লক্ষাধিক মানুষের ২ চিকিৎসক

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ০৭: ৪৬
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ০৩

হাওরবেষ্টিত নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৫ জন। তাঁদের মধ্যে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর সেবা দিতে পারেন। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করার কারণে অন্য ৩ জনের পক্ষে রোগী দেখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। চিকিৎসক সংকট ছাড়াও নানা সমস্যায় জর্জরিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা মেলে সামান্যই।

খালিয়াজুরি উপজেলাটি বিচ্ছিন্ন হাওরাঞ্চল। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। ২৯৭ দশমিক ৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার ৬ ইউনিয়নে লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস।

জেলার ১০ উপজেলায় ছোটবড় ১৩৪ হাওরের মধ্যে খালিয়াজুরিতেই ৮৯টি। বছরের প্রায় ৭ মাস ওই এলাকায় পানি থাকে। জেলা সদরের সঙ্গে এখন পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। যে কারণে এখানকার অধিবাসীদের অসুখ হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই একমাত্র ভরসা।

কিন্তু গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা এখানে মেলে না। তখন রোগীদের সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তবে সেখানে নিয়ে যাওয়াও সহজে সম্ভব হয় না। বর্ষায় নৌকা বা ইঞ্জিনের নৌকায় যেতে হয়। আর শুকনো মৌসুমে নিতে হয় বাঁশ, চেয়ার অথবা ধান সেদ্ধ করার ড্রামের চাঙারিতে করে।

হাওর অঞ্চল হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন। কিন্তু ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নৌযানটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। উপজেলা পরিষদ অস্থায়ীভাবে একজন চালক দিয়েছে। তবে এই নৌযানটি গভীর পানিপথ ছাড়া চলতে পারে না। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই শুকনো মৌসুমে এটি অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকে।

উদয়পুর গ্রামের বাসিন্দা কলেজের প্রভাষক প্রাণেশ সামন্ত বলেন, চিকিৎসাসেবা পেতে এখানকার মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক কষ্ট করে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেও সেবা পাওয়া যায় না। এখানে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থাও নেই। চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসকও নেই।

খালিয়াজুরি সিদ্দিকুর রহমান বালিকা বিদ্যা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দত্ত রায় বলেন, বর্ষাকালে সরকারি একটি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া আছে। তবে এটি ঠিকমতো চলে না। সব জায়গায় যায় না।

ছড়াকার ও লোকগবেষক সঞ্জয় সরকার বলেন, এখানকার রোগীদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক না থাকা। চিকিৎসক থাকেন পালাক্রমে একজন করে। রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পায় না। পরীক্ষার জন্য জেলা সদরে অথবা ময়মনসিংহ যেতে হয়।

৪ নম্বর নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হরিধন সরকার বলেন, খালিয়াজুরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত রোগীদের কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় এখানকার মানুষ প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

খালিয়াজুরি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আতাউল গণি উসমানী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১৫ জন চিকিৎসকের বিপরীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আমিসহ পাঁচজন আছি। আমাকে প্রশাসন চালাতে হয়। যে কারণে রোগী দেখা সম্ভব হয়ে ওঠে না।’

আতাউল গণি উসমানী আরও বলেন, ‘এখানে দুজন মেডিকেল অফিসার আছেন, তাঁরা রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। অন্য দুজনের মধ্যে একজন ডেন্টাল সার্জন, আরেকজন হলেন আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসার। আমার এখানে ইসিজি ছাড়া পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থাও নেই। ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স চালু আছে। তবে সেটা চালানোর জন্য স্থায়ী কোনো চালক নেই। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় উপজেলা পরিষদ থেকে একজনকে অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত