পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের প্রস্তাব ফাঁস

এ আর চন্দন, ঢাকা
Thumbnail image

যশোর মুক্ত হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় ১১ ডিসেম্বর শহরের টাউন হল মাঠে জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সেই জনসভায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে গণহত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলাই আমাদের কাজ।’

ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফসহ বহু বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন জনসভায়।

লন্ডনের প্রভাবশালী সংবাদপত্র সানডে টেলিগ্রাফে এদিন গভর্নর মালিকের আত্মসমর্পণের একটি প্রস্তাব প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. মালিক একটি প্রস্তাব ঢাকায় নিয়োজিত জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে পেশ করেছেন। ফরমান আলী গভর্নরের পক্ষে পাঁচটি শর্তে আত্মসমর্পণের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু ইয়াহিয়া খান জানামাত্র এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে রাও ফরমান আলীর ভাষ্য: ‘১১ ডিসেম্বর সকালে ইউএসএসআরের (সোভিয়েত ইউনিয়ন) কাউন্সেল জেনারেল মি. পোগাস আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলেন। তিনি বললেন, গভর্নরের বার্তায় যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তাঁর সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য।

...সকাল ৯টার দিকে জেনারেল পীরজাদা টেলিফোন করলেন এবং বললেন, “সামান্য সংশোধনীসহ গভর্নরের প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছে। আমরা সংশোধিত খসড়াটি পাঠাচ্ছি।” সেটি এল। সংশোধনীতে কেবল রাজনৈতিক সমাধানের ধারাটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। ধারাটুকু না থাকায় প্রস্তাবটির কোনো শক্তি ছিল না।’ (বাংলাদেশের জন্ম)

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সর্বাধিনায়ক জেনারেল মানেকশ বেতারে এক হুঁশিয়ারি বার্তায় বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের পালাতে দেওয়া হবে না। পাকিস্তানিরা যে পাঁচটি বাণিজ্যিক জাহাজে করে পালাতে মতলব করেছে, তা তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘খবরদার এরকম চেষ্টা করবেন না। যদি করেন আপনাদের বাণিজ্যিক জাহাজগুলো তো ধ্বংস হবেই, সেই সঙ্গে আপনাদের সৈন্যরাও মারা যাবে।’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র চতুর্দশ খণ্ড)

হেনরি কিসিঞ্জার এদিন সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত ভারানৎসোভকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ১২ ডিসেম্বর দুপুরের আগে ভারতকে অবশ্যই যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই সামরিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই হুঁশিয়ারি অবশ্য কোনো কাজেই লাগেনি।

এদিন সন্ধ্যায় যৌথ বাহিনী বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মধ্যবর্তী গোবিন্দগঞ্জে শক্তিশালী হানাদার ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। সারা রাত যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী ভোরের দিকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এদিন টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, লাকসাম, আশুগঞ্জ, ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড হানাদারমুক্ত হয়। ভারতীয় বাহিনীর অবিরাম গোলাবর্ষণে হানাদাররা কুমিল্লা সেনানিবাস ছেড়ে চান্দিনার দিকে পালিয়ে যায়।

সকাল ৬টার দিকে আলবদর সদস্যরা দৈনিক পূর্বদেশের প্রধান প্রতিবেদক আ ন ম গোলাম মুস্তাফাকে গোপীবাগের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত