অমিত রঞ্জন দে
কোটালীপাড়ার উনশিয়া গ্রামে পাঁচ পুরুষের ভিটে পরিদর্শনে গিয়ে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানালেন পশ্চিম বাংলার গণসংগীতশিল্পী কঙ্কণ ভট্টাচার্য। পিতৃকুল ও মাতৃকুলের অন্তত পাঁচ পুরুষ বাস করেছেন এই কোটালীপাড়ায়। তাঁদের চরণধন্য মাটিতে পা রাখার এক দুর্বার আকর্ষণে তিনি কোটালীপাড়ায় যান। সেখানে মাতৃকুলের অবশিষ্ট এক মামা গৌরাঙ্গ চৌধুরী বাস করেন। তিনি সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তাঁরই সাহায্যে পিতৃপুরুষের ভিটে দেখতে উনশিয়া গ্রাম এবং মাতৃকুলের ভিটে ডহরপাড়া গ্রামে যান তিনি।
কঙ্কণ ভট্টাচার্যের পিতৃপুরুষের আদি বাসস্থান তর্কালঙ্কার/বিদ্যালঙ্কার বাড়ি নামে খ্যাত। পণ্ডিত বাড়ি, সে তো নামেই পরিচয়। এখানেই সর্বশেষ বাস করেছেন তাঁর পিতামহ পণ্ডিত হারান চন্দ্র স্মৃতি তীর্থ, যা এখন মইনুদ্দিন বাড়ি হিসেবে পরিচিত। মইনুদ্দিনও আর বেঁচে নেই। দেখা এবং কথা হয় তাঁর বৃদ্ধ পুত্রের সঙ্গে। পরিচয় পেয়ে তাঁরা যথেষ্ট সমাদর করেন। মইনুদ্দিন পরিবারের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন কঙ্কণ-মন্দিরা-রঞ্জিনী পরিবার।
উনশিয়া গ্রামের পিত্রালয়ের স্মৃতিতর্পণ শেষে ছুটে যান ডহরপাড়া গ্রামের দিকে। সেই গ্রাম মাতৃকুলের স্মৃতিবিজড়িত। সেখানে বাস করতেন মাতামহ অক্ষয় কুমার চৌধুরী। একসময় এখানে মাতৃকুলের সবাই যৌথভাবে বাস করলেও আজ অবশিষ্ট আছেন মামা গৌরাঙ্গ চৌধুরী। তিনি অবশ্য এখন বাস করেন কোটালীপাড়া পশ্চিমপাড় উপজেলা হেডকোয়ার্টার-সংলগ্ন এলাকায়। মাতৃভূমির সেই বাড়িতে এখন বাস করেন মোতাহার হোসেন সর্দার ও তাঁর ভাইয়েরা। এই বাড়ির পাশেই তাঁর আরেক দাদু মোহিনী চৌধুরীর বাড়ি, যিনি ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’সহ বেশ কিছু অসাধারণ গানের জন্য বাঙালিহৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর ভাঙা ভিটের অবশিষ্টাংশ এখনো পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়।
রাস্তাতেই পড়ে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পিতা নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্যের বাড়ি, যা এখন সুকান্ত পাঠাগার হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এখানেই বাস করেছিলেন সুকান্তের পূর্বপুরুষেরা। এ-ও এক পুণ্যভূমি। এর পাশেই কবি সুকান্ত নামাঙ্কিত এক শিশু উদ্যান রয়েছে। দেখে মনটা ভরে গেল কঙ্কণ ভট্টাচার্যের।
মামা গৌরাঙ্গ চৌধুরী ঘুরে ঘুরে দেখান তাঁর পিতৃ-মাতৃকুলের স্মৃতিবিজড়িত ধূলিমাখা গ্রাম দুখানি। দুটো পরিবারের স্মৃতি হাতড়ে অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নিলেন অনেক অনেক অভিজ্ঞতা, পূরণ করলেন পিতৃকুল ও মাতৃকুলের চরণধন্য মাটিতে পা রাখার লালিত স্বপ্ন।
কঙ্কণ ভট্টাচার্যের জন্ম অবশ্য ১৯৫১ সালে, দার্জিলিংয়ের রাঙ্গারুন চা-বাগানে। সেখানে তাঁর শৈশব, কৈশোর আর বেড়ে ওঠা। শৈশবেই নেপালি লোকসংগীতের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। ১৯ বছর বয়সে বামপন্থী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে মেলামেশা শুরু। ২১ বছর বয়স থেকে গান রচনা ও সুরারোপের সূত্রপাত। ২৫ বছরে লোককবি নিবারণ পণ্ডিতের সাহচর্য ও শিক্ষায় লোকসংগীত সংগ্রহ এবং ব্যবহারের কাজ শুরু। একই সঙ্গে হীরেন ভট্টাচার্য, রত্না ভট্টাচার্য, দিলীপ মুখোপাধ্যায় এবং আরও অনেকের কাছে শিক্ষালাভ। বিভিন্ন আঙ্গিকের গান সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে নানান দেশের গণসংগীত অনুবাদ কঙ্কণ ভট্টাচার্যের ভালো লাগার অন্যতম ক্ষেত্র। ১৯৯৬ সাল থেকে পিট সিজারের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য এবং গান সৃষ্টির উৎসাহ লাভ করেন তিনি।
১৯৮২ সালে মন্দিরা ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিয়ে হয় কঙ্কণ ভট্টাচার্যের। ১৯৮৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমির শিক্ষক ও গবেষণা নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর সৃষ্টি করা গানের সংখ্যা আনুমানিক চার শ। পিতৃপুরুষের ভিটে দর্শনের এ যাত্রায় কঙ্কণ ভট্টাচার্যের সহযাত্রী হয়েছেন সহধর্মিণী মন্দিরা ভট্টাচার্য ও কন্যা রঞ্জিনী ভট্টাচার্য।
লেখক: উদীচীর সাধারণ সম্পাদক
কোটালীপাড়ার উনশিয়া গ্রামে পাঁচ পুরুষের ভিটে পরিদর্শনে গিয়ে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানালেন পশ্চিম বাংলার গণসংগীতশিল্পী কঙ্কণ ভট্টাচার্য। পিতৃকুল ও মাতৃকুলের অন্তত পাঁচ পুরুষ বাস করেছেন এই কোটালীপাড়ায়। তাঁদের চরণধন্য মাটিতে পা রাখার এক দুর্বার আকর্ষণে তিনি কোটালীপাড়ায় যান। সেখানে মাতৃকুলের অবশিষ্ট এক মামা গৌরাঙ্গ চৌধুরী বাস করেন। তিনি সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তাঁরই সাহায্যে পিতৃপুরুষের ভিটে দেখতে উনশিয়া গ্রাম এবং মাতৃকুলের ভিটে ডহরপাড়া গ্রামে যান তিনি।
কঙ্কণ ভট্টাচার্যের পিতৃপুরুষের আদি বাসস্থান তর্কালঙ্কার/বিদ্যালঙ্কার বাড়ি নামে খ্যাত। পণ্ডিত বাড়ি, সে তো নামেই পরিচয়। এখানেই সর্বশেষ বাস করেছেন তাঁর পিতামহ পণ্ডিত হারান চন্দ্র স্মৃতি তীর্থ, যা এখন মইনুদ্দিন বাড়ি হিসেবে পরিচিত। মইনুদ্দিনও আর বেঁচে নেই। দেখা এবং কথা হয় তাঁর বৃদ্ধ পুত্রের সঙ্গে। পরিচয় পেয়ে তাঁরা যথেষ্ট সমাদর করেন। মইনুদ্দিন পরিবারের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন কঙ্কণ-মন্দিরা-রঞ্জিনী পরিবার।
উনশিয়া গ্রামের পিত্রালয়ের স্মৃতিতর্পণ শেষে ছুটে যান ডহরপাড়া গ্রামের দিকে। সেই গ্রাম মাতৃকুলের স্মৃতিবিজড়িত। সেখানে বাস করতেন মাতামহ অক্ষয় কুমার চৌধুরী। একসময় এখানে মাতৃকুলের সবাই যৌথভাবে বাস করলেও আজ অবশিষ্ট আছেন মামা গৌরাঙ্গ চৌধুরী। তিনি অবশ্য এখন বাস করেন কোটালীপাড়া পশ্চিমপাড় উপজেলা হেডকোয়ার্টার-সংলগ্ন এলাকায়। মাতৃভূমির সেই বাড়িতে এখন বাস করেন মোতাহার হোসেন সর্দার ও তাঁর ভাইয়েরা। এই বাড়ির পাশেই তাঁর আরেক দাদু মোহিনী চৌধুরীর বাড়ি, যিনি ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’সহ বেশ কিছু অসাধারণ গানের জন্য বাঙালিহৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর ভাঙা ভিটের অবশিষ্টাংশ এখনো পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়।
রাস্তাতেই পড়ে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পিতা নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্যের বাড়ি, যা এখন সুকান্ত পাঠাগার হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এখানেই বাস করেছিলেন সুকান্তের পূর্বপুরুষেরা। এ-ও এক পুণ্যভূমি। এর পাশেই কবি সুকান্ত নামাঙ্কিত এক শিশু উদ্যান রয়েছে। দেখে মনটা ভরে গেল কঙ্কণ ভট্টাচার্যের।
মামা গৌরাঙ্গ চৌধুরী ঘুরে ঘুরে দেখান তাঁর পিতৃ-মাতৃকুলের স্মৃতিবিজড়িত ধূলিমাখা গ্রাম দুখানি। দুটো পরিবারের স্মৃতি হাতড়ে অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নিলেন অনেক অনেক অভিজ্ঞতা, পূরণ করলেন পিতৃকুল ও মাতৃকুলের চরণধন্য মাটিতে পা রাখার লালিত স্বপ্ন।
কঙ্কণ ভট্টাচার্যের জন্ম অবশ্য ১৯৫১ সালে, দার্জিলিংয়ের রাঙ্গারুন চা-বাগানে। সেখানে তাঁর শৈশব, কৈশোর আর বেড়ে ওঠা। শৈশবেই নেপালি লোকসংগীতের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। ১৯ বছর বয়সে বামপন্থী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে মেলামেশা শুরু। ২১ বছর বয়স থেকে গান রচনা ও সুরারোপের সূত্রপাত। ২৫ বছরে লোককবি নিবারণ পণ্ডিতের সাহচর্য ও শিক্ষায় লোকসংগীত সংগ্রহ এবং ব্যবহারের কাজ শুরু। একই সঙ্গে হীরেন ভট্টাচার্য, রত্না ভট্টাচার্য, দিলীপ মুখোপাধ্যায় এবং আরও অনেকের কাছে শিক্ষালাভ। বিভিন্ন আঙ্গিকের গান সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে নানান দেশের গণসংগীত অনুবাদ কঙ্কণ ভট্টাচার্যের ভালো লাগার অন্যতম ক্ষেত্র। ১৯৯৬ সাল থেকে পিট সিজারের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য এবং গান সৃষ্টির উৎসাহ লাভ করেন তিনি।
১৯৮২ সালে মন্দিরা ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিয়ে হয় কঙ্কণ ভট্টাচার্যের। ১৯৮৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমির শিক্ষক ও গবেষণা নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর সৃষ্টি করা গানের সংখ্যা আনুমানিক চার শ। পিতৃপুরুষের ভিটে দর্শনের এ যাত্রায় কঙ্কণ ভট্টাচার্যের সহযাত্রী হয়েছেন সহধর্মিণী মন্দিরা ভট্টাচার্য ও কন্যা রঞ্জিনী ভট্টাচার্য।
লেখক: উদীচীর সাধারণ সম্পাদক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে