ঢাকা নগর পরিবহন: পাইলট প্রকল্পই ধুঁকছে

সৌগত বসু, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২: ৫১

ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও যাত্রী ভোগান্তি কমাতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু হয় ঢাকা নগর পরিবহনের। পরিকল্পনা ছিল ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ রাজধানীকে একটি কোম্পানির আওতায় আনা। রুট র‍্যাশেনালাইজেশনের অধীনে এখন তিনটি রুটে চলছে নগর পরিবহন। এটি পাইলট বা পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে চালু হলেও দুই বছরে পুরোপুরি সফলতা আসেনি। উল্টো প্রকল্পই ধুঁকছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি বাসের অবৈধ চলাচল আর সঠিক নজরদারির অভাবে প্রকল্পটি নিয়ে আগানো যাচ্ছে না। এর বাইরে বড় বাধা বাসমালিকদের বিরোধিতা। কখনো লাভ না হওয়া আবার কখনো ভাড়া বাড়ানোর অজুহাতে বাস চালাতে টালবাহানা করেন তাঁরা। এর বাইরে ফিটনেসবিহীন পুরোনো বাস, পারমিটবিহীন অন্য রুটের বাস জড়ো করে ঢাকা নগর পরিবহনের বাসে যাত্রী আটকানোর কৌশল এখন প্রতিদিনের ঘটনা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) থেকেও কিছু রুটে বাস পাচ্ছে না নগর পরিবহন প্রকল্প। ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথোরিটি (ডিটিসিএ) জানিয়েছে, তিন রুটে নগর পরিবহনের ৮৫টি বাস চলছে। ২১ নম্বরে বিআরটিসির ৩০টি, ২২ নম্বরে অভি মোটর্সের ৩০ এবং ২৬ নম্বর রুটে বিআরটিসির ২৫টি বাস চলছে।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁদের বাস বাড়ানোর সক্ষমতা আছে। তবে যাত্রী না থাকায় লাভ হচ্ছে না। এ জন্য সংখ্যা কমানো হয়েছে। লাভ ছাড়া তো চলা যাবে না। যদি যাত্রী বাড়ে তবে বাস বাড়বে। এ ছাড়া এসব রুটে অন্য পরিবহনের বাস চলে, যা চলার কথা নয়।’

বর্তমানে তিন রুটে নগর পরিবহনের বাইরেও চলছে অনেক কোম্পানির বাস। এসব প্রকল্পের আওতায় না থাকলেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না সঠিক নজরদারির অভাবে। ফলে পুরো প্রকল্পই আটকে আছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২১ নম্বর রুটে (ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-জিগাতলা-প্রেসক্লাব-মতিঝিল-যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর) পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে প্রথম বাস সেবা শুরু হয়। বিআরটিসির ৩০টি দ্বিতল এবং ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ২০টি দিয়ে এই রুট চালু হওয়ার কথা ছিল। পরে দুই মাসের মধ্যে এতে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল ১০০টি বাস। তবে দীর্ঘ সময়ে এই রুট ৫০টিরও মুখ দেখেনি, ট্রান্স সিলভা এখন আর নেই। ২২ নম্বর রুটে চলে অভি মোটর্সের বাস। এই রুটে তাদের ৫০টি চলার কথা থাকলেও শুরু হয়েছিল ৩০টি দিয়ে। তা না বেড়ে উল্টো কমে দাঁড়িয়েছে ২০টিতে। ২৬ নম্বর রুটে বিআরটিসির ৫০টি দ্বিতল বাস দেওয়ার কথা ছিল। তবে চলছে সর্বোচ্চ ২৫টি।

সূত্রমতে, নগর পরিবহনে বর্তমানে ৫৪টি রুটকে সমন্বয় করে ৮টি রুটে (নম্বর ২১ থেকে ২৮) পরিণত করা হয়েছে। এটি দেখভাল করছে ডিটিসিএ। বিআরটিসির কাছে বাস চেয়েও পায়নি ডিটিসিএ। ২১ নম্বর রুটের জন্য বাস চাওয়া হলে বিআরটিসি না থাকার অজুহাতে দেয়নি। বর্তমানে বিআরটিসির ৪০টি দুই রুটে চলছে। এ ছাড়া ২৪, ২৫, ২৭ ও ২৮ নম্বর রুটে ১০০টি নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিটিসিএ ১০০টি, ৪টি রুটে পরিচালনার জন্য আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তবে তাতে আগ্রহ নেই বাসমালিকদের।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তাঁদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। লাভ না থাকায় মালিকেরা সেখানে বিনিয়োগ করতে চাইছেন না।’

প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, ‘অবৈধ বাসের দৌরাত্ম্যে নগর পরিবহন সফল হতে পারছে না। আমাদের পরিবহন সেবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় সমস্যা রয়েছে। দক্ষ জনবল ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তার সংখ্যা অপ্রতুল।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত