Ajker Patrika

তীর রক্ষা বাঁধের কাছে বালু উত্তোলন, ঝুঁকি

মাসুদ পারভেজ রুবেল ডিমলা (নীলফামারী)
তীর রক্ষা বাঁধের কাছে  বালু উত্তোলন, ঝুঁকি

নীলফামারীর ডিমলায় বসতভিটা উন্নয়নের নামে তিস্তা নদী প্রতিরক্ষা ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাঁধের খুব কাছ থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাঁধটি। এলাকাবাসীর ভাষ্য, বাঁধ ভেঙে গেলে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৮০ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বেসরকারি সংস্থা গ্রাম বিকাশের সঙ্গে চুক্তি করে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার নামে ওই এলাকার এক ব্যবসায়ী এ বালু তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে গ্রাম বিকাশ কর্তৃপক্ষ বলছে, এনজিওর প্রকল্পের নামে অন্য কেউ বালু উত্তোলন করছে। তারা কোথাও বসতভিটা উঁচুকরণের কাজ করছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পাউবোর ডালিয়া বিভাগের অধীনে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ এ বাঁধ বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার চর খড়িবাড়ী ও ভারতের কোচবিহার জেলার মেকলিগঞ্জ থানার তিস্তাপাড় বিএসএফ ক্যাম্পের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত। বাংলাদেশ অংশে কয়েকটি প্রকল্পে সিসি ব্লকের মাধ্যমে বাঁধটি নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি টাকা।

বালু উত্তোলন ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী, ফসলি জমি, বাঁধ, ব্যারাজ, সেতু, মহাসড়ক, রেললাইন, আবাসিক এলাকা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোর এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বসতভিটা উঁচুকরণের নামে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের আনন্দ বাজার চরখড়িবাড়ি এলাকায় যৌথ বাঁধের বাইরে তিস্তা নদী ও ভেতরে ফসলি জমির মাঝখানে একাধিক খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। খননের জায়গায় বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তার চারপাশে ফসলি জমি ও ৫০ ফুট দূরত্বে রয়েছে জনবসতি।

বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক ২৫ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকাকে জানান, চার দিন ধরে কবির ইসলাম নামের ব্যক্তির নির্দেশে তাঁরা বোমা মেশিন দিয়ে বালু তুলছেন। কবির গ্রাম বিকাশ এনজিওর সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই বালু দিয়ে ভিটা উঁচুকরণের কাজ হয়।

উপকারভোগী স্বরবানু (৪০) ও ফজর আলী (৩০) জানান, গ্রাম বিকাশ তাদের ভিটা উঁচু করে দিচ্ছে। তারাই বালু উত্তোলনসহ সবকিছু করছে।

তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এনজিওর প্রকল্পের নামে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই বালু। দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের গোড়া থেকে ১০০-২০০ মিটার দূরত্বে বালু ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করছেন। এতে বাঁধের নিচে গভীরতা সৃষ্টি করে বালু উত্তোলনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বর্ষা মৌসুমে দেখা দিতে পারে। যেকোনো মুহূর্তে তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগের বিষয়ে বালু ব্যবসায়ী কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্রাম বিকাশ এনজিওর সঙ্গে চুক্তি করে বালু উত্তোলন করেছিলাম। তবে দুই মাস ধরে এনজিওর কাজ বন্ধ। এখন কে বা কারা, কোথা থেকে বালু তুলছেন, তা আমার জানা নেই।’

জানতে চাইলে গ্রাম বিকাশের গয়াবাড়ি শাখার পরিচালক শামসুর রহমান লিটন বলেন, ‘বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের আওতায় বসতভিটা উঁচুকরণের কাজ বন্ধ আছে। এনজিওর নাম ভাঙিয়ে কেউ বালু উত্তোলন করলে এর দায়ভার আমাদের নয়।’

যোগাযোগ করা হলে পাউবো ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাঁধের আশপাশে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করলে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ধসে যেতে পারে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর-ই-সিদ্দিকী বলেন, বাঁধ, নদী ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোরকে গণপিটুনি, আহত ৭ পুলিশ

জাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় মদদ: ৯ শিক্ষক বরখাস্ত, উপাচার্যের পেনশন বাতিল

বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র

জাবির সাবেক শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা হত্যা: ৭ শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার

জুলাই আন্দোলনে হামলা: জাবির ২৮৯ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারসহ ৩ রকম শাস্তি দিল প্রশাসন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত