উবায়দুল্লাহ বাদল, ঢাকা
অংশীজনদের মতামতের জন্য উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া উন্মুক্ত করার পর থেকেই প্রস্তাবিত আইনটির বেশ কিছু ধারা নিয়ে সুশীল সমাজসহ দেশি-বিদেশি নানা মহল থেকে আপত্তি উঠেছে। কিন্তু এসব আপত্তির মূল দিকগুলো উপেক্ষা করেই আইনটির চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই খসড়াটি যাচাই-বাছাই করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ।
জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি সাপেক্ষে অনুমোদনের জন্য শিগগিরই তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ের জন্য খসড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অংশীজনদের সঙ্গে এ বিষয়ে আরও বৈঠক হবে। তারপরই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।’
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, অপরাধ প্রতিরোধ, শনাক্ত ও তদন্তের প্রয়োজনে যেকোনো উপাত্তধারীর কাছ থেকে উপাত্ত (ব্যক্তিগত তথ্যসহ) সংগ্রহ করা যাবে। আইনে উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সি নামে একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই এজেন্সি
যেকোনো ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সরবরাহ করার নির্দেশ দিতে পারবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এ নির্দেশনা মানতে বাধ্য থাকবেন। সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, বিদেশিদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা জনশৃঙ্খলার স্বার্থে উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সিকে যেকোনো সময় যেকোনে নির্দেশনা দিতে পারবে। এজেন্সি তা মানতে বাধ্য থাকবে।
মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই খসড়া আইনে ১৪ অনুচ্ছেদ ও ৭২টি ধারা রাখা হয়েছে, যার বেশ কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের মতে, এই আইনের মাধ্যমে সরকার তথ্যের নিয়ন্ত্রণ করবে নাকি সুরক্ষা দেবে, তা পরিষ্কার নয়।
তবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের দাবি, কয়েক বছর ধরেই উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়নে কাজ চলছে। এ জন্য একাধিক পর্যালোচনা সভাসহ আন্তমন্ত্রণালয় সভা করা হয়েছে, যেখানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সংস্থা, আইনবিদ, সাংবাদিকসহ অংশীজনেরা উপস্থিত হয়ে মতামত দিয়েছেন। এমনকি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনীতিবিদরাও এ বিষয়ে তাঁদের মতামত দিয়েছেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
যেকোনো আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় তোলার আগের ধাপ হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ। উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়াটিও এখন মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলার পূর্ববর্তী ধাপে আছে।
কিন্তু আপত্তির বিষয়গুলো নিষ্পত্তি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, যেভাবে উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ। এটি জনগণের সংবিধানস্বীকৃত বাক্-স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন করবে। এর মধ্য দিয়ে সমাজ নজরদারির সমাজে রূপান্তরিত হবে।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গত শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইনের সংজ্ঞাসহ অনেক বিষয়ই স্পষ্ট নয়। খসড়ার মৌলিক কিছু জায়গা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা দিয়ে আইনটি যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর অপপ্রয়োগ করা সম্ভব। এই অবস্থায় আইনটি পাস হলে উপাত্ত সুরক্ষা নয়, নিয়ন্ত্রণই মুখ্য হবে। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার কথা বলা হলেও এই আইনের মাধ্যমে মূলত ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর সীমাহীন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। উপাত্তের সংজ্ঞা সেই আগের মতোই অস্পষ্ট। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সংজ্ঞা ও মানদণ্ড কী হবে, তা-ও খসড়ায় স্পষ্ট নয়। সরকার চাইলেই যেকোনো ব্যক্তির ডিজিটাল তথ্য নিতে পারবে। এই আইনবলে সরকার ব্যক্তিগত তথ্যও নিতে পারবে। উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সি নামে যে কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটাও সরকারের হাতেই রাখা হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আমাদের সঙ্গে গত ১৪ মার্চ আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছিল। সেখানে উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া দিয়ে বলা হয়েছিল, এটি নিয়ে ৬ এপ্রিল বসা হবে, কিন্তু বসা হয়নি। আমাদের কিছু সুপারিশ বিবেচনা করা হলেও বেশির ভাগই আমলে নেওয়া হয়নি। আমরা চাই সরকার আমাদের সঙ্গে বসে সংশ্লিষ্ট আপত্তি বিবেচনায় নিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করুক।’
আইনটির খসড়ার কিছু ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত আট দেশ।
প্রস্তাবিত খসড়ায় ধারা ১০-এ বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বা অপরাধ প্রতিরোধ, শনাক্ত ও তদন্ত করার উদ্দেশ্যেই উপাত্তধারীর কাছ থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা যাবে। নবম অধ্যায়ে উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারকে। উপাত্তের ওপর সরকারের ক্ষমতা প্রসঙ্গে ৬৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার প্রয়োজনে সময়ে সময়ে এজেন্সির মহাপরিচালকের কাছে এই আইনের অধীন সম্পাদিত যেকোনো বিষয়ে প্রতিবেদন বা বিবরণী চাইতে পারবে এবং উক্তরূপে কোনো প্রতিবেদন চাইলে মহাপরিচালক তা সরবরাহ করবেন।’ এসব ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ বলেছিল, ‘এই ধারা থাকলে বাংলাদেশের ডেটা সেন্টার (উপাত্ত সংরক্ষণ কেন্দ্র) ও সার্ভারগুলোয় সংরক্ষিত উপাত্ত নজরদারির আওতায় আসবে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর ওপর গোপনীয় তথ্য প্রকাশের চাপ সৃষ্টি হবে। এই ধারা গণতান্ত্রিক শাসনকে দুর্বল করতে পারে।’
উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারও। ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশে অনলাইন স্বাধীনতা ও ব্যবসায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘যদি ডেটা স্থানীয়করণের শর্তকে কঠোরভাবে আরোপের মাধ্যমে ডেটা সুরক্ষা আইন পাস করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে—এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। প্রতিদিন যে কোটি কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী তাদের সেবা নিচ্ছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
উপাত্ত সুরক্ষা আইন ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকেই। টিআইবি বলছে, খসড়ায় সরকারি নজরদারি আর ভিন্নমত দমনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। সরকার ব্যক্তির ওপর নজরদারির ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করবে। পাশাপাশি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়বে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিক মহল থেকেও উপাত্ত সুরক্ষা আইনের কিছু বিষয় নিয়ে আপত্তি আছে। কিন্তু এসব আপত্তির মূল বিষয়গুলো সুরাহা না করেই আইনটি চূড়ান্ত করছে সরকার।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন দরকার। কিন্তু এই আইনের মাধ্যমে সরকার ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা দেবে নাকি নিয়ন্ত্রণ করবে, তা স্পষ্ট করতে হবে। খসড়ায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা কী, তা সংজ্ঞায় স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি উপাত্তকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী দুজনের মধ্যে আন্তসম্পর্ক, ব্যক্তিগত জায়গা এবং সংবেদনশীল তথ্যের সংজ্ঞাও পরিষ্কার নয়। এমন অনেক বিষয়েই অস্পষ্টতা রয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ যে কারণে আপত্তি তুলেছে, সে বিষয়ে বা ব্যবসায়িক তথ্যের স্পষ্টতা দরকার। এসব বিষয় সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে একাধিকবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী। সর্বশেষ গত ৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত আটটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদে যাওয়ার আগে অংশীজনদের সঙ্গে আবারও আলাপ-আলোচনা করা হবে। এর আগেও আমরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আইনটি উপাত্ত নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, সুরক্ষার জন্য করা হচ্ছে।’
অংশীজনদের মতামতের জন্য উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া উন্মুক্ত করার পর থেকেই প্রস্তাবিত আইনটির বেশ কিছু ধারা নিয়ে সুশীল সমাজসহ দেশি-বিদেশি নানা মহল থেকে আপত্তি উঠেছে। কিন্তু এসব আপত্তির মূল দিকগুলো উপেক্ষা করেই আইনটির চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই খসড়াটি যাচাই-বাছাই করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ।
জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি সাপেক্ষে অনুমোদনের জন্য শিগগিরই তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ের জন্য খসড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অংশীজনদের সঙ্গে এ বিষয়ে আরও বৈঠক হবে। তারপরই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।’
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, অপরাধ প্রতিরোধ, শনাক্ত ও তদন্তের প্রয়োজনে যেকোনো উপাত্তধারীর কাছ থেকে উপাত্ত (ব্যক্তিগত তথ্যসহ) সংগ্রহ করা যাবে। আইনে উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সি নামে একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই এজেন্সি
যেকোনো ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সরবরাহ করার নির্দেশ দিতে পারবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এ নির্দেশনা মানতে বাধ্য থাকবেন। সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, বিদেশিদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা জনশৃঙ্খলার স্বার্থে উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সিকে যেকোনো সময় যেকোনে নির্দেশনা দিতে পারবে। এজেন্সি তা মানতে বাধ্য থাকবে।
মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই খসড়া আইনে ১৪ অনুচ্ছেদ ও ৭২টি ধারা রাখা হয়েছে, যার বেশ কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের মতে, এই আইনের মাধ্যমে সরকার তথ্যের নিয়ন্ত্রণ করবে নাকি সুরক্ষা দেবে, তা পরিষ্কার নয়।
তবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের দাবি, কয়েক বছর ধরেই উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়নে কাজ চলছে। এ জন্য একাধিক পর্যালোচনা সভাসহ আন্তমন্ত্রণালয় সভা করা হয়েছে, যেখানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সংস্থা, আইনবিদ, সাংবাদিকসহ অংশীজনেরা উপস্থিত হয়ে মতামত দিয়েছেন। এমনকি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনীতিবিদরাও এ বিষয়ে তাঁদের মতামত দিয়েছেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
যেকোনো আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় তোলার আগের ধাপ হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ। উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়াটিও এখন মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলার পূর্ববর্তী ধাপে আছে।
কিন্তু আপত্তির বিষয়গুলো নিষ্পত্তি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, যেভাবে উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ। এটি জনগণের সংবিধানস্বীকৃত বাক্-স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন করবে। এর মধ্য দিয়ে সমাজ নজরদারির সমাজে রূপান্তরিত হবে।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গত শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইনের সংজ্ঞাসহ অনেক বিষয়ই স্পষ্ট নয়। খসড়ার মৌলিক কিছু জায়গা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা দিয়ে আইনটি যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর অপপ্রয়োগ করা সম্ভব। এই অবস্থায় আইনটি পাস হলে উপাত্ত সুরক্ষা নয়, নিয়ন্ত্রণই মুখ্য হবে। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার কথা বলা হলেও এই আইনের মাধ্যমে মূলত ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর সীমাহীন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। উপাত্তের সংজ্ঞা সেই আগের মতোই অস্পষ্ট। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সংজ্ঞা ও মানদণ্ড কী হবে, তা-ও খসড়ায় স্পষ্ট নয়। সরকার চাইলেই যেকোনো ব্যক্তির ডিজিটাল তথ্য নিতে পারবে। এই আইনবলে সরকার ব্যক্তিগত তথ্যও নিতে পারবে। উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সি নামে যে কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটাও সরকারের হাতেই রাখা হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আমাদের সঙ্গে গত ১৪ মার্চ আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছিল। সেখানে উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া দিয়ে বলা হয়েছিল, এটি নিয়ে ৬ এপ্রিল বসা হবে, কিন্তু বসা হয়নি। আমাদের কিছু সুপারিশ বিবেচনা করা হলেও বেশির ভাগই আমলে নেওয়া হয়নি। আমরা চাই সরকার আমাদের সঙ্গে বসে সংশ্লিষ্ট আপত্তি বিবেচনায় নিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করুক।’
আইনটির খসড়ার কিছু ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত আট দেশ।
প্রস্তাবিত খসড়ায় ধারা ১০-এ বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বা অপরাধ প্রতিরোধ, শনাক্ত ও তদন্ত করার উদ্দেশ্যেই উপাত্তধারীর কাছ থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা যাবে। নবম অধ্যায়ে উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারকে। উপাত্তের ওপর সরকারের ক্ষমতা প্রসঙ্গে ৬৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার প্রয়োজনে সময়ে সময়ে এজেন্সির মহাপরিচালকের কাছে এই আইনের অধীন সম্পাদিত যেকোনো বিষয়ে প্রতিবেদন বা বিবরণী চাইতে পারবে এবং উক্তরূপে কোনো প্রতিবেদন চাইলে মহাপরিচালক তা সরবরাহ করবেন।’ এসব ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ বলেছিল, ‘এই ধারা থাকলে বাংলাদেশের ডেটা সেন্টার (উপাত্ত সংরক্ষণ কেন্দ্র) ও সার্ভারগুলোয় সংরক্ষিত উপাত্ত নজরদারির আওতায় আসবে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর ওপর গোপনীয় তথ্য প্রকাশের চাপ সৃষ্টি হবে। এই ধারা গণতান্ত্রিক শাসনকে দুর্বল করতে পারে।’
উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারও। ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশে অনলাইন স্বাধীনতা ও ব্যবসায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘যদি ডেটা স্থানীয়করণের শর্তকে কঠোরভাবে আরোপের মাধ্যমে ডেটা সুরক্ষা আইন পাস করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে—এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। প্রতিদিন যে কোটি কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী তাদের সেবা নিচ্ছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
উপাত্ত সুরক্ষা আইন ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকেই। টিআইবি বলছে, খসড়ায় সরকারি নজরদারি আর ভিন্নমত দমনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। সরকার ব্যক্তির ওপর নজরদারির ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করবে। পাশাপাশি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়বে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিক মহল থেকেও উপাত্ত সুরক্ষা আইনের কিছু বিষয় নিয়ে আপত্তি আছে। কিন্তু এসব আপত্তির মূল বিষয়গুলো সুরাহা না করেই আইনটি চূড়ান্ত করছে সরকার।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন দরকার। কিন্তু এই আইনের মাধ্যমে সরকার ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা দেবে নাকি নিয়ন্ত্রণ করবে, তা স্পষ্ট করতে হবে। খসড়ায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা কী, তা সংজ্ঞায় স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি উপাত্তকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী দুজনের মধ্যে আন্তসম্পর্ক, ব্যক্তিগত জায়গা এবং সংবেদনশীল তথ্যের সংজ্ঞাও পরিষ্কার নয়। এমন অনেক বিষয়েই অস্পষ্টতা রয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ যে কারণে আপত্তি তুলেছে, সে বিষয়ে বা ব্যবসায়িক তথ্যের স্পষ্টতা দরকার। এসব বিষয় সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে একাধিকবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী। সর্বশেষ গত ৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত আটটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদে যাওয়ার আগে অংশীজনদের সঙ্গে আবারও আলাপ-আলোচনা করা হবে। এর আগেও আমরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আইনটি উপাত্ত নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, সুরক্ষার জন্য করা হচ্ছে।’
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে