাতে থাকেন। তিনি বলেন, যৌথ বাহিনী এখন ঢাকাকে ঘিরে ধরেছে। ঢাকার সেনানিবাস কামানের গোলার পাল্লার মধ্যে। আত্মসমর্পণ না করলে নিশ্চিত মৃত্যু।
ঢাকার চারপাশে অনেক পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করলেও ঢাকায় নিয়াজী তখনো আত্মসমর্পণে রাজি হলেন না। রাও ফরমান আলী জাতিসংঘের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পাকিস্তানের সৈন্যদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং বাংলাদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও সে প্রস্তাবে ছিল। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না। যুদ্ধ চলতেই থাকবে।’ নিয়াজী বলেন, ‘ঢাকার প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষা করার জন্য আমার সৈন্যরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবে।’
এই বীরত্ব দেখানোর কারণ হলো, তারা তখন নিশ্চিত ছিল যে, মার্কিন সপ্তম নৌবহর সময়মতো যুদ্ধে যোগ দেবে। এই দিন দিবাগত রাত ২টায় প্রেসিডেন্ট নিক্সন ফোন করেন ইয়াহিয়া খানকে। তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু বলে মনে করে। তিনি বলেন, ভারত মহাসাগরে অবস্থিত সপ্তম নৌবহরকে অবিলম্বে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতে ইয়াহিয়া আশ্বস্ত হন।
এই দিন হটলাইনের মাধ্যমে সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে জানান, ভারতের সঙ্গে তাঁরা কথা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্রেজনেভের বার্তায় কোনো নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি ছিল না। যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রসংবরণের কোনো চিহ্নও তখন দেখা যাচ্ছিল না।
বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এ দিন যুক্ত বিবৃতি দেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের যেসব কর্মী, কূটনীতিক ও বিদেশি নাগরিক নিরাপদে সরে আসতে চান, বাংলাদেশ সরকার তাদের সম্ভাব্য সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেবে।
ডেইলি টেলিগ্রাফের ঢাকা সংবাদদাতা ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থের বরাত দিয়ে এ দিন বিবিসি জানায়, পাকিস্তানি সেনাদের হাতেই পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী বন্দী হয়েছেন। খবরটা ছাপা হয় আনন্দবাজার পত্রিকায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই দিন জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টকে লেখা এক চিঠিতে বলেন, মহাসচিব মহোদয় যদি ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা সত্যিই কামনা করেন, তাহলে তাঁকে বাস্তব পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সংঘাতের মূল কারণ কী, তা খোলা চোখে দেখতে হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভারত ও পাকিস্তানকে অর্থাৎ আক্রান্ত ও আক্রমণকারীকে এই কাতারে ফেলা হয়েছে, যা আপত্তিকর। তিনি এ ব্যাপারে একটি শর্ত দেন। বলেন, ভারত বাহিনী ফিরে আসবে একটি শর্তে। তা হলো, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি ফৌজ হটিয়ে দিতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানি শাসক চক্রকে আলোচনায় বসতে হবে।
সূত্র: মহিউদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ, যুদ্ধদিনের কথা ১৯৭১,। হাসান ফেরদৌস, মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত বন্ধুরা। ১৪ ডিসেম্বরের আনন্দবাজার পত্রিকা।
১৩ ডিসেম্বর ছিল অশান্ত একটি দিন। যৌথ বাহিনী তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাকিস্তান বাহিনীর পরাজয়ের খবর আসতে থাকে। তবে যেকোনো সময় বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবহর চলে আসতে পারে, এ রকম খবরে মানুষের মনে উদ্বেগ দেখা দেয়। তবে সে সময়ই খবর আসে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ষষ্ঠ নৌবহর নিঃশব্দে মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে অনুসরণ করছে, এতে কিছুটা স্বস্তি পায় সবাই।
এ দিন মানিকগঞ্জ মুক্ত হয়। ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল মুক্ত হয়েছিল আগেই। যৌথ বাহিনী ওই দিক থেকে ঢাকার ২০ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। কামানের গোলার শব্দে ঢাকার আশপাশ প্রকম্পিত হতে থাকে। ভারতীয় বাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেক শ বারবার পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাতে থাকেন। তিনি বলেন, যৌথ বাহিনী এখন ঢাকাকে ঘিরে ধরেছে। ঢাকার সেনানিবাস কামানের গোলার পাল্লার মধ্যে। আত্মসমর্পণ না করলে নিশ্চিত মৃত্যু।
ঢাকার চারপাশে অনেক পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করলেও ঢাকায় নিয়াজী তখনো আত্মসমর্পণে রাজি হলেন না। রাও ফরমান আলী জাতিসংঘের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পাকিস্তানের সৈন্যদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং বাংলাদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও সে প্রস্তাবে ছিল। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না। যুদ্ধ চলতেই থাকবে।’ নিয়াজী বলেন, ‘ঢাকার প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষা করার জন্য আমার সৈন্যরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবে।’
এই বীরত্ব দেখানোর কারণ হলো, তারা তখন নিশ্চিত ছিল যে, মার্কিন সপ্তম নৌবহর সময়মতো যুদ্ধে যোগ দেবে। এই দিন দিবাগত রাত ২টায় প্রেসিডেন্ট নিক্সন ফোন করেন ইয়াহিয়া খানকে। তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু বলে মনে করে। তিনি বলেন, ভারত মহাসাগরে অবস্থিত সপ্তম নৌবহরকে অবিলম্বে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতে ইয়াহিয়া আশ্বস্ত হন।
এই দিন হটলাইনের মাধ্যমে সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে জানান, ভারতের সঙ্গে তাঁরা কথা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্রেজনেভের বার্তায় কোনো নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি ছিল না। যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রসংবরণের কোনো চিহ্নও তখন দেখা যাচ্ছিল না।
বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এ দিন যুক্ত বিবৃতি দেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের যেসব কর্মী, কূটনীতিক ও বিদেশি নাগরিক নিরাপদে সরে আসতে চান, বাংলাদেশ সরকার তাদের সম্ভাব্য সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেবে।
ডেইলি টেলিগ্রাফের ঢাকা সংবাদদাতা ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থের বরাত দিয়ে এ দিন বিবিসি জানায়, পাকিস্তানি সেনাদের হাতেই পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী বন্দী হয়েছেন। খবরটা ছাপা হয় আনন্দবাজার পত্রিকায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই দিন জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টকে লেখা এক চিঠিতে বলেন, মহাসচিব মহোদয় যদি ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা সত্যিই কামনা করেন, তাহলে তাঁকে বাস্তব পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সংঘাতের মূল কারণ কী, তা খোলা চোখে দেখতে হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভারত ও পাকিস্তানকে অর্থাৎ আক্রান্ত ও আক্রমণকারীকে এই কাতারে ফেলা হয়েছে, যা আপত্তিকর। তিনি এ ব্যাপারে একটি শর্ত দেন। বলেন, ভারত বাহিনী ফিরে আসবে একটি শর্তে। তা হলো, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি ফৌজ হটিয়ে দিতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানি শাসক চক্রকে আলোচনায় বসতে হবে।
সূত্র: মহিউদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ, যুদ্ধদিনের কথা ১৯৭১,। হাসান ফেরদৌস, মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত বন্ধুরা। ১৪ ডিসেম্বরের আনন্দবাজার পত্রিকা।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে