বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে শরীয়তপুরে মেলা

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০৬: ৪৭
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৮: ১৬

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে শরীয়তপুরে চলছে মেলা। জেলা শহরের প্রেমতলা এলাকার শরীয়তপুর-নড়িয়া সড়কের পাশে চলমান ৫ দিনব্যাপী মেলায় প্রতিদিন ভিড় করছে হাজারো দর্শনার্থী। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মাস্ক বিহীন ঘুরছে দর্শনার্থীরা। এতে করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনার মধ্যে এমন আয়োজনে হতবাক স্থানীয়রা।

মেলার আয়োজক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুরেশ্বর দরবার শরিফের জামাল নুড়ির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সুরেশ্বরীর স্মরণে সপ্তাহ ব্যাপী বার্ষিক ওরস শরিফ আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, বাউল সংগীত ও ৫ দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। ১৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে মেলা চলবে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত। সুরেশ্বর দরবারের শরিফের খলিফা আবদুল আলী সুরেশ্বরী ও তাঁর অনুসারীরা এ মেলার আয়োজন করেন। আয়োজকদের সঙ্গে দেড় লাখ টাকা চুক্তিতে মেলা পরিচালনা করছেন স্থানীয় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মো. তৈয়বুর রহমান।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন গতকাল শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মেলার জন্য নির্ধারিত মাঠে ৬০ থেকে ৭০টি অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। মেলার প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আগত দর্শনার্থীদের অধিকাংশের মুখে নেই মাস্ক। বিনোদনের জন্য নির্মিত বিভিন্ন রাইডে চড়ছে অভিভাবক ও শিশুরা।

জাজিরা থেকে মেলায় ঘুরতে আসেন জান্নাতুল ফেরদৌসী। কাপড় দিয়ে নিজে মুখ ঢাকলেও সঙ্গে থাকা ২ শিশুর মুখে মাস্ক নেই। তিনি বলেন, ‘শরীয়তপুরে বিনোদনের তেমন কোনো স্থান নেই। দীর্ঘদিন পর হলেও একটু বিনোদনের জন্য ছেলে মেয়ে ও পরিবার নিয়ে মেলায় বেড়াতে এসেছি।’ মাস্ক না পরিয়ে শিশুদের আনা ঠিক হয়নি তিনি জানান।

মেলায় আচারের দোকান দিয়েছেন মো. সিরাজ হাওলাদার। দোকানে ৪ কর্মচারীর কারও মুখে মাস্ক নেই। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। পেটের তাগিদে এখানে এসেছি। এখন মাস্ক কিনে এনে সবাই পরব।’

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘করোনাভাইরাস মানুষের দেহে বসবাস করে। যা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তা ছাড়া করোনার ওমিক্রন ধরনটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরনের জনসমাগমের কারণে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’

মেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকা আয়োজকদের দেওয়া হচ্ছে।’ তবে প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি জানা বলে জানান। মূল আয়োজক আব্দুল আলী সুরেশ্বরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে আয়োজক আব্দুল আলী সুরেশ্বরীরকে পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকতার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর মেলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সীমিত পরিসরে ইসলামি জলশার নামে মেলা পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই মুঠোফোনে বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে রয়েছি। তবে এ সময়ে মেলা আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই। আর কেউ অনুমতি নেয়নি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত