ঠান্ডায় চরম ভোগান্তিতে তেঁতুলিয়ার চা-শ্রমিকেরা

মো. রনি মিয়াজী, তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়)
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ৫৮

দেশের সর্ব উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে ঘন কুয়াশা। বৃষ্টির মতো ঝরা কুয়াশায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের। বিশেষ করে চা-বাগানের শ্রমিকেরা তাঁদের নির্ধারিত সময় রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কোনো কাজ করতে পারছেন না।

গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ শ্রমিক কুয়াশা হ্রাস পাওয়ার অপেক্ষায় বসে থেকে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করে নিচ্ছেন। কেউ কেউ পেটের দায়ে ঠান্ডার মধ্যেই পাতা তোলার কাজ করছেন। এই কাজ করতে গিয়ে তাঁদের আবার গরম পোশাক ছেড়ে পাতলা কাপড় পরে থাকতে হচ্ছে। কারণ, চা-পাতায় লেগে থাকা কুয়াশায় শরীর ভিজে যায়।

শ্রমিকেরা জানান, এসব বাগানে চা-পাতা তোলার জন্য তাঁরা রাত দুইটা থেকে ভোরের মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন এবং বেলা ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে তোলা পাতা গাড়িতে বোঝাই দিয়ে বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু কয়েক দিনে তাঁদের এই নিয়মে ছন্দপতন ঘটেছে। সন্ধ্যার পর থেকে হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁরা সময়মতো কাজে যেতে পারছেন না।

শ্রমিকেরা বলছেন, এখন তাঁরা অল্প সময় কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় তাঁদের আয় কমে গেছে। সেই সঙ্গে প্রতিবছর এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ হলেও তাঁরা তা তেমন পান না। কেউ তাঁদের খোঁজখবর রাখেন না। এ নিয়ে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

কালান্দীগছ এলাকার চা-শ্রমিক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘কনকনে শীতের সঙ্গে বাতাস ও শিশির থাকায় আমরা আগের মতো কাজ করতে পারছি না। সূর্যের আলো বা ভালো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’

একই কথা বলেন জহিরুল ইসলাম নামের আরেক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে ভোর থেকে শীতের মধ্যে পাতা কাটছি।অনেক কষ্ট হলেও বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে। কাজ না করলে তো না খেয়ে থাকতে হবে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে ভজনপুরের শ্রমিক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমরা চা-শ্রমিক হলেও সরকার, চা বোর্ড কিংবা মালিকদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাই না। সরকার এত কম্বল দেয় অথচ আমরা তা চোখেও দেখি না।’

তবে চাচাষি ইলিয়াস হোসেন বকুল বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর ধরে চা-পাতার ন্যায্য দাম পাই না। ফলে লোকসানে পড়ছি। এ মাসেই চা-পাতা সংগ্রহ বন্ধ হবে। আবার চালু হবে পয়লা মার্চ থেকে। আমরা যতটুকু পারি শ্রমিকদের সহযোগিতা করি। সরকারিভাবে যদি তাঁদের সহযোগিতা করা হয়, শীতবস্ত্র দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা অনেক উপকৃত হবেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘তেঁতুলিয়ায় প্রতিবছর শীতের প্রকোপ বেশি থাকে। শীতার্ত মানুষেরা যেন দুর্ভোগে না পড়েন তাই শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছি। পাথর ও চা-শ্রমিকদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত