Ajker Patrika

নৌকা সমর্থকদের সহায়তা বন্ধ

শিমুল চৌধুরী, ভোলা
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ২৪
নৌকা সমর্থকদের সহায়তা বন্ধ

তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নৌকার সমর্থন করায় ভোলার মনপুরায় প্রায় ২০০ ভিজিডি কার্ডধারী পরিবারের চাল বন্ধ করে দিয়েছেন নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার। ওই সব পরিবারগুলোর কাছ থেকে ভিজিডির কার্ডও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বদলে ফেলা হয়েছে পরিষদের চাল প্রত্যাশিতদের নামের মাস্টাররোল। এই অভিযোগ তদন্তে গত সোমবার থেকে মাঠে নেমেছেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর দুস্থ ও অসহায় পরিবারগুলোর মধ্যে মাসিক ৩০ কেজি হারে বিনা মূল্যে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ ও ২০২২ চক্র (পঞ্জিকাবর্ষ অনুযায়ী) ভোলার মনপুরা উপজেলার ২ নম্বর হাজিরহাট ইউনিয়নের প্রায় ৮০৮টি পরিবারকে ভিজিডি কার্ডের আওতায় আনা হয়। এমনকি জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৫ মাসের চালও ওই সব কার্ডধারী পরিবারের মাঝে বণ্টনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ ইউনিয়নটিতে নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার চাল বঞ্চিত রয়েছেন কার্ডধারী দুই শতাধিক পরিবার।

ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দাসেরহাট গ্রামের বাসিন্দা শাহেদ আলীর স্ত্রী শারমিন বেগম বলেন, ‘গেল চেয়ারম্যান দিপক চৌধুরীর সময়ে আমাদের পরিবারকে একটি ভিজিডি কার্ড দেয়। ওই কার্ডে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ঠিকভাবেই আমরা চাল পেয়েছি। কিন্তু নতুন চেয়ারম্যান আসার পর থেকে আমরা প্রায় ৬ মাসের চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমাদের ওয়ার্ডেরই বহু মানুষ এই কার্ডের মাধ্যমে চাল পেলেও আমাদের চাল দেননি। এমনকি চাল দেওয়ার কথা বলে পরিষদে নিয়ে আমাদের অনেকেরই কার্ড কেড়ে নিয়েছেন।’

তাদের মতো ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুলসুম, ১ নম্বর ওয়ার্ডের জোসনা রাণী দাস, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আকলিমা আক্তার, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাসিনা বেগম, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জিন্নাত আরাসহ প্রায় দুই শতাধিক ভিজিডি কার্ডধারী চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এমনকি প্রত্যেক পরিবারকে চাল দেওয়ার কথা বলে পরিষদে নিয়ে তাদের ভিজিডি কার্ড আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে।

তবে অনুমোদনহীন কার্ডে স্বাক্ষর দিয়ে চাল দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যানের কথার বাইরে আমি কিছু করিনি। এ ছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান আমাকে কার্ড রাখার নির্দেশ দেওয়াতে আমি সকলকে বলেছি তাদের কার্ড জমা দিতে। সেই মোতাবেক কেউ কেউ জমা দিলেও বেশির ভাগ মানুষই তাদের কার্ড জমা দেননি।’

এদিকে টানা পাঁচ মাসের চাল পাওয়ার দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ইউনিয়নটির চর ফৈজুদ্দিনের প্রধান সড়কে মানববন্ধন করেন। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুন্নবী বলেন, ‘বর্তমানে যারা চাল পাননি, তাদের কার্ডে কিংবা কোনো কিছুতেই সমস্যা নেই। সমস্যা শুধু একটাই তারা নৌকার প্রার্থীর সমর্থন করেছেন। এ কারণে আনারস প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী নিজাম উদ্দিন চেয়ারম্যান হয়ে নৌকার সমর্থকদের বিভিন্নভাবে ভোগান্তির মধ্যে ফেলছেন। বঞ্চিত করছেন ইউনিয়নের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে।’

নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলার সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। অধিকাংশ কার্ডের নামের সঙ্গে অনলাইন তালিকায় গরমিল থাকার কারণে ওই সব কার্ড জব্দ করা হয়েছে।’

মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিম মিঞা মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক ভিজিডি কার্ডে ফ্লুইড ও ঘষামাজা দিয়ে নাম লেখা রয়েছে। অনেক কার্ডে আবার আমার স্বাক্ষর নেই। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি অনলাইনে ত্রুটির কথা বলেন।’ ইউএনও বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গতকাল (গত সোমবার) উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা ও পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তাকে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম খুঁজে পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত