আবু সাইম, ঢাকা
কোনো প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হলে সমীক্ষা করার নির্দেশনা আছে সরকারের। এর প্রায় ১৭৫ গুণ বড় আকারের অর্থাৎ পৌনে ৯ হাজার কোটি টাকার ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কেনার প্রকল্পে সমীক্ষার ধার ধারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সমীক্ষা ছাড়াই ইসি তড়িঘড়ি করে কিনতে চায় বিশাল ব্যয়ের দুই লাখ ইভিএম। একই সঙ্গে সাড়ে পাঁচ শ গাড়িরও আবদার রয়েছে। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনেরা ইভিএমে ভোটেরই বিপক্ষে।
ইসির নতুন প্রকল্প প্রস্তাব থেকে জানা যায়, প্রতিটি ইভিএমে এবার আগের চেয়ে বেশি গুনতে হবে কমপক্ষে এক লাখ টাকা। আনুষঙ্গিক বিষয়সহ ইভিএম কেনায় প্রকল্পে আগের চেয়ে বাড়তি ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পে গাড়ির বিশাল বহরও চায় ইসি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনী কার্যালয়ে ইভিএম আনা-নেওয়ায় গাড়ির পেছনে খরচ হবে ২৭০ কোটি টাকা। থাকবে গুদাম নির্মাণসহ অন্যান্য ব্যয়ও। নির্বাচনের এক বছর আগেই প্রকল্পটি পাস করাতে চায় ইসি। প্রকল্প ব্যয়ের পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে।
ইভিএম কেনার এ প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইসি সচিবালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ইভিএম কেনায় এত বড় প্রকল্পকে জনগণের অর্থের অপচয় হিসেবে দেখছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এ বিষয়ে নির্বাচনের দায় এবং সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন—এ দুটি বিষয় বিবেচনায় রাখবেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। কমিশন গত ২৩ আগস্টের সভায় ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প এরই মধ্যে অনুমোদন করেছে কমিশন। এখন তা একনেকে অনুমোদনের এবং চলিত অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
ইভিএমের জন্য নির্বাচিত ১৫০ আসনে প্রায় ২৫ হাজার ভোটকেন্দ্র থাকবে। প্রতি ভোটকেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে সাতটি। প্রতি ভোটকক্ষে গড়ে ১ দশমিক ৫টি ইভিএম ধরে ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ ইভিএম প্রয়োজন। তা ছাড়া ভোটার শিখন, কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং রিজার্ভেও ইভিএম লাগবে। সব মিলিয়ে ইভিএম লাগবে ৩ লাখ ৩৮ হাজার সেট। প্রকল্পটি ইসির মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখবে বলে তাদের দাবি।
ইসি সূত্রে জানা যায়, আগামী জুনে শেষ হবে এমন একটি প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ইভিএম আছে; কিন্তু সেগুলোর মধ্যে ১২ হাজার নষ্ট। এ জন্য বাড়তি দুই লাখ ইভিএম প্রয়োজন। ইভিএম কেনাসহ সেগুলো উপযোগী করতে নির্বাচনের কমপক্ষে ৯ মাস আগে প্রকল্পটি অনুমোদন করাতে চায় ইসি। প্রস্তাবিত ইভিএমের ওয়ারেন্টি থাকবে এক বছর। বিক্রয়োত্তর সেবা ৫ বছর। নতুন প্রকল্পে মোট খরচ হবে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
চলমান প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। গত জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এতে আগামী এক বছরে ২ হাজার ২৮ কোটি টাকা খরচ করতে হবে।
সমীক্ষা উপেক্ষা
ইসি বলছে, এ প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর কোনো সমীক্ষা বা সম্ভাব্যতা যাচাই বা বিনিয়োগ-পূর্ব যাচাই-বাছাইও করা হয়নি। যদিও পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কতটা সুফল পাওয়া যাবে, ব্যয় ও বাস্তবায়ন কৌশল কী হবে, সমীক্ষা থেকেই তা ধারণা পাওয়া যায়। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প-সম্পর্কিত পরিপত্র অনুযায়ী, প্রকল্প ব্যয় ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে তার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার নির্দেশনাও দিয়েছেন। কারণ, সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প নেওয়ায় সেগুলো বারবার সংশোধন করতে হয়। এতে ব্যয় আরও বেড়ে যায়।
বেশি টাকায় ইভিএম
প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয়ের মধ্যে শুধু ইভিএম সংগ্রহ করতে ইসির ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। প্রতিটির পেছনে খরচ ৩ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলমান প্রকল্পে ইভিএমের জন্য খরচ হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে বাড়তি গুনতে হবে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ইভিএম সংযোজন বা কাস্টমাইজেশন সেন্টার স্থাপন এবং ১০টি আঞ্চলিক ওয়্যারহাউস তৈরি, পরিবহন ও সংরক্ষণে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ইভিএমের পেছনে ব্যয় হবে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বাড়তি ব্যয় হবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।
৬ মাইক্রোবাস ভাড়া নিতে ৬ কোটি টাকা!
ইসি বলছে, ইভিএম স্থানান্তর এবং আনুষঙ্গিক কাজে ৫৩৮টি গাড়ি প্রয়োজন। খরচ হবে ২৭০ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে গুদাম থেকে নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম নিতে ৫৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান কিনতে হবে। ৪৯ লাখ করে এতে খরচ হবে ২৬১ কোটি টাকা। প্রকল্প তদারকির জন্য আটটি জিপ ও সাতটি মাইক্রোবাসও চায় ইসি। চলমান একটি প্রকল্পে চারটি জিপ ও একটি মাইক্রোবাস থাকায় বাড়তি কিনতে হবে চারটি জিপ। এতে খরচ হবে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ছয়টি মাইক্রোবাস ভাড়া নিতে হবে। খরচ হবে ৬ কোটি টাকা।
সংরক্ষণেও বাড়তি ব্যয়
ইসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে যেসব ইভিএম আছে, সেগুলোর সংরক্ষণের জন্য বছরে খরচ হয় ৫ কোটি টাকা। এখন বাড়তি ইভিএম গুদাম নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৬৯ কোটি টাকা। তার ওপর বছরে সংরক্ষণ বাবদ ৯৮ কোটি টাকা লাগবে। সিসিটিভি ক্যামেরা কিনতে ধরা হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোটারদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে খরচ হবে ২০৫ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় লাগবে ৬৯০ কোটি টাকা। তা ছাড়া এসব ইভিএম সংরক্ষণে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
এ ছাড়া পরামর্শক নিয়োগে যাবে বড় অঙ্কের ব্যয়। এ প্রকল্পে চার ধরনের প্রায় ১৮৬ জন পরামর্শক কাজ করবেন। তাঁদের পেছনে খরচ হবে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, জনপ্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সম্প্রতি আজকের পত্রিকাসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব আমরা বিবেচনা করে দেখব। বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। তবে আমরা জানি, সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যে আছে। তাই টাকারও একটি বিষয় আছে। তবে নির্বাচনের দায়, সাংবিধানিক দায়; সেটাও মনে রাখতে হবে। তারা যতটুকু চায়, তা যদি না দিতে পারি, তবে পরিকল্পনা কমিশন বলে দেবে, এ কারণে এতটা দিতে পারিনি, এতুটুকু দিয়েছি।’
অপচয়ের বড় আয়োজন
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইভিএম কেনার এই উদ্যোগ দুই দিক থেকে অগ্রহণযোগ্য। একদিকে চলমান সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাশ্রয়ের কথা বলছে। কিন্তু ইসি উল্টো বিপুল খরচের আয়োজন করছে। আবার বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব এবং বিজ্ঞ ব্যক্তিরা ইভিএম না রাখার কথা বলছেন। কারণ, ইভিএম যাঁরা পরিচালনা করেন, অতীতের নির্বাচনে তাঁদের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই বলা যায়, ইসি অপচয়ের বড় আয়োজন করছে। এই টাকা জনগণকেই শোধ করতে হবে।’
কোনো প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হলে সমীক্ষা করার নির্দেশনা আছে সরকারের। এর প্রায় ১৭৫ গুণ বড় আকারের অর্থাৎ পৌনে ৯ হাজার কোটি টাকার ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কেনার প্রকল্পে সমীক্ষার ধার ধারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সমীক্ষা ছাড়াই ইসি তড়িঘড়ি করে কিনতে চায় বিশাল ব্যয়ের দুই লাখ ইভিএম। একই সঙ্গে সাড়ে পাঁচ শ গাড়িরও আবদার রয়েছে। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনেরা ইভিএমে ভোটেরই বিপক্ষে।
ইসির নতুন প্রকল্প প্রস্তাব থেকে জানা যায়, প্রতিটি ইভিএমে এবার আগের চেয়ে বেশি গুনতে হবে কমপক্ষে এক লাখ টাকা। আনুষঙ্গিক বিষয়সহ ইভিএম কেনায় প্রকল্পে আগের চেয়ে বাড়তি ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পে গাড়ির বিশাল বহরও চায় ইসি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনী কার্যালয়ে ইভিএম আনা-নেওয়ায় গাড়ির পেছনে খরচ হবে ২৭০ কোটি টাকা। থাকবে গুদাম নির্মাণসহ অন্যান্য ব্যয়ও। নির্বাচনের এক বছর আগেই প্রকল্পটি পাস করাতে চায় ইসি। প্রকল্প ব্যয়ের পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে।
ইভিএম কেনার এ প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইসি সচিবালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ইভিএম কেনায় এত বড় প্রকল্পকে জনগণের অর্থের অপচয় হিসেবে দেখছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এ বিষয়ে নির্বাচনের দায় এবং সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন—এ দুটি বিষয় বিবেচনায় রাখবেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। কমিশন গত ২৩ আগস্টের সভায় ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প এরই মধ্যে অনুমোদন করেছে কমিশন। এখন তা একনেকে অনুমোদনের এবং চলিত অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
ইভিএমের জন্য নির্বাচিত ১৫০ আসনে প্রায় ২৫ হাজার ভোটকেন্দ্র থাকবে। প্রতি ভোটকেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে সাতটি। প্রতি ভোটকক্ষে গড়ে ১ দশমিক ৫টি ইভিএম ধরে ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ ইভিএম প্রয়োজন। তা ছাড়া ভোটার শিখন, কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং রিজার্ভেও ইভিএম লাগবে। সব মিলিয়ে ইভিএম লাগবে ৩ লাখ ৩৮ হাজার সেট। প্রকল্পটি ইসির মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখবে বলে তাদের দাবি।
ইসি সূত্রে জানা যায়, আগামী জুনে শেষ হবে এমন একটি প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ইভিএম আছে; কিন্তু সেগুলোর মধ্যে ১২ হাজার নষ্ট। এ জন্য বাড়তি দুই লাখ ইভিএম প্রয়োজন। ইভিএম কেনাসহ সেগুলো উপযোগী করতে নির্বাচনের কমপক্ষে ৯ মাস আগে প্রকল্পটি অনুমোদন করাতে চায় ইসি। প্রস্তাবিত ইভিএমের ওয়ারেন্টি থাকবে এক বছর। বিক্রয়োত্তর সেবা ৫ বছর। নতুন প্রকল্পে মোট খরচ হবে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
চলমান প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। গত জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এতে আগামী এক বছরে ২ হাজার ২৮ কোটি টাকা খরচ করতে হবে।
সমীক্ষা উপেক্ষা
ইসি বলছে, এ প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর কোনো সমীক্ষা বা সম্ভাব্যতা যাচাই বা বিনিয়োগ-পূর্ব যাচাই-বাছাইও করা হয়নি। যদিও পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কতটা সুফল পাওয়া যাবে, ব্যয় ও বাস্তবায়ন কৌশল কী হবে, সমীক্ষা থেকেই তা ধারণা পাওয়া যায়। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প-সম্পর্কিত পরিপত্র অনুযায়ী, প্রকল্প ব্যয় ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে তার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার নির্দেশনাও দিয়েছেন। কারণ, সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প নেওয়ায় সেগুলো বারবার সংশোধন করতে হয়। এতে ব্যয় আরও বেড়ে যায়।
বেশি টাকায় ইভিএম
প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয়ের মধ্যে শুধু ইভিএম সংগ্রহ করতে ইসির ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। প্রতিটির পেছনে খরচ ৩ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলমান প্রকল্পে ইভিএমের জন্য খরচ হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে বাড়তি গুনতে হবে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ইভিএম সংযোজন বা কাস্টমাইজেশন সেন্টার স্থাপন এবং ১০টি আঞ্চলিক ওয়্যারহাউস তৈরি, পরিবহন ও সংরক্ষণে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ইভিএমের পেছনে ব্যয় হবে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বাড়তি ব্যয় হবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।
৬ মাইক্রোবাস ভাড়া নিতে ৬ কোটি টাকা!
ইসি বলছে, ইভিএম স্থানান্তর এবং আনুষঙ্গিক কাজে ৫৩৮টি গাড়ি প্রয়োজন। খরচ হবে ২৭০ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে গুদাম থেকে নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম নিতে ৫৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান কিনতে হবে। ৪৯ লাখ করে এতে খরচ হবে ২৬১ কোটি টাকা। প্রকল্প তদারকির জন্য আটটি জিপ ও সাতটি মাইক্রোবাসও চায় ইসি। চলমান একটি প্রকল্পে চারটি জিপ ও একটি মাইক্রোবাস থাকায় বাড়তি কিনতে হবে চারটি জিপ। এতে খরচ হবে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ছয়টি মাইক্রোবাস ভাড়া নিতে হবে। খরচ হবে ৬ কোটি টাকা।
সংরক্ষণেও বাড়তি ব্যয়
ইসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে যেসব ইভিএম আছে, সেগুলোর সংরক্ষণের জন্য বছরে খরচ হয় ৫ কোটি টাকা। এখন বাড়তি ইভিএম গুদাম নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৬৯ কোটি টাকা। তার ওপর বছরে সংরক্ষণ বাবদ ৯৮ কোটি টাকা লাগবে। সিসিটিভি ক্যামেরা কিনতে ধরা হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোটারদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে খরচ হবে ২০৫ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় লাগবে ৬৯০ কোটি টাকা। তা ছাড়া এসব ইভিএম সংরক্ষণে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
এ ছাড়া পরামর্শক নিয়োগে যাবে বড় অঙ্কের ব্যয়। এ প্রকল্পে চার ধরনের প্রায় ১৮৬ জন পরামর্শক কাজ করবেন। তাঁদের পেছনে খরচ হবে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, জনপ্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সম্প্রতি আজকের পত্রিকাসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব আমরা বিবেচনা করে দেখব। বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। তবে আমরা জানি, সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যে আছে। তাই টাকারও একটি বিষয় আছে। তবে নির্বাচনের দায়, সাংবিধানিক দায়; সেটাও মনে রাখতে হবে। তারা যতটুকু চায়, তা যদি না দিতে পারি, তবে পরিকল্পনা কমিশন বলে দেবে, এ কারণে এতটা দিতে পারিনি, এতুটুকু দিয়েছি।’
অপচয়ের বড় আয়োজন
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইভিএম কেনার এই উদ্যোগ দুই দিক থেকে অগ্রহণযোগ্য। একদিকে চলমান সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাশ্রয়ের কথা বলছে। কিন্তু ইসি উল্টো বিপুল খরচের আয়োজন করছে। আবার বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব এবং বিজ্ঞ ব্যক্তিরা ইভিএম না রাখার কথা বলছেন। কারণ, ইভিএম যাঁরা পরিচালনা করেন, অতীতের নির্বাচনে তাঁদের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই বলা যায়, ইসি অপচয়ের বড় আয়োজন করছে। এই টাকা জনগণকেই শোধ করতে হবে।’
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে