বাউলি ঠেকাতে যানের গতিতে রাশ

সৌগত বসু, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ১২: ৫৮

দুর্ঘটনা রোধে ৯ বছর আগে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে বাসসহ যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করেছিল জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল। প্রজ্ঞাপন হলেও মানা হয়নি সেই গতিসীমা। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এখনো অতিরিক্ত গতি। বাসের নৃত্য (বাউলি), গতির প্রতিযোগিতায় আতঙ্কে থাকেন যাত্রী, পথচারী।

এবার সারা দেশে সড়কে গতির রাশ টানতে নতুন নীতিমালা করেছে সরকার। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এক্সপ্রেসওয়ে, মহাসড়কে প্রাইভেট কার, বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার। রাজধানীসহ সব মহানগরে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৪০ কিলোমিটার। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সুপারিশে গতকাল বুধবার এই নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণকে ইতিবাচক বললেও দূরপাল্লার বাসচালকেরা বলছেন, যানজটে নষ্ট হওয়া সময় পোষাতে প্রশস্ত সড়কে গতিসীমা মানার উপায় থাকে না। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে তাঁরা চাপে থাকেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৫ সালের প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা চালকদের অসহযোগিতায় ব্যর্থ হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে ‘বাউলি’ ও গতির প্রতিযোগিতা রুখতে কার্যকর ব্যবস্থাপনা করাটা সবচেয়ে জরুরি। আইন মানতে চালকদের বাধ্য করতে হবে। তা না হলে সড়ক নিরাপদ হবে না।

বিআরটিএর রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জানান, গতকাল থেকেই এই নীতিমালা কার্যকর করা হয়েছে।

এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি, মাইক্রোবাস, বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার, মোটরসাইকেলের ৬০ এবং ট্রাকের ৫০ কিলোমিটার।সিটি করপোরেশন এলাকায় গাড়ি-বাস-মিনিবাসের সর্বোচ্চ গতি ৪০ এবং মোটরসাইকেল ও ট্রাকের ৩০ কিলোমিটার। অন্যান্য যানবাহনের ৪০ কিলোমিটার। গতিসীমা লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অমান্যকারীর তিন মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এ শ্রেণির জাতীয় মহাসড়কে গাড়ি, বাস-মিনিবাস, ট্রাকের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে এক্সপ্রেসওয়ের অনুরূপ। তবে মোটরসাইকেল ও আর্টিকুলেটেড লরির সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০ কিলোমিটার। বি শ্রেণির জাতীয় সড়কে গাড়ি, বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ গতি হবে ৭০ কিলোমিটার, মোটরসাইকেলের ৫০ কিলোমিটার এবং ট্রাক ও আর্টিকুলেটেড লরির ৪৫ কিলোমিটার। জেলা সড়কে গাড়ি, বাস ও মিনিবাসের ৬০ কিলোমিটার, মোটরসাইকেল ৫০ এবং ট্রাকের ও আর্টিকুলেটেড লরির গতি ৪০ কিলোমিটার করা হয়েছে। গাইডলাইনে উপজেলা ও গ্রামের রাস্তার গতিসীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে। 

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দুটি দুর্ঘটনার পর সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার করা হলেও অনেকে মানছেন না। গতির জন্য এক্সপ্রেসওয়ে করে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে গতিবেগ নির্ধারণ করা হলে আইন অমান্যের প্রবণতা বাড়বে।

২০১৫ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভায় অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে যানবাহনে ‘স্পিড গভর্নর’ যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। ওই সভায় কাউন্সিল সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করলেও মহাসড়কে চালকদের তা মানতে দেখা যায়নি। এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কসহ বিভিন্ন জাতীয় মহাসড়কে অনেক বাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে চলে। চালকদের আগে যাওয়ার জন্য গতির প্রতিযোগিতায় নামা নৈমিত্তিক দৃশ্য। এমনকি রাজধানীর বিভিন্ন উড়ালসড়ক, বিমানবন্দর সড়ক, ৩০০ ফুট সড়কেও গতির ঝড় তোলেন গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চালকেরা।

গতিসীমা নির্ধারণের বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, তাঁরা এই নীতিমালাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন।
তবে মহাখালী টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, মহাসড়কে গতির চেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করে তিন চাকার যান ও পথচারী। তাঁরা বাসের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার বেঁধে দিয়েছেন। চালকেরা চাইলেও এর বেশি গতি দিতে পারবেন না।

অবশ্য বেশির ভাগ পরিবহন কোম্পানির বাসেই এমন গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। সেগুলো চলে চালকদের ইচ্ছামাফিক গতিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালকদের গতির প্রতিযোগিতার নানা ভিডিও ছড়িয়ে আছে।

ঢাকা থেকে পাটুরিয়া হয়ে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গায় চলা একাধিক বাসের চালক বলেন, তাঁরা সব সময় গতিসীমার মধ্যেই থাকতে চান। কিন্তু পথে যানজটে পড়লে বা অন্য কোনো কারণে দেরি হলে তাঁরা নির্ধারিত সময় গন্তব্যে যেতে গতি বাড়ান। বেশির ভাগ সময় যাত্রীরাই উসকানি দেন।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচলকারী একটি বাসের চালক বলেন, এই এক্সপ্রেসওয়ে যেভাবে বানানো হয়েছে, তাতে গতি এর চেয়ে বেশি দেওয়া যায়। কিন্তু সব সময় গতিসীমা মানা যায় না।

বিআরটিএ বলছে, গতিসীমা নির্ধারণ করা থাকলেও সব ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। এত দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে গতিসীমা থাকলেও অন্যান্য সড়কে ছিল না। এবার সব শ্রেণির সড়কে মোটরযানের গতিসীমা নির্ধারণ করতে গতিসীমা ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেছিলেন, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৪-এর উপধারা ১ অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণির সড়কে মোটরযানের গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ব্যবস্থাপনা দরকার, তা নিয়ে কেউ কথা বলছে না। নিরবচ্ছিন্ন চলার ব্যবস্থা না করে গতি কমানো হিতে বিপরীত হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত