পানি নামলেও দুর্ভোগ বাড়ছে

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২২, ০৭: ৩৪
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ১০: ৩০

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। বর্তমানে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি নামলেও দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রায় এক হাজার কাঁচা ঘরবাড়ির বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শতাধিক বসতভিটার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট। শ্রমজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দী থাকায় ঘরে যে অবশিষ্ট খাবার ছিল, তা-ও শেষ হয়ে গেছে। জেলা পৌর শহরে ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে চার শতাধিক পরিবার এখনো অবস্থান করছে। বসতভিটা থেকে পানি নামলেও ঘরের অবস্থা নাজুক থাকায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না নিম্ন আয়ের এসব পরিবার। আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্যসহায়তাও অপ্রতুল।

ধীরগতিতে পানি নামায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের তিন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা দুর্ভোগে রয়েছে। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, অন্তত ৬০টি পরিবার অবস্থান করছে। বন্যার পানিতে ঘরের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় পানি নামার পরও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন তাঁরা।

কুলসুমা বেগম বলেন, ‘বন্যার পনিতে আমার ঘরের এক অংশ ভাইঙ্গা গেছে, কেমনে যাইতাম ঘরো? চার দিন ধইরা আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। এখন পর্যন্ত এক কেজি চিড়া ছাড়া আর কিচ্ছু পাইছি না।’

সদর উপজেলার পূর্ব সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা আছমা আক্তার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন পাঁচ দিন ধরে। ঘরের পানি নেমে গেলেও ঘরে যাচ্ছেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘরো যাওয়ার মতো অবস্থা নাই। আমার ঘর ঢেউয়ে ভাইঙ্গা ফালাইছে।’

আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া খোদেজা আক্তার আক্ষেপ করে বলেন, ‘তারা (প্রশাসন) যে কলেজো আশ্রয় দিছে, ইটাই বেশি। খাওন না দিলে তো জোর করতাম পারতাম না। যে খাওন দিছে, তা দুই বেলা কোনোরকম খাওন যাইব। আমি ইকানো আইছি সাত দিন ওইছে।’

বন্যাকবলিতদের তুলনায় খাদ্য অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করেন পৌর মেয়র নাদের বখত। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করছি একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করতে।’

মেয়র আরও বলেন, ‘আমাদের সরকারপ্রধান সুনামগঞ্জের জন্য যথেষ্ট দিচ্ছেন। আশা করি নিম্ন আয়ের মানুষদের ঘরবাড়ির যে ক্ষতি হয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের জন্য আরও সহায়তা আমরা পাব।’

পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন আহম্মদ হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালগুলো ছাড়াও আমরা ক্যাম্প করে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জের চার উপজেলায় বন্যাকবলিতদের মাঝে এখন পর্যন্ত ১৬৫ মেট্রিক টন চাল, ২০ লাখ টাকা ও ছয় হাজার প্যাকেট শুষ্ক খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় সাড়ে ৭ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যায় জেলায় এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন অভ্যন্তরীণ প্রায় ১৫০ কিলোমিটার সড়ক ও ছোট-বড় ১০টি কালভার্ট ক্ষতি হয়েছে। ফলে পানি নেমে গেলেও মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে আরও কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ণয় করা সম্ভব হবে। তখন আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেব সড়ক সংস্কারের জন্য।’

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, জেলার ২০ হাজার ৪৬৯টি মাছের পুকুরের মধ্যে ১ হাজার ২৫০ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ১৬ হাজার ৫০০ খামারির মধ্যে ১ হাজার ১০০ খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় তিন কোটি টাকার বড় মাছ, ৩০ লাখ টাকার পোনা মাছ ভেসে গেছে। ১২ লাখ টাকার অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘যেসব নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সবাইকে পুনর্বাসনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দেব। অন্য সব দপ্তরের ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করার জন্য বলা হয়েছে। যার অধীনে যা ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত সংস্কার ও পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা নিতে পত্র লেখা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত