মামুনুর রশীদ
জনপ্রতিনিধিরা চিরকালই ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। খুব সহজে তা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা সম্ভব বলে তাঁরা মনে করেন। আজকাল এসব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বেশ কিছু সংসদ সদস্য প্রকাশ্যেই শিল্প-সাহিত্যের বিরোধিতা করে গানবাজনাকে এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যান উচ্চ কণ্ঠে বলেছেন, তাঁর এলাকায় গানবাজনা করা যাবে না। প্রায় সব এলাকাতেই এখন প্রাইমারি স্কুলের চেয়ে মাদ্রাসার সংখ্যা বেশি। তাই মাদ্রাসার অনুশাসনে থাকা, এসব মান্য করা স্বাভাবিক।
একজন সংসদ সদস্য যাঁর মাথায় খুনের মামলা ঝুলছে, সারা দেশে যাঁর পরিচিতি একজন সন্ত্রাসী হিসেবে, তিনি স্কুল-কলেজে পয়লা বৈশাখে গান গাইতে দেন না। শীতকালে তো বটেই, অন্য সময়েও তিনি ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মসভার আয়োজন করেন। মাদ্রাসা-অধ্যুষিত এই এলাকায় পেশিশক্তির প্রবল ব্যবহার। যেহেতু এলাকায় কোনো সংস্কৃতিচর্চা নেই, তাই কোনো মানবিক ও সুকুমার বৃত্তির চর্চাও হয় না। এলাকায় নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন থাকা সত্ত্বেও তাদের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। গান-নাচ-আবৃত্তি-নাটক-সাহিত্য-চিত্রকলা যাঁদের অন্তরে কোনো স্পন্দন তোলে না, তাঁদের খুনি-সন্ত্রাসী হতে বাধা কোথায়? নারীশিক্ষা যেখানে বোরকার অন্তরালে মাদ্রাসা পাঠ, বিজ্ঞানচিন্তা যেখানে অন্তর্হিত, সেখানে তালেবানি শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে অসুবিধা কোথায়?
দেশে একটা মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের একটা প্রধান বিষয় ছিল, অসাম্প্রদায়িকতা। যার আরও সুনির্দিষ্ট কথা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু দেশে অনেক ব্যাপার ঘটে গেছে। দেশদ্রোহীরা রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদারি পেয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছায়াতলে আমাদের দেশের সেনাবাহিনী স্থান পেয়েছে। পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার স্বপ্নে তারা বিভোর হয়েছে। সেখানে অবশ্য দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক, ছাত্র-জনতা এবং রাষ্ট্রক্ষমতার বঞ্চিত অংশ ও গণতন্ত্রকামী রাজনীতিকদের যৌথ আন্দোলনে তা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ওই সাম্প্রদায়িকতার ভূত চলে যায়নি। একটা বড় অংশ ওই ব্যাপারে ভূতগ্রস্ত। সেই ভূতগ্রস্তদের একটা বড় অংশ আবার বর্তমানের শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তাঁরা ধর্মকে ব্যবহার করছেন নানাভাবে। তাঁদের মধ্যে শিক্ষা-সংস্কৃতি নেই, তাঁরা বাংলাদেশের ইতিহাস জানেন না। তবে টাকাটা চেনেন ভালোভাবেই। তাঁরা ব্যবসায়ী, বিশাল মুনাফার মালিক। তাঁরা ব্যবসার নামে লুট করেন এবং বিদেশে টাকা পাচার করে দেন। নমিনেশন কিনতে পারলে তাঁর তো কোনো শিক্ষা-দীক্ষা বা বাংলার সংস্কৃতি জানার প্রয়োজন পড়ে না!
দীর্ঘদিন ধরেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয় না। রাজনীতি শেখার সূতিকাগার এই সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ। দুই বড় দলের টাকা উপার্জনের একটা বড় জায়গা হচ্ছে নমিনেশন-বাণিজ্য। লুটেরা ব্যবসায়ীরাও মুক্তহস্তে এসব জায়গায় লগ্নি করে থাকেন। সংসদ নির্বাচন ছাড়াও তাঁদের বিস্তৃতি ঘটেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। কোটি টাকার আদান-প্রদান সেখানে। কোনো ত্যাগী রাজনীতিবিদের পক্ষে এই প্রতিযোগিতায় দাঁড়ানো কি সম্ভব?
তাঁদের সবচেয়ে বড় সুবিধা যে তাঁরা জানেনও না দেশপ্রেমটা কী। দেশের অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করা যেকোনো রাষ্ট্রেই একটা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই সব অপরাধ ধরার জন্য সব দেশেই শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে তা এখন পর্যন্ত দুর্বল শুধু নয়, নানা প্রভাব-প্রতিপত্তিতে অসহায়।
স্কুল-কলেজগুলোর জন্য নিয়মমাফিক কিছু কমিটি থাকে। এই কমিটিগুলোর চরিত্র ভয়ংকর। শিক্ষক নিয়োগে কমিটির সদস্যরা দুর্নীতি করেন, যতটুকু অর্থ আসে, সেখান থেকে উন্নয়নের বখরা নেন। কিন্তু স্কুল বা কলেজের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য তাঁরা ভূমিকা নেন না। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ তাঁদের কোনো সংস্কৃতিভাবনা নেই। তাঁরা গানবাজনাকেই ভাবেন সংস্কৃতিচর্চা। তাই তাঁদের ক্ষোভ গানবাজনার ওপর। তাঁরা কি জানেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন, সেই সময়কার রাজনৈতিক আন্দোলন এবং এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল বাঙালির সংস্কৃতিকে রক্ষা করার আন্দোলন?
বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখ্য বিষয় হচ্ছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। একটা গভীর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জন্যই এ দেশটায় একটা মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এবং দেশটা স্বাধীন হয়েছিল। তখন কি এ দেশে ধার্মিক মানুষ ছিলেন না? তাঁরা কেন এই আন্দোলনে অংশ নিলেন? তাঁরা বুঝেছিলেন, পাকিস্তানি জান্তার ধর্মবিশ্বাস মানুষকে ধোঁকা দেওয়া। ওরা ধর্মে বিশ্বাসই করে না।
আমাদের দেশে যাঁরা ধর্মব্যবসায়ী, তাঁদের চরিত্রও একই। তাঁরা ভোটের আগে মসজিদ বা মাদ্রাসায় অর্থ খরচ করেন, হজব্রত পালন করেন, গ্রামে ধর্মসভা বা ওয়াজ মাহফিল করে একটা জায়গা করে নেন। তাঁদের অর্জিত লুটেরা অর্থকে জায়েজ করে নেন। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন, আমলা—তাঁদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নেন। ধর্মের পক্ষে দাঁড়ালে শাসকগোষ্ঠী কোনো নেতিবাচক পক্ষ নেবে না। একটা অদৃশ্য আঁতাত হয়ে যায় আমলা-ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা কৌশল থাকে। তারা ব্রিটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর নানা কৌশল জানে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকে।
এ অবস্থার মধ্যে একমাত্র অসহায় গোষ্ঠী তারাই, যাদের কোনো দল নেই, তদবির নেই, অর্থ নেই। অথচ মূল উৎপাদিকা শক্তি তারাই। তাদের অসহায় ক্রন্দনে কেউ এগিয়ে আসে না। পাজেরো গাড়ি করে আসা জনপ্রতিনিধি কচিৎ গ্রামে এসে দুপুরের উপাদেয় খাবারটি খেয়ে দিবানিদ্রায় কাতর হয়ে রাজধানীতে চলে যান। কিন্তু ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই আবার দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে কীভাবে লুটপাট করা যায়, সেই স্বপ্নে বিভোর হন।
রোজার সময় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছিল। এখন তা তো কমছেই না; বরং আরও বেড়ে চলেছে। একাধিক বার লিখেছি, এ দেশের ব্যবসায়ীদের কোনো বোধ নেই, মানবিকতা নেই, আছে শুধু বল্গাহীন মুনাফার লোভ। এ অবস্থা থেকে তাঁরা কখনো মুক্ত হতে চান না। রাজনীতির সর্বোচ্চ মহলও তাঁদের সঙ্গী। তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সরকারের ভালোবাসার শেষ নেই। অথচ একদা সংস্কৃতিকর্মীরাই ছিল রাজনীতিবিদদের প্রধান সহায়। এসব কারণেই এক নৈরাজ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা স্বাভাবিক।
অর্থ ও পেশিশক্তির কারণে যে রাজনীতির জন্ম হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তো উপেক্ষিত হবেই। যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাজনা নিষিদ্ধ করেছেন, তাঁকে চরম শাস্তি দেওয়া উচিত। নইলে নৈরাজ্য আরও বাড়বে, অবাক হব না যদি তালেবানি শাসনকে আহ্বান করা হয়।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
জনপ্রতিনিধিরা চিরকালই ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। খুব সহজে তা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা সম্ভব বলে তাঁরা মনে করেন। আজকাল এসব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বেশ কিছু সংসদ সদস্য প্রকাশ্যেই শিল্প-সাহিত্যের বিরোধিতা করে গানবাজনাকে এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যান উচ্চ কণ্ঠে বলেছেন, তাঁর এলাকায় গানবাজনা করা যাবে না। প্রায় সব এলাকাতেই এখন প্রাইমারি স্কুলের চেয়ে মাদ্রাসার সংখ্যা বেশি। তাই মাদ্রাসার অনুশাসনে থাকা, এসব মান্য করা স্বাভাবিক।
একজন সংসদ সদস্য যাঁর মাথায় খুনের মামলা ঝুলছে, সারা দেশে যাঁর পরিচিতি একজন সন্ত্রাসী হিসেবে, তিনি স্কুল-কলেজে পয়লা বৈশাখে গান গাইতে দেন না। শীতকালে তো বটেই, অন্য সময়েও তিনি ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মসভার আয়োজন করেন। মাদ্রাসা-অধ্যুষিত এই এলাকায় পেশিশক্তির প্রবল ব্যবহার। যেহেতু এলাকায় কোনো সংস্কৃতিচর্চা নেই, তাই কোনো মানবিক ও সুকুমার বৃত্তির চর্চাও হয় না। এলাকায় নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন থাকা সত্ত্বেও তাদের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। গান-নাচ-আবৃত্তি-নাটক-সাহিত্য-চিত্রকলা যাঁদের অন্তরে কোনো স্পন্দন তোলে না, তাঁদের খুনি-সন্ত্রাসী হতে বাধা কোথায়? নারীশিক্ষা যেখানে বোরকার অন্তরালে মাদ্রাসা পাঠ, বিজ্ঞানচিন্তা যেখানে অন্তর্হিত, সেখানে তালেবানি শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে অসুবিধা কোথায়?
দেশে একটা মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের একটা প্রধান বিষয় ছিল, অসাম্প্রদায়িকতা। যার আরও সুনির্দিষ্ট কথা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু দেশে অনেক ব্যাপার ঘটে গেছে। দেশদ্রোহীরা রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদারি পেয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছায়াতলে আমাদের দেশের সেনাবাহিনী স্থান পেয়েছে। পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার স্বপ্নে তারা বিভোর হয়েছে। সেখানে অবশ্য দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক, ছাত্র-জনতা এবং রাষ্ট্রক্ষমতার বঞ্চিত অংশ ও গণতন্ত্রকামী রাজনীতিকদের যৌথ আন্দোলনে তা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ওই সাম্প্রদায়িকতার ভূত চলে যায়নি। একটা বড় অংশ ওই ব্যাপারে ভূতগ্রস্ত। সেই ভূতগ্রস্তদের একটা বড় অংশ আবার বর্তমানের শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তাঁরা ধর্মকে ব্যবহার করছেন নানাভাবে। তাঁদের মধ্যে শিক্ষা-সংস্কৃতি নেই, তাঁরা বাংলাদেশের ইতিহাস জানেন না। তবে টাকাটা চেনেন ভালোভাবেই। তাঁরা ব্যবসায়ী, বিশাল মুনাফার মালিক। তাঁরা ব্যবসার নামে লুট করেন এবং বিদেশে টাকা পাচার করে দেন। নমিনেশন কিনতে পারলে তাঁর তো কোনো শিক্ষা-দীক্ষা বা বাংলার সংস্কৃতি জানার প্রয়োজন পড়ে না!
দীর্ঘদিন ধরেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয় না। রাজনীতি শেখার সূতিকাগার এই সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ। দুই বড় দলের টাকা উপার্জনের একটা বড় জায়গা হচ্ছে নমিনেশন-বাণিজ্য। লুটেরা ব্যবসায়ীরাও মুক্তহস্তে এসব জায়গায় লগ্নি করে থাকেন। সংসদ নির্বাচন ছাড়াও তাঁদের বিস্তৃতি ঘটেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। কোটি টাকার আদান-প্রদান সেখানে। কোনো ত্যাগী রাজনীতিবিদের পক্ষে এই প্রতিযোগিতায় দাঁড়ানো কি সম্ভব?
তাঁদের সবচেয়ে বড় সুবিধা যে তাঁরা জানেনও না দেশপ্রেমটা কী। দেশের অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করা যেকোনো রাষ্ট্রেই একটা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই সব অপরাধ ধরার জন্য সব দেশেই শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে তা এখন পর্যন্ত দুর্বল শুধু নয়, নানা প্রভাব-প্রতিপত্তিতে অসহায়।
স্কুল-কলেজগুলোর জন্য নিয়মমাফিক কিছু কমিটি থাকে। এই কমিটিগুলোর চরিত্র ভয়ংকর। শিক্ষক নিয়োগে কমিটির সদস্যরা দুর্নীতি করেন, যতটুকু অর্থ আসে, সেখান থেকে উন্নয়নের বখরা নেন। কিন্তু স্কুল বা কলেজের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য তাঁরা ভূমিকা নেন না। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ তাঁদের কোনো সংস্কৃতিভাবনা নেই। তাঁরা গানবাজনাকেই ভাবেন সংস্কৃতিচর্চা। তাই তাঁদের ক্ষোভ গানবাজনার ওপর। তাঁরা কি জানেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন, সেই সময়কার রাজনৈতিক আন্দোলন এবং এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল বাঙালির সংস্কৃতিকে রক্ষা করার আন্দোলন?
বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখ্য বিষয় হচ্ছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। একটা গভীর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জন্যই এ দেশটায় একটা মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এবং দেশটা স্বাধীন হয়েছিল। তখন কি এ দেশে ধার্মিক মানুষ ছিলেন না? তাঁরা কেন এই আন্দোলনে অংশ নিলেন? তাঁরা বুঝেছিলেন, পাকিস্তানি জান্তার ধর্মবিশ্বাস মানুষকে ধোঁকা দেওয়া। ওরা ধর্মে বিশ্বাসই করে না।
আমাদের দেশে যাঁরা ধর্মব্যবসায়ী, তাঁদের চরিত্রও একই। তাঁরা ভোটের আগে মসজিদ বা মাদ্রাসায় অর্থ খরচ করেন, হজব্রত পালন করেন, গ্রামে ধর্মসভা বা ওয়াজ মাহফিল করে একটা জায়গা করে নেন। তাঁদের অর্জিত লুটেরা অর্থকে জায়েজ করে নেন। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন, আমলা—তাঁদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নেন। ধর্মের পক্ষে দাঁড়ালে শাসকগোষ্ঠী কোনো নেতিবাচক পক্ষ নেবে না। একটা অদৃশ্য আঁতাত হয়ে যায় আমলা-ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা কৌশল থাকে। তারা ব্রিটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর নানা কৌশল জানে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকে।
এ অবস্থার মধ্যে একমাত্র অসহায় গোষ্ঠী তারাই, যাদের কোনো দল নেই, তদবির নেই, অর্থ নেই। অথচ মূল উৎপাদিকা শক্তি তারাই। তাদের অসহায় ক্রন্দনে কেউ এগিয়ে আসে না। পাজেরো গাড়ি করে আসা জনপ্রতিনিধি কচিৎ গ্রামে এসে দুপুরের উপাদেয় খাবারটি খেয়ে দিবানিদ্রায় কাতর হয়ে রাজধানীতে চলে যান। কিন্তু ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই আবার দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে কীভাবে লুটপাট করা যায়, সেই স্বপ্নে বিভোর হন।
রোজার সময় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছিল। এখন তা তো কমছেই না; বরং আরও বেড়ে চলেছে। একাধিক বার লিখেছি, এ দেশের ব্যবসায়ীদের কোনো বোধ নেই, মানবিকতা নেই, আছে শুধু বল্গাহীন মুনাফার লোভ। এ অবস্থা থেকে তাঁরা কখনো মুক্ত হতে চান না। রাজনীতির সর্বোচ্চ মহলও তাঁদের সঙ্গী। তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সরকারের ভালোবাসার শেষ নেই। অথচ একদা সংস্কৃতিকর্মীরাই ছিল রাজনীতিবিদদের প্রধান সহায়। এসব কারণেই এক নৈরাজ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা স্বাভাবিক।
অর্থ ও পেশিশক্তির কারণে যে রাজনীতির জন্ম হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তো উপেক্ষিত হবেই। যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাজনা নিষিদ্ধ করেছেন, তাঁকে চরম শাস্তি দেওয়া উচিত। নইলে নৈরাজ্য আরও বাড়বে, অবাক হব না যদি তালেবানি শাসনকে আহ্বান করা হয়।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
১০ বছর ধরে নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াত। নাম দিয়েছেন ‘রবি পথ’। অবশেষে প্রকাশ হচ্ছে তাঁর আত্মজীবনী। আগামী ২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে রবি পথের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
১ ঘণ্টা আগেএকদিন ভোরবেলা জাকারবার্গ লক্ষ করলেন যে পৃথিবীতে একটা ছোট্ট দেশে তাঁর সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হচ্ছে। সামনের ফ্লোরটায় দেখলেন দেশটা ছোট বটে, কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। আর এই দেশের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুকে দেখতে পেলেন অসংখ্য বার্তা—সবই রাজনৈতিক এবং ছবিতে এ বিষয়ে বিপুল জনগণের
২ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৩ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের নেতা-কর্মীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে অসংখ্য আন্দোলনকারীকে হত্যা ও অনেকের জীবন বি
২ ঘণ্টা আগেইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম রোমান্টিক কবি ছিলেন জন কিটস। কবিতা ছাড়া কিটস কোনো গদ্য লেখার চেষ্টা করেননি। তাঁর কাব্যজীবন ছিল মাত্র ছয় বছরের। অর্থাৎ উনিশ থেকে চব্বিশ বছর বয়স পর্যন্ত। মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে তাঁর কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সমালোচকদের দ্বারা কিটসের কবিতা খুব একটা আলোচিত হয়নি। তবে মৃত্য
২ ঘণ্টা আগে