রেজা করিম ও তানিম আহমেদ, ঢাকা
জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে বিদেশি কূটনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বেড়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থের জায়গা থেকে বিদেশিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে। দূতাবাসগুলোও কাজে লাগায় এমন সুযোগ। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সেই যোগাযোগটা একটু আগেভাগেই শুরু হয়ে গেছে। প্রধান দুই দল–ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করলেও দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় পিছিয়ে নেই কেউই। চলতি বছরের শেষের দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
সর্বশেষ বৈঠকে যোগ দিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসায় গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সঙ্গে ছিলেন দলের পাঁচ নেতা। আর হোয়াইটলির সঙ্গে ছিল ইইউভুক্ত ছয় দেশ–জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অথবা মিশনপ্রধানেরা।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সেখানে আলাপ হয়েছে, এমনটি কোনো লুকোছাপা না করেই স্বীকার করেছেন কাদের ও হোয়াইটলি।
বৈঠকের পর তোলা ছবি যুক্ত করে একটি টুইটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে ইইউ মিশনপ্রধানেরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকটি করেছেন।
জার্মান দূতাবাসের পক্ষ থেকে বৈঠকে যোগ দেন উপরাষ্ট্রদূত জেন জেনোস্কি। তিনি এক টুইটে বলেন, চমকপ্রদ এ বৈঠকটি ক্ষমতাসীন দলের চিন্তার প্রক্রিয়াটি বুঝতে সহায়ক হয়েছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি যোগ দেবে কি না, এমন টানাপোড়েনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বুধবার বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। এই বৈঠকটির পর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকে চমক আছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকেরা।
ডেরেক শোলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব দেন। আর বিনয় কোয়াত্রা শেখ হাসিনার প্রতি ভারত সরকারের পূর্ণ আস্থার কথা জানান। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানান।
সংলাপের তাগিদ
জানা গেছে, কূটনীতিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার জন্য সংলাপের বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগকে। যদিও বিষয়টি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাজনীতিতে সব সময় সংলাপের সম্ভাবনা আছে। তারা আমাদের সঙ্গে বৈঠকে সংলাপ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’ তবে বন্ধু দেশগুলো আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চেয়েছে বলে জানান তিনি।
দেশে সংলাপের পরিবেশই দেখছে না বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংলাপের কোনো পরিবেশ এখন পর্যন্ত নেই। আর হবে বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক সমঝোতার যদি কোনো ইচ্ছা থাকত, এর মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটত।’
দৌড়ঝাঁপের প্রেক্ষাপট
বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের রাজনীতিতে সংকট বা নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা নিয়ে টানাপোড়েনের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সমর্থনকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে অনেক কাল ধরে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে আবারও এ প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
একটি সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, তা বন্ধ করতে এখন তৎপর হয়েছে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। কারণ বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে। বিষয়টি তারা ক্ষমতাসীনদেরও বোঝাতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করছে সূত্রটি।
সূত্রটির আরও দাবি, আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ চায় উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হাওয়া বৈঠেকেও এগুলো আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিতে দলটির নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিএনপিও যাচ্ছে একের পর এক
সরকার পতনের জন্য সমমনাদের নিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি। আন্দোলনের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে তারা। সূত্র বলছে, গত তিন মাসে বিদেশিদের সঙ্গে অন্তত ১০টি বৈঠক করেছে দলটি। বেশির ভাগ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও দেশটির বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
গত ৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রসহ চারটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। ওই বৈঠকে ব্রিটিশ হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক), মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সেলর, কানাডিয়ান হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর এবং ফ্রান্স দূতাবাসের কালচারাল অ্যাটাশে অংশ নেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।
এর আগে ও পরে এ রকম আরও বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৬ জানুয়ারি মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা মি. ম্যাথিউ বের সঙ্গে দেখা করে বিএনপির প্রতিনিধিদল।
সবশেষ ৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) প্রতিনিধি জেমি স্পাইকারম্যান ও আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফরেস্ট কুকসনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। এসব বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সব বিষয়ে সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। সূত্রটি বলছে, এসব বৈঠকে বর্তমান সরকারের সময়ে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যাতে বিশ্বদরবারে ক্ষমতাসীনদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। বৈঠকে নির্বাচন কারচুপিসহ গণতন্ত্র হরণ ও বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য সরকারের ভূমিকাকেও দায়ী করা হয়।
বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছে গত ১৪ নভেম্বর। সেটি ছিল কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলাসের সঙ্গে। এর আগে ৮ নভেম্বর তিনি সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
দুই পক্ষের যুক্তি
গতকালের বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা তাদের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। কোনো ধরনা দিতে নয়। আর আমরা লুকিয়েও যাইনি। আমরা দেখেছি বিএনপি রাতের অন্ধকারে গোপনে দেখা করতে যায়।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে যে গণতন্ত্র নাই। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকলে সব দিক থেকে সংকট তৈরি হয়েছে। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নেই। রাজনীতিতে একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করেছে সরকার, যার প্রভাব সব ক্ষেত্রে পড়েছে—এটাই আমরা বিদেশিদের কাছে বলে আসছি। এখানে বিএনপির চাওয়া এটাই। এর বাইরে তাদের কাছে বিএনপির কিছু চাওয়ার নেই।’
নিজ নিজ স্বার্থে বিদেশমুখী
বিদেশিদের কাছে দৌড়ঝাঁপের বিষয়টিকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না বিশ্লেষকেরা। আস্থাহীনতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থে বিদেশমুখী হয়েছে। এই সুযোগে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাচ্ছেন বিদেশিরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যত দিন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভাজন থাকবে, তত দিন এ থেকে (বিদেশিদের হস্তক্ষেপ) উত্তরণের সুযোগ নেই। বিরোধী দলের বক্তব্য অনেকাংশে পশ্চিমা দেশগুলো গ্রহণ করেছে। গণতন্ত্রের ঘাটতির কারণে তার ভিত্তিও রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে সরকারি দল মনে করছে চুপ করে থাকলে বিরোধী দলের বক্তব্য শতভাগ সত্য বলে প্রমাণিত হবে। সেই হিসাবে তারাও তৎপর।’
জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে বিদেশি কূটনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বেড়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থের জায়গা থেকে বিদেশিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে। দূতাবাসগুলোও কাজে লাগায় এমন সুযোগ। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সেই যোগাযোগটা একটু আগেভাগেই শুরু হয়ে গেছে। প্রধান দুই দল–ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করলেও দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় পিছিয়ে নেই কেউই। চলতি বছরের শেষের দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
সর্বশেষ বৈঠকে যোগ দিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসায় গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সঙ্গে ছিলেন দলের পাঁচ নেতা। আর হোয়াইটলির সঙ্গে ছিল ইইউভুক্ত ছয় দেশ–জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অথবা মিশনপ্রধানেরা।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সেখানে আলাপ হয়েছে, এমনটি কোনো লুকোছাপা না করেই স্বীকার করেছেন কাদের ও হোয়াইটলি।
বৈঠকের পর তোলা ছবি যুক্ত করে একটি টুইটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে ইইউ মিশনপ্রধানেরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকটি করেছেন।
জার্মান দূতাবাসের পক্ষ থেকে বৈঠকে যোগ দেন উপরাষ্ট্রদূত জেন জেনোস্কি। তিনি এক টুইটে বলেন, চমকপ্রদ এ বৈঠকটি ক্ষমতাসীন দলের চিন্তার প্রক্রিয়াটি বুঝতে সহায়ক হয়েছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি যোগ দেবে কি না, এমন টানাপোড়েনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বুধবার বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। এই বৈঠকটির পর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকে চমক আছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকেরা।
ডেরেক শোলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব দেন। আর বিনয় কোয়াত্রা শেখ হাসিনার প্রতি ভারত সরকারের পূর্ণ আস্থার কথা জানান। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানান।
সংলাপের তাগিদ
জানা গেছে, কূটনীতিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার জন্য সংলাপের বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগকে। যদিও বিষয়টি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাজনীতিতে সব সময় সংলাপের সম্ভাবনা আছে। তারা আমাদের সঙ্গে বৈঠকে সংলাপ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’ তবে বন্ধু দেশগুলো আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চেয়েছে বলে জানান তিনি।
দেশে সংলাপের পরিবেশই দেখছে না বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংলাপের কোনো পরিবেশ এখন পর্যন্ত নেই। আর হবে বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক সমঝোতার যদি কোনো ইচ্ছা থাকত, এর মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটত।’
দৌড়ঝাঁপের প্রেক্ষাপট
বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের রাজনীতিতে সংকট বা নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা নিয়ে টানাপোড়েনের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সমর্থনকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে অনেক কাল ধরে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে আবারও এ প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
একটি সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, তা বন্ধ করতে এখন তৎপর হয়েছে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। কারণ বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে। বিষয়টি তারা ক্ষমতাসীনদেরও বোঝাতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করছে সূত্রটি।
সূত্রটির আরও দাবি, আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ চায় উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হাওয়া বৈঠেকেও এগুলো আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিতে দলটির নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিএনপিও যাচ্ছে একের পর এক
সরকার পতনের জন্য সমমনাদের নিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি। আন্দোলনের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে তারা। সূত্র বলছে, গত তিন মাসে বিদেশিদের সঙ্গে অন্তত ১০টি বৈঠক করেছে দলটি। বেশির ভাগ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও দেশটির বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
গত ৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রসহ চারটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। ওই বৈঠকে ব্রিটিশ হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক), মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সেলর, কানাডিয়ান হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর এবং ফ্রান্স দূতাবাসের কালচারাল অ্যাটাশে অংশ নেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।
এর আগে ও পরে এ রকম আরও বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৬ জানুয়ারি মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা মি. ম্যাথিউ বের সঙ্গে দেখা করে বিএনপির প্রতিনিধিদল।
সবশেষ ৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) প্রতিনিধি জেমি স্পাইকারম্যান ও আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফরেস্ট কুকসনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। এসব বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সব বিষয়ে সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। সূত্রটি বলছে, এসব বৈঠকে বর্তমান সরকারের সময়ে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যাতে বিশ্বদরবারে ক্ষমতাসীনদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। বৈঠকে নির্বাচন কারচুপিসহ গণতন্ত্র হরণ ও বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য সরকারের ভূমিকাকেও দায়ী করা হয়।
বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছে গত ১৪ নভেম্বর। সেটি ছিল কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলাসের সঙ্গে। এর আগে ৮ নভেম্বর তিনি সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
দুই পক্ষের যুক্তি
গতকালের বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা তাদের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। কোনো ধরনা দিতে নয়। আর আমরা লুকিয়েও যাইনি। আমরা দেখেছি বিএনপি রাতের অন্ধকারে গোপনে দেখা করতে যায়।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে যে গণতন্ত্র নাই। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকলে সব দিক থেকে সংকট তৈরি হয়েছে। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নেই। রাজনীতিতে একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করেছে সরকার, যার প্রভাব সব ক্ষেত্রে পড়েছে—এটাই আমরা বিদেশিদের কাছে বলে আসছি। এখানে বিএনপির চাওয়া এটাই। এর বাইরে তাদের কাছে বিএনপির কিছু চাওয়ার নেই।’
নিজ নিজ স্বার্থে বিদেশমুখী
বিদেশিদের কাছে দৌড়ঝাঁপের বিষয়টিকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না বিশ্লেষকেরা। আস্থাহীনতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থে বিদেশমুখী হয়েছে। এই সুযোগে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাচ্ছেন বিদেশিরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যত দিন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভাজন থাকবে, তত দিন এ থেকে (বিদেশিদের হস্তক্ষেপ) উত্তরণের সুযোগ নেই। বিরোধী দলের বক্তব্য অনেকাংশে পশ্চিমা দেশগুলো গ্রহণ করেছে। গণতন্ত্রের ঘাটতির কারণে তার ভিত্তিও রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে সরকারি দল মনে করছে চুপ করে থাকলে বিরোধী দলের বক্তব্য শতভাগ সত্য বলে প্রমাণিত হবে। সেই হিসাবে তারাও তৎপর।’
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে