অর্থ পাচারকারীদের তালিকা হচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ৪৫

পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এর জন্য তিনি অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কাউন্সিলকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। 

প্রায় দুই বছর পর গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সভাকক্ষে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় উপদেষ্টা কাউন্সিলের বৈঠক হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, এনবিআর, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার মনোনীত ঊর্ধ্ব স্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা অর্থ পাচারে জড়িতদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদলের এই প্রেক্ষাপটে কেউ যাতে অর্থ তুলে নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, তা প্রতিরোধে সন্দেহভাজনদের ব্যাংক হিসাব জব্দসহ বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান—যেটাই হোক, যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন তিনি। পাচারের অর্থ সন্ধানে সুইস ব্যাংকসহ সম্ভাব্য সব দেশ ও গন্তব্যে সংশ্লিষ্ট সরকার ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন উপদেষ্টা। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের ফাঁকফোকর বের করাসহ হুন্ডি প্রতিরোধে করণীয় বিষয়েও আলোচনা করেন উপদেষ্টা।

সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের কাছে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপ এবং সেগুলোর অগ্রগতি জানতে চান। এ সময় দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে নিজ নিজ কর্মপরিধির আওতায় হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়।

প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সাংবাদিকেরা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই বছর পর অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধসংক্রান্ত উপদেষ্টা কাউন্সিলের এই বৈঠক হয়েছে। বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এতে অর্থ পাচার, সন্ত্রাসবিরোধী অর্থায়নসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই ইস্যুগুলো এবং সার্বিক স্বার্থের জন্যও অতি গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘গত দুই বছরে অনেকগুলো পদক্ষেপ ঝুলে ছিল। সংশ্লিষ্ট অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আছে। সবাই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে এ-সংক্রান্ত পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে আরও সক্রিয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলকে বলেছি, অনেক দিন বসে থাকবেন, আবার অনেক দিন সময় লাগবে, আবার বসবেন; সেটি হবে না। দ্রুত অ্যাকশন নিতে হবে। যদি কিছু পরামর্শ লাগে, আইনের সংস্কার ও নির্দেশনা লাগে, সেটি করা হবে। কিন্তু এখন বিদ্যমান যে আইন রয়েছে, তার আলোকেই অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এতে ভয়ের কিছু নেই। আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী দেশের জন্য নির্ভয়ে কাজ করতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হবে। তার আগে এ রকম অর্থ দেশে যাতে তৈরি না হয়, সেগুলোর সুযোগও বন্ধ করতে হবে। আমরা সেটিই করতে যাচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত