মাটি কাটা চক্রের ভয়ে জমিতে ধান রোপণ বন্ধ

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০০
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৮: ০৯

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে মাটি কাটার চক্রের ভয়ে ধান রোপণ বন্ধ হয়ে গেছে ১৪ কৃষকের। উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর এলাকায় ওই কৃষকেরা চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারেননি।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, খিদিরপুর এলাকার তিন ফসলি জমিগুলো খালি পড়ে রয়েছে। অথচ এই সময় জমিতে ধান রোপণ করার কথা। জমির আইল কেটে পানি চলাচলের জন্য নালার ব্যবস্থাও করেছিলেন কৃষকেরা। এ ছাড়া জমিসহ সব ধরনের প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু মাটি কাটার চক্রের গাড়ি চলাচলের রাস্তার কারণে সেচপাম্প স্থাপন করতে পারেননি কৃষক। এ কারণে সেখানে আর ধান রোপণ করা হয়নি।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে মাটি কাটছে কয়েকটি চক্র। এই চক্রের সদস্যরা কৃষকদের ভয়ভীতি এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন। সেচপাম্প স্থাপন করলে মাটির গাড়িগুলো যাওয়ায় রাস্তা ভিজে যাবে, এতে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হবে। এ ভয়ে সেচপাম্প স্থাপন করা হয়নি।

খিদিরপুর গ্রামের কৃষক আক্কাস বলেন, ‘এবার পানির পাম্প মেশিন (সেচ) বসানো হয়নি। তাই আমরা ধান রোপণ করতে পারিনি। আমাদের জমিগুলো খালি পড়ে রয়েছে।’

কৃষক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘খিদিরপুরের তিন ফসলি জমি খনন করে গভীর জলাশয়ে পরিণত করা হচ্ছে। যেসব জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে, তার পাশের জমি এমনিতেই ভেঙে পড়ছে। তাই অনেকে অসহায় হয়ে জমির মাটি দিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।’

কৃষক আওয়াল হোসেন বলেন, ‘যেখান থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে, তার পূর্ব ও পশ্চিম পাশের ১০৫ শতক ধানের আবাদি জমি রয়েছে। পূর্ব পাশে ধানের জমির ওপর দিয়ে মাহিন্দ্রা চলাচলের রাস্তা বানানো হয়েছে। শুনেছি বরকত এখান থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।’

আরও কয়েকজন কৃষক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই চকে (ফসলি জমি) কয়েকটি চক্র মাটি ও জমি খনন করে বালু বিক্রি করছে, তাদের ভয়ে কৃষকেরা মুখ খুলতে পারেন না। কিছু বলতে গেলে ভয়ভীতি এবং হুমকি-ধমকি দেয়। কৃষকেরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। এবার সেচ ব্যবস্থা না থাকায় ধান রোপণ করতে পারেননি। এগুলো সবই তিন ফসলি জমি। জমিগুলো এবার পড়ে রইল।

খিদিরপুর গ্রামের পানির পাম্পের (সেচ) মালিক মো. আরশাদ বলেন, ‘সরিষা ওঠানোর পর আমরা যে ধান রোপণ করি, এবার তা পারিনি। আমার জমির যে স্থানে পানির পাম্প স্থাপন করি, সেখান দিয়ে মাটির গাড়িগুলো যায়। পাম্প স্থাপন করলে জমি ভিজা থাকে, মাটির গাড়িগুলো যাওয়া-আসা করতে পারবে না। তারা আমার যন্ত্র উঠিয়ে দেবে। এই ভয়ে এবার পানির পাম্প যন্ত্র বসাইনি।’

লতব্দী ইউপির চেয়ারম্যান হাফেজ ফজলুল হক বলেন, পাঁচ বছর আগেও ইউনিয়নটির সর্বত্র ফসলি জমি ছিল। চোখজুড়ানো ফসল হতো। সব কটি জমিই তিন ফসলি ছিল। কয়েক বছর ধরে ইকবাল, জহির, জুয়েল, বরকত, শামীম, শাহিন, জনি চক্র ইউনিয়নের খিদিরপুর, চন্ডিবর্দি এলাকার মাটি কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। ফসলি জমিগুলো বড় আকারের নদীতে পরিণত করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

লতব্দী ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘খিদিরপুর এলাকার কয়েকজন কৃষক আমাকে বলেছেন, তাঁরা চলতি মৌসুমে সেচ ব্যবস্থা না থাকায় বোরো চারা রোপণ করতে পারেননি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তাঁরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন। ’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত