Ajker Patrika

কুঁচিয়ায় হাসি ৫০০ পরিবারের

মো. শামীমুল ইসলাম, আগৈলঝাড়া
আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১৪: ০২
কুঁচিয়ায় হাসি ৫০০ পরিবারের

আগৈলঝাড়ায় বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়া চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছে অন্তত ৫০০ পরিবার। উপজেলার তিনটি স্থানে কুঁচিয়া চাষের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে চাষিদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে এবং স্থান নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে।

জানা যায়, শুধু আগৈলঝাড়া উপজেলা থেকে প্রতিবছর ১০-১২ কোটি টাকার কুঁচিয়া রপ্তানি করা হয়। কুঁচিয়া শিকার করে পাঁচ শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে।

কুঁচিয়া শিকারি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলায় প্রায় ১৫ বছর আগে কুঁচিয়া শিকার এবং ব্যবসা শুরু হয়। এই উপজেলার সুশীল মণ্ডল, জয়দেব মণ্ডল, অর্জুন মণ্ডল, জহর মণ্ডল, ভীম মণ্ডল ও প্রদীপ বাড়ৈ কুঁচিয়া ব্যবসা করে আসছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ আগে মাছ এবং কচ্ছপের ব্যবসা করতেন, কেউবা ছিলেন বেকার। ব্যবসার জন্য ঢাকা আসা-যাওয়ার সূত্রে যোগাযোগ হয় ঢাকার উত্তরা, টঙ্গীর কামারপাড়া ও নলভোগ এলাকার অর্কিড ট্রেডিং করপোরেশন, আঞ্জুম ইন্টারন্যাশনাল, গাজী এন্টারপ্রাইজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কুঁচিয়া রপ্তানি হয়।

এসব প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কুঁচিয়া ব্যবসা সম্প্রসারণ করার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাদনে টাকা দেয়। প্রথমে কুঁচিয়া ব্যবসা শুরু হয় সুশীল মণ্ডলের মাধ্যমে। এখন কুঁচিয়া শিকারে জড়িত রয়েছে প্রায় ৫০০ পরিবার।

কুঁচিয়া ব্যবসায়ী প্রদীপ বাড়ৈর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগৈলঝাড়ায় কুঁচিয়া শিকারের সঙ্গে স্থানীয় মানুষ ছাড়াও জড়িত ময়মনসিংহ এলাকার যুবকেরা। জীবিকার প্রয়োজনে তাঁরা কুঁচিয়া শিকার করেন। এই কাজ করে দিনমজুর এসব মানুষ আগের চেয়ে এখন ভালো আছে।

কুঁচিয়া ব্যবসায়ী সুশীল মণ্ডল জানান, তিনটি কৌশলে কুঁচিয়া শিকার করা হয়। প্রথমত, গর্তের ভেতরে হাত বা লাঠি দিয়ে। দ্বিতীয়ত, গর্তের মুখে বড়শি দিয়ে এবং তৃতীয়ত, মাছ ধরা চাঁইয়ের ভেতরে খাবার দিয়ে। শিকার করা কুঁচিয়া প্রতি শনিবার ছয়টি আড়তে বিক্রি করা হয়। আড়তগুলোর মধ্যে আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে দুটি, গৈলায় তিনটি এবং ঐচারমাঠে একটি। প্রতি কেজি কুঁচিয়া বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। সে হিসাবে প্রতি মণের মূল্য দাঁড়ায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা।

আগৈলঝাড়ার ছয়টি আড়ত থেকে প্রতি সপ্তাহে ৭-৮ টন এবং মাসে ২৮-৩০ টন কুঁচিয়া ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মূল্য দাঁড়ায় ৭০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা। ঢাকার প্রতিষ্ঠানগুলো এই কুঁচিয়া কিনে রপ্তানি করে।

উপজেলার গৈলা গ্রামের সুশীল মণ্ডল বলেন, ‘আগে আমি মাছ এবং কচ্ছপের ব্যবসা করতাম। বর্তমানে কুঁচিয়ার ব্যবসা করে ভালো আছি।’ জয়দেব মণ্ডল আরও বলেন, ‘কুঁচিয়া শিকারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের উপার্জন ভালো এবং তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন। সরকার যদি এই খাতে আমাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করত তাহলে দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি থাকতে হতো না। সরকার আরও বেশি রাজস্ব পেত।’

বাংলাদেশ লাইট অ্যান্ড জিলড ফুড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আঞ্জুম ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. শিহাব উদ্দিন জানান, তাঁরা আগৈলঝাড়া থেকে প্রতি সপ্তাহে ৭-৮ টন কুঁচিয়া সংগ্রহ করেন। আর সারা দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয় সপ্তাহে প্রায় ১০০ টন। এসব কুঁচিয়ার ৯০ শতাংশ রপ্তানি হয় চীনে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানান, আগৈলঝাড়ায় প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রদর্শনীর জন্য তিনটি স্থান নির্ধারণের কাজ চলছে। কুঁচিয়া চাষের জন্য আগৈলঝাড়া উপজেলা এবং কাঁকড়া চাষের জন্য ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং পিরোজপুর জেলা নির্ধারণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ভিসা নীতি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে: বলছেন কূটনীতিকেরা

বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ছাত্রদল ও এনসিপি

ফাইনালে ভারতের ‘যম’কে খেলানো নিয়ে দোটানায় নিউজিল্যান্ড

ফেরত পাঠাতে ৫০০ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র

নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্‌রীরের মিছিল, পুলিশের টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত