ইশতিয়াক হাসান
একটি কুপির আলোয় পুরো ঘর আলোকিত হয়নি। তারপর আবার হালকা বাতাসের ঝাপটায় কেঁপে কেঁপে উঠছে আলো। তাতে নানির চেহারাটা আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে। পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে মুখের ভাঁজগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে যেন। তাঁর কিশোরী কিংবা তরুণী বয়সের গল্প। তন্ময় হয়ে শুনছি আমরা কয়জন। সাত থেকে চৌদ্দর মধ্যে বয়স সবার।
এই গল্প শোনার সময়কাল অন্তত তিন দশক আগের। কোনো ভূতের গল্প নয়; বরং নানি বলছেন জীবনের একটি রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ, ‘রাতের বেলা ঘুমায় ছিলাম। হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভাইঙ্গা গেল। একটা হুটোপুটির আওয়াজ। গোয়ালঘর থেকে আসতাছে। তারপর একটা ঘড় ঘড় আওয়াজ। এক মিনিট সুনসান। এরপর ভারী একটা কিছু হিঁচড়ে নেওয়ার শব্দ। শরীর হিম হইয়া গেল। বুঝতে বাকি নাই নাতি আমার। আবার একটা গরুরে বাঘে নিছে।’
হবিগঞ্জের মাধবপুরের দেবনগর গ্রামে আমার নানার বাড়ি। বালক বয়সে হবিগঞ্জের মাধবপুরে নানার বাড়িতে গেলেই নানিকে চেপে ধরতাম পুরোনো দিনের গল্প শোনার জন্য—বিশাল আকারের লোহাগড়া বাঘ, কেন্দুয়ার বাঘ, ফুলেশ্বরী—কত ধরনের বাঘের গল্প। বর্ণনাগুলো মনে গেঁথে থাকায় বড় হয়ে বোঝা কঠিন হয়নি কোনটা রয়েল বেঙ্গল, কোনটা চিতা বাঘ কিংবা মেঘলা চিতা। নানির বলা বাঘের গল্পগুলো আজ থেকে সত্তর-পঁচাত্তর বছর আগের। তবে সিলেট অঞ্চলের বাঘেদের খবর প্রথম পাই নানির এ বিবরণের মাধ্যমেই। আজ বিশ্ব বাঘ দিবসে বলব, সিলেটের হারিয়ে যাওয়া বাঘের গল্পই।
নানার বাড়িতে গিয়েই শুনি পাশের উপজেলা চুনারুঘাটের সাতছড়ি ও রেমা-কালেঙ্গা বনে মহা দর্পে বাঘ ঘুরে বেড়ানোর পুরোনো দিনের গল্প। একসময় সিলেটের বিস্তৃত এলাকায় ছিল বাঘের বিচরণ। এখন যে গল্পটা বলছি তা ১৯৬৪ সালের। তখন জুড়ির রত্নার পর থেকে সাগরনাল হয়ে বিস্তৃত এলাকায় ছিল গহিন অরণ্য। শিকারি এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে পাই এ বিবরণ।
বন বিভাগের রিজার্ভ ফরেস্টের পাশাপাশি ছিল চা-বাগানের নিজস্ব জঙ্গল। ওই সময় রত্না-সাগরনাল এলাকায় একটি বাঘের হাতে কয়েকজন মানুষ মারা পড়ে। এনায়েত মাওলা খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে মারেন বাঘটিকে। প্রথম দিন ছাগলের টোপের কাছে বাঘটিকে গুলি করে আহত করেন। পরের দিন আবার খুঁজে গুলি করে মারেন। এর কাছাকাছি সময়ে লাউয়াছড়ার জঙ্গলের একটি বাঘ শিকারের ঘটনারও বর্ণনা মেলে বইটিতে। একই ঘটনার বিবরণ আছে একসময়কার পাকিস্তান বন বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব ফরেস্ট ইউসুফ এস আহমেদের বইয়ে।
পাকিস্তানের এক সামরিক কর্মকর্তা গিয়েছিলেন লাউয়াছড়ার কাছে শমসেরনগরের এক চা-বাগানে। এ সময়ই লাউয়াছড়ার জঙ্গলের ভেতর গরু মেরে একটি বাঘ ওটাকে রেললাইন ও সড়কের মাঝখানের একটা শুকনো নালার ওপর এনে রাখে। খবর পেয়ে কাছের একটি গাছে বাঁধা হয় মাচা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই সেখানে গিয়ে বসেন সামরিক কর্মকর্তাটি। সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন অতিক্রম করে স্টেশনটি। এর ১০ মিনিটের মধ্যে বাঘটি আসে মড়ির কাছে। ওটাকে এক গুলিতে মেরে ফেলেন তিনি।
১৯৬০-এর দশকে প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমেদ লাউয়াছড়ার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে জিপে ভ্রমণের সময় বড় একটি বাঘ দেখেন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে রাজকীয় চালে হেঁটে যেতে। ওই বাঘই পরে শিকারির গুলিতে মারা পড়েছে কি না, কে জানে?
সিলেটের কানাইঘাটের ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় ১৯৫১-৫২ সালে ছাগলের টোপ বেঁধে গুলি করে একটি বাঘ মারেন এনায়েত মাওলা। ১৯৫০-এর দশকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লাউড় এলাকার শিমুলতলী এবং মানিগায়ে বাঘ শিকারের বর্ণনা করেন আবদুর রহমান চৌধুরী।
বছর ১৬-১৭ আগে এক কুয়াশামাখা শীতের সকালে মৌলভীবাজারের জুড়ীর ফুলতলা চা-বাগানের মাঝখান দিয়ে হেঁটে পৌঁছে যাই রাগনার জঙ্গলে। বনপথে দেখা এক বৃদ্ধের সঙ্গে। মুখে শত ভাঁজ। বয়স নিশ্চয় আশি পেরিয়েছে তাঁর। পুরোনো দিনের জঙ্গল-বন্য প্রাণীর খোঁজ নিলাম। উৎসাহ পেয়ে গল্পের ঝুড়ি মেলে দিলেন স্মৃতিকাতর বৃদ্ধ। যুবা বয়সে গরুর পাল নিয়ে এসেছিলেন এই জঙ্গলে। হঠাৎ হাজির বিশাল এক মদ্দা বাঘ। অতর্কিতে একটা গরুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঘটা। হাতের লাঠি দিয়ে পাশের গাছে বাড়ি দিয়ে চিৎকার করতে লাগলেন তিনি। বাঘটি ভয় তো পেলই না, উল্টো ক্রুদ্ধ হয়ে পালের চার-পাঁচটা গরু মেরে ফেলল কয়েক মিনিটের মধ্যে। এরপর একটাকে নিয়ে চলে গেল। তবে ভাগ্যগুণে বেঁচে যান গল্প বয়ানকারী।
গত শতকের ষাটের দশকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রেমা-কালেঙ্গার জঙ্গলে বাঘের বসতির খবর মেলে এনায়েত মাওলার লেখায়ও। তবে বেশ কয়েকবার রেমা-কালেঙ্গায় গিয়ে জঙ্গল এলাকায় বাস করা বৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জেনেছি, এই জঙ্গলে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে বড় একটি যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। ওই সময় কালেঙ্গার বাঘেরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের গহিন জঙ্গলের দিকে চলে যায়।
সত্যি একসময় বাঘেরা মহানন্দে ঘুরে বেড়াত সিলেটের টিলা-চা-বাগান-পাহাড়ময় বনাঞ্চলে। তবে এখন সবই স্মৃতি। বন উজাড়, অপরিণামদর্শী বন্য প্রাণী শিকার, ছোট-ছোট বনের মধ্যে সংযোগ নষ্টসহ নানা কারণে সিলেট থেকে হারিয়ে গেছে বাঘ। পুরোনো দিনের মানুষদের কাছে সেই সব বাঘের গল্পই শোনা যায় কেবল এখন।
২০১১ সালে জুড়ীর লাঠিটিলা জঙ্গলে গিয়েছিলাম। জঙ্গল ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় সফিক ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো। জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। বন্য প্রাণীর খবর পাওয়া যায় তাঁর কাছে। কথাবার্তার একপর্যায়ে তাঁর কাছ থেকে জানলাম আগের বছর, অর্থাৎ ২০১০ সালে তিনি বড় ডোরা বাঘ দেখেছেন জঙ্গলের গহিনে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানও জানিয়েছিলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তিনি শুনেছেন ২০০৭-০৮ সালের দিকে ওই বনে বাঘ বিচরণ করত।
আমার দেখা সিলেট বিভাগের সেরা বন লাঠিটিলা। অন্তত ২০১১ সালে শেষ যখন গিয়েছিলাম তখনো ছিল। এই অরণ্য ধরে চলে যাওয়া যায় একেবারে মাধবকুণ্ডের পেছনের জঙ্গল পর্যন্ত। পাশেই ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলার সীমান্ত। সেখানেও কিছু জঙ্গল আছে। লাঠিটিলা এবং এর চারপাশের জঙ্গল মিলিয়ে বাঘের বিচরণ একেবারে অসম্ভব নয়। তবে ওই ২০১১ সালের পর আর বাঘের কোনো খবরও পাইনি ওই এলাকা থেকে। করিমগঞ্জ এলাকায় কোনো বাঘ আছে—এমন তথ্য পাইনি ইন্টারনেট ঘেঁটে। তাই লাঠিটিলার বাঘ-রহস্যের যেমন সমাধান হয়নি, তেমনি আমার মতো বাঘপ্রেমীও সিলেটের জঙ্গলে এখনো বাঘ থাকার সম্ভাবনা নিয়ে বেশি আশাবাদী হতে পারিনি।
লেখক: ইশতিয়াক হাসান, সাংবাদিক ও প্রকৃতিপ্রেমী
একটি কুপির আলোয় পুরো ঘর আলোকিত হয়নি। তারপর আবার হালকা বাতাসের ঝাপটায় কেঁপে কেঁপে উঠছে আলো। তাতে নানির চেহারাটা আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে। পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে মুখের ভাঁজগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে যেন। তাঁর কিশোরী কিংবা তরুণী বয়সের গল্প। তন্ময় হয়ে শুনছি আমরা কয়জন। সাত থেকে চৌদ্দর মধ্যে বয়স সবার।
এই গল্প শোনার সময়কাল অন্তত তিন দশক আগের। কোনো ভূতের গল্প নয়; বরং নানি বলছেন জীবনের একটি রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ, ‘রাতের বেলা ঘুমায় ছিলাম। হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভাইঙ্গা গেল। একটা হুটোপুটির আওয়াজ। গোয়ালঘর থেকে আসতাছে। তারপর একটা ঘড় ঘড় আওয়াজ। এক মিনিট সুনসান। এরপর ভারী একটা কিছু হিঁচড়ে নেওয়ার শব্দ। শরীর হিম হইয়া গেল। বুঝতে বাকি নাই নাতি আমার। আবার একটা গরুরে বাঘে নিছে।’
হবিগঞ্জের মাধবপুরের দেবনগর গ্রামে আমার নানার বাড়ি। বালক বয়সে হবিগঞ্জের মাধবপুরে নানার বাড়িতে গেলেই নানিকে চেপে ধরতাম পুরোনো দিনের গল্প শোনার জন্য—বিশাল আকারের লোহাগড়া বাঘ, কেন্দুয়ার বাঘ, ফুলেশ্বরী—কত ধরনের বাঘের গল্প। বর্ণনাগুলো মনে গেঁথে থাকায় বড় হয়ে বোঝা কঠিন হয়নি কোনটা রয়েল বেঙ্গল, কোনটা চিতা বাঘ কিংবা মেঘলা চিতা। নানির বলা বাঘের গল্পগুলো আজ থেকে সত্তর-পঁচাত্তর বছর আগের। তবে সিলেট অঞ্চলের বাঘেদের খবর প্রথম পাই নানির এ বিবরণের মাধ্যমেই। আজ বিশ্ব বাঘ দিবসে বলব, সিলেটের হারিয়ে যাওয়া বাঘের গল্পই।
নানার বাড়িতে গিয়েই শুনি পাশের উপজেলা চুনারুঘাটের সাতছড়ি ও রেমা-কালেঙ্গা বনে মহা দর্পে বাঘ ঘুরে বেড়ানোর পুরোনো দিনের গল্প। একসময় সিলেটের বিস্তৃত এলাকায় ছিল বাঘের বিচরণ। এখন যে গল্পটা বলছি তা ১৯৬৪ সালের। তখন জুড়ির রত্নার পর থেকে সাগরনাল হয়ে বিস্তৃত এলাকায় ছিল গহিন অরণ্য। শিকারি এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে পাই এ বিবরণ।
বন বিভাগের রিজার্ভ ফরেস্টের পাশাপাশি ছিল চা-বাগানের নিজস্ব জঙ্গল। ওই সময় রত্না-সাগরনাল এলাকায় একটি বাঘের হাতে কয়েকজন মানুষ মারা পড়ে। এনায়েত মাওলা খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে মারেন বাঘটিকে। প্রথম দিন ছাগলের টোপের কাছে বাঘটিকে গুলি করে আহত করেন। পরের দিন আবার খুঁজে গুলি করে মারেন। এর কাছাকাছি সময়ে লাউয়াছড়ার জঙ্গলের একটি বাঘ শিকারের ঘটনারও বর্ণনা মেলে বইটিতে। একই ঘটনার বিবরণ আছে একসময়কার পাকিস্তান বন বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব ফরেস্ট ইউসুফ এস আহমেদের বইয়ে।
পাকিস্তানের এক সামরিক কর্মকর্তা গিয়েছিলেন লাউয়াছড়ার কাছে শমসেরনগরের এক চা-বাগানে। এ সময়ই লাউয়াছড়ার জঙ্গলের ভেতর গরু মেরে একটি বাঘ ওটাকে রেললাইন ও সড়কের মাঝখানের একটা শুকনো নালার ওপর এনে রাখে। খবর পেয়ে কাছের একটি গাছে বাঁধা হয় মাচা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই সেখানে গিয়ে বসেন সামরিক কর্মকর্তাটি। সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন অতিক্রম করে স্টেশনটি। এর ১০ মিনিটের মধ্যে বাঘটি আসে মড়ির কাছে। ওটাকে এক গুলিতে মেরে ফেলেন তিনি।
১৯৬০-এর দশকে প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমেদ লাউয়াছড়ার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে জিপে ভ্রমণের সময় বড় একটি বাঘ দেখেন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে রাজকীয় চালে হেঁটে যেতে। ওই বাঘই পরে শিকারির গুলিতে মারা পড়েছে কি না, কে জানে?
সিলেটের কানাইঘাটের ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় ১৯৫১-৫২ সালে ছাগলের টোপ বেঁধে গুলি করে একটি বাঘ মারেন এনায়েত মাওলা। ১৯৫০-এর দশকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লাউড় এলাকার শিমুলতলী এবং মানিগায়ে বাঘ শিকারের বর্ণনা করেন আবদুর রহমান চৌধুরী।
বছর ১৬-১৭ আগে এক কুয়াশামাখা শীতের সকালে মৌলভীবাজারের জুড়ীর ফুলতলা চা-বাগানের মাঝখান দিয়ে হেঁটে পৌঁছে যাই রাগনার জঙ্গলে। বনপথে দেখা এক বৃদ্ধের সঙ্গে। মুখে শত ভাঁজ। বয়স নিশ্চয় আশি পেরিয়েছে তাঁর। পুরোনো দিনের জঙ্গল-বন্য প্রাণীর খোঁজ নিলাম। উৎসাহ পেয়ে গল্পের ঝুড়ি মেলে দিলেন স্মৃতিকাতর বৃদ্ধ। যুবা বয়সে গরুর পাল নিয়ে এসেছিলেন এই জঙ্গলে। হঠাৎ হাজির বিশাল এক মদ্দা বাঘ। অতর্কিতে একটা গরুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঘটা। হাতের লাঠি দিয়ে পাশের গাছে বাড়ি দিয়ে চিৎকার করতে লাগলেন তিনি। বাঘটি ভয় তো পেলই না, উল্টো ক্রুদ্ধ হয়ে পালের চার-পাঁচটা গরু মেরে ফেলল কয়েক মিনিটের মধ্যে। এরপর একটাকে নিয়ে চলে গেল। তবে ভাগ্যগুণে বেঁচে যান গল্প বয়ানকারী।
গত শতকের ষাটের দশকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রেমা-কালেঙ্গার জঙ্গলে বাঘের বসতির খবর মেলে এনায়েত মাওলার লেখায়ও। তবে বেশ কয়েকবার রেমা-কালেঙ্গায় গিয়ে জঙ্গল এলাকায় বাস করা বৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জেনেছি, এই জঙ্গলে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে বড় একটি যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। ওই সময় কালেঙ্গার বাঘেরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের গহিন জঙ্গলের দিকে চলে যায়।
সত্যি একসময় বাঘেরা মহানন্দে ঘুরে বেড়াত সিলেটের টিলা-চা-বাগান-পাহাড়ময় বনাঞ্চলে। তবে এখন সবই স্মৃতি। বন উজাড়, অপরিণামদর্শী বন্য প্রাণী শিকার, ছোট-ছোট বনের মধ্যে সংযোগ নষ্টসহ নানা কারণে সিলেট থেকে হারিয়ে গেছে বাঘ। পুরোনো দিনের মানুষদের কাছে সেই সব বাঘের গল্পই শোনা যায় কেবল এখন।
২০১১ সালে জুড়ীর লাঠিটিলা জঙ্গলে গিয়েছিলাম। জঙ্গল ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় সফিক ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো। জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। বন্য প্রাণীর খবর পাওয়া যায় তাঁর কাছে। কথাবার্তার একপর্যায়ে তাঁর কাছ থেকে জানলাম আগের বছর, অর্থাৎ ২০১০ সালে তিনি বড় ডোরা বাঘ দেখেছেন জঙ্গলের গহিনে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানও জানিয়েছিলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তিনি শুনেছেন ২০০৭-০৮ সালের দিকে ওই বনে বাঘ বিচরণ করত।
আমার দেখা সিলেট বিভাগের সেরা বন লাঠিটিলা। অন্তত ২০১১ সালে শেষ যখন গিয়েছিলাম তখনো ছিল। এই অরণ্য ধরে চলে যাওয়া যায় একেবারে মাধবকুণ্ডের পেছনের জঙ্গল পর্যন্ত। পাশেই ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলার সীমান্ত। সেখানেও কিছু জঙ্গল আছে। লাঠিটিলা এবং এর চারপাশের জঙ্গল মিলিয়ে বাঘের বিচরণ একেবারে অসম্ভব নয়। তবে ওই ২০১১ সালের পর আর বাঘের কোনো খবরও পাইনি ওই এলাকা থেকে। করিমগঞ্জ এলাকায় কোনো বাঘ আছে—এমন তথ্য পাইনি ইন্টারনেট ঘেঁটে। তাই লাঠিটিলার বাঘ-রহস্যের যেমন সমাধান হয়নি, তেমনি আমার মতো বাঘপ্রেমীও সিলেটের জঙ্গলে এখনো বাঘ থাকার সম্ভাবনা নিয়ে বেশি আশাবাদী হতে পারিনি।
লেখক: ইশতিয়াক হাসান, সাংবাদিক ও প্রকৃতিপ্রেমী
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে