লালমনিরহাট-২: পারিবারিক দ্বন্দ্বে নাকাল দুই দল

আনিছুর রহমান লাডলা, লালমনিরহাট ও তিতাস আলম, কালীগঞ্জ
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৪: ২২

সীমান্তঘেঁষা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-২ আসন। দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির (জাপা) ‘রাজত্ব’ ছিল এই আসনে। এখান থেকে প্রথমে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হওয়া মজিবুর রহমান পরে যোগ দেন জাপায়। জাপার টিকিটেই ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা এমপি নির্বাচিত হন তিনি (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া)। তবে জাপা সেই জৌলুশ হারিয়েছে। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে কমবেশি কোন্দল স্পষ্ট। নেতৃত্ব নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব অনেকটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দলীয় কর্মকাণ্ড দেখা না গেলেও ভেতরে-ভেতরে জামায়াতে ইসলামীও সুসংগঠিত হচ্ছে।

২০১৪ সালে জাপার ঘাঁটিতে হানা দেয় আওয়ামী লীগ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান নুরুজ্জামান আহমেদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়লাভ করেন এই নেতা। এরপর নুরুজ্জামান আহমেদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে নুরুজ্জামান আহমেদ এবং তাঁর ছোট ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুজ্জামান আহমেদের স্ত্রী এবং উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজেদা জামান আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তুষভান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন।

পরে ‘নৌকা’ না পেয়ে সাজেদা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। পাশাপাশি ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে’ মাহবুবুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সবকিছু মিলিয়ে মন্ত্রী ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। আগামী নির্বাচনে নুরুজ্জামান আহমেদের পাশাপাশি তাঁর ভাই মাহবুবুজ্জামানও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

অপরদিকে সম্প্রতি আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সেখানেও দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব। আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস ফারুক এবং তাঁর ছোট ভাই কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান চিশতির নেতৃত্বে একটি অংশ বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। এ ছাড়া কেন্দ্রঘোষিত কমিটির বিপরীতে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের পাল্টা কমিটি ঘোষণা দিয়েছে তারা।

এই আসনে আদিতমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম এবারও নৌকার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজু দাবি করেন, ‘এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় কোন্দল বা দ্বন্দ্ব নেই। এখানকার একক প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদ।

 তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আগামী নির্বাচনে তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।’

এদিকে আদিতমারী উপজেলা বিএনপিতে তেমন দ্বন্দ্ব না থাকলেও কালীগঞ্জে রয়েছে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব। জেলা বিএনপির সহসভাপতি রোকন উদ্দিন বাবুল এবং তাঁর চাচাতো ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের দ্বন্দ্ব অনেকটাই প্রকাশ্য। দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই উপজেলা বিএনপির রাজনীতি। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে দুই ভাই এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। 

দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের কারণে বিভক্ত বিএনপিকে একত্র করতে সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালেহ উদ্দিন আহমেদ হেলালকে মনোনয়ন দেওয়া দরকার বলে মনে করে দলের একটি অংশ। কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার হলে আওয়ামী লীগকে মানুষ ভোট দেবে না। বিএনপিকে ভোট দিয়ে জয়ী করবে।’

আসনটিতে টানা ছয়বার জাপা থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি মজিবুর রহমান মারা যাওয়ার পর দলটির অবস্থা নাজুক। নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। তারপরও পুরোনো আসন ফিরে পেতে চায় দলটি। কালীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহ সুলতান নাসিরুদ্দিন আহম্মেদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো শুরু করেছেন। সাবেক এমপি মরহুম মজিবুর রহমানের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম কামাল আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলার সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন।

জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্যে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চোখে না পড়লেও ভেতরে-ভেতরে তারা অনেকটাই সুসংগঠিত। দলটি এখানে জোটগত নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত