রাবির মাসুদকে নির্যাতন করা হয় কোথায়, প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯: ০৬
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ১৭

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মেডিকেল সেন্টারের স্টোর অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে কোথায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাসুদকে যাঁরা থানায় সোপর্দ করেছিলেন, তাঁরা বলেছিলেন, ৫ আগস্ট ছাত্রদের ওপর হামলায় জড়িত থাকায় মাসুদকে বিনোদপুর বাজারে গণপিটুনি দেওয়া হয়। তবে বিনোদপুর বাজারের বেশ কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা।

কেউ মাসুদের গণপিটুনির ঘটনা দেখেননি। পুলিশের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হয়েছে, তারাও কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পায়নি।
মাসুদ রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি রাজশাহী নগরের বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

অভিযোগ রয়েছে, একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের হামলায় ২০১৪ সালে মাসুদের ডান পা গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাঁ পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল হাতের রগ। পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। এই পরিস্থিতি তুলে ধরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখে রাবির মেডিকেল সেন্টারে চাকরি পান তিনি। গত শনিবার রাতে তাঁকে নির্যাতন করে থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর হাসপাতালে মাসুদ মারা যান। থানায় মাসুদ বলেছিলেন, ‘আমি বিনোদপুরে ওষুধ নিতে এসেছিলাম ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম, ওই জন্য ধরেছে। কিন্তু আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগ-টগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি ভাই।’

ওই রাতে শিক্ষার্থী যাঁরা মাসুদকে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যান, তাঁরা পুলিশকে জানান, মাসুদ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাই বিনোদপুর বাজারে তাঁকে শিক্ষার্থীরা গণপিটুনি দিয়েছেন। 

এ কথার ভিত্তিতে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল, বিনোদপুর বাজারেই তাঁকে মারধর করা হয়। কিন্তু বিনোদপুর বাজারে ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘কোথায় তাঁকে নির্যাতন করা হয়, সে প্রশ্ন আমাদেরও। বিনোদপুর বাজারে এমন ঘটনা আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। বাজার থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত কোথায় নির্যাতন করা হতে পারে। সেটি আমরা তদন্ত করছি। এখনই এ বিষয়গুলো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।’ 

এদিকে বিনোদপুর বাজারের বেশ কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। কিন্তু কেউ এ ধরনের ঘটনা দেখেননি বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

কোথায় তাঁকে নির্যাতন করা হয়, সে প্রশ্ন আমাদেরও। বিনোদপুর বাজারে এমন ঘটনা আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। বাজার থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত কোথাও নির্যাতন করা হতে পারে। হেমায়েতুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) 

মাসুদ মারা যাওয়ার পর বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। ‘গণপিটুনিতে’ মাসুদের মৃত্যু হয়েছে এমনটি না বলার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, মাসুদ সদ্যোজাত কন্যার জন্য ওষুধ কিনতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। ঠিক সেই সময়েই সংঘবদ্ধভাবে হামলার শিকার হন মাসুদ। প্রথমে তাঁকে বস্তায় ভরে পেটানো হয়। এরপর থানায় নিয়ে তাঁকে ফেলে রাখা হয়। এটা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ড।

মাসুদের মা তাসিনুর বেগমের অভিযোগ, ২০১৪ সালে যারা মাসুদকে পঙ্গু করেছিল, তারাই পরিকল্পিতভাবে মাসুদের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
মাসুদের মৃত্যুর দুই দিন পার হলেও এ নিয়ে কোনো মামলা হয়নি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এখনো নীরব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় কোনো কথা বলেননি নবনিযুক্ত উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। সাংবাদিকদের ফোনও ধরছেন না তিনি। হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা করার জন্য আমরা মাসুদের শ্বশুরকে ডেকেছিলাম। তিনি মামলা করতে রাজি হননি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত