সিলেট বিভাগীয় জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস: যেন মধুর হাঁড়ি, বদলিতেও নেই চেয়ার ছাড়াছাড়ি

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ১৪

২০২১ সালের ১৮ মে সিলেট বিভাগীয় জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগদান করেছিলেন মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান। এরপর থেকেই ওই সেটেলমেন্ট অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি নতুন মাত্রা পায়। ঘুষ নিয়ে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন থেকে শুরু করে প্রকৃত মালিকের অজান্তে জমির দাগ, খতিয়ান, শ্রেণি, মৌজা বহাল রেখে জমির মালিকানা বদলের মতো ঘটনাও ঘটেছে ওই অফিসে। একপর্যায়ে ওবায়দুর রহমানকে বদলি করা হয় কক্সবাজারে। কিন্তু বদলি আদেশের ছয় মাসেও চেয়ার ছাড়েননি তিনি, যোগ দেননি নতুন কর্মস্থলে। পরে সিলেট বিভাগীয় জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস থেকে তাঁকে অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির হস্তক্ষেপে পরের দিনই তাঁর অবমুক্তির আদেশ স্থগিত করা হয়।

ওবায়দুর রহমান সিলেট বিভাগীয় জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস ছাড়তে চান না কেন—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় ওই অফিসের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে তাঁরা বলেন, এই অফিসের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের হাতে বছরের পর বছর ধরে হচ্ছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি। ওবায়দুর রহমান আসার পর থেকে এখানে অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তিনি সিলেট বিভাগীয় জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসকে বানিয়ে ফেলেন অনিয়ম-দুর্নীতির ‌‘আঁতুড়ঘর’। এ জন্য মধুর হাঁড়ি ছেড়ে যেতেও চান না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমানকে বর্তমান পদ ও কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহারপূর্বক কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উপপরিচালক স্থানীয় সরকার পদে পদায়ন করা হয়। কিন্তু তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করায় গত বছরের ১৩ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিব, ভূমিসচিব এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এতেও চেয়ার ছাড়েননি তিনি। বদলি আদেশের ছয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সিলেটে দায়িত্ব পালন করছেন। এ অবস্থায় গত ২৯ জানুয়ারি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ মুর্শিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে ওবায়দুর রহমানকে সিলেট জোনের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস থেকে অবমুক্ত করা হয়। বলা হয়, তিনি তাঁর দায়িত্বভার সিলেট জোনের চার্জ অফিসারকে বুঝিয়ে দেবেন। কিন্তু অজানা কারণে পরদিন একই উপপরিচালকের স্বাক্ষর করা আরেকটি চিঠিতে ওই আদেশ বাতিল করা হয়।

অবমুক্তির আদেশ এক দিন পরেই বাতিল কেন, জানতে চাইলে শেখ মুর্শিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মহাপরিচালক ভালো বলতে পারবেন। আমরা তো উনার নির্দেশে সই করি। তবে যতটুকু শুনেছি, মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমানকে যেখানে বদলি করা হয়েছিল সেখানে আরেকজনকে পদায়ন করা হয়েছে। পদ খালি না থাকায় আদেশটি স্থগিত করা হয়েছে।’

এ নিয়ে ওবায়দুর রহমানের বক্তব্য হলো, ‘এটা অফিশিয়াল বিষয়। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। এখানে আমাকে কবে অর্ডার করল, কবে স্থগিত করল, এটা একান্ত তাদের বিষয়। এখানে আমার কোনো মন্তব্য থাকার কথা না।’

সেটেলমেন্ট অফিস যেন দুর্নীতির আঁতুড়ঘর
সিলেট বিভাগের ভূসম্পত্তির হাল রেকর্ড যথাযথ সংরক্ষণ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট মামলা (৭৬১৬/২৩) করেন নগরের বাসিন্দা মাহতাব আহমদ খোকন। পরে গত বছরের ২৬ নভেম্বর বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটকারীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করার জন্য ভূমিসচিবকে নির্দেশ দেন।

অভিযোগকারী মাহতাব আহমদ খোকন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার নিজস্ব জমির গেজেট প্রকাশের পরও মালিকানা স্থগিত করে রাখা হয়েছে। এ জন্য আমার কাছে প্রথমে হুমায়ুন কবির (সেটেলমেন্ট অফিসের সাবেক কর্মকর্তা) ৫ লাখ টাকা চেয়েছিলেন, আমি দিইনি বিধায় ঠিক করে দেওয়া হয়নি। পরে প্রধান সহকারী মান্নান ২ লাখ টাকা নিয়েও কাগজ ঠিক করে দেননি। আমি দুদকে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছি।’

খোকনের অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা দাবি করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘হুমায়ুন সাহেব ৫ লাখ টাকা চাইছে দেয়নি। আমাকে কেন ২ লাখ দেবে? তাঁর কাজের সঙ্গে তো আমার কোনো সম্পর্ক নাই। এসব সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট।’

এর আগে গত বছরের ১৩ জুন সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল ভূমিসচিব বরাবর। ওবায়দুর রহমান ছাড়া বাকি ছয়জন কর্মকর্তা হলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আব্দুল মান্নান, কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা লিটন, মো. নূরুজ্জামান, রেকর্ডকিপার আবুল খায়ের, সাবেক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির-২ ও মো. রহিম উল্লাহ।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) আনিস মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আলাদা তদন্ত চলছে। মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমানকে কক্সবাজারে বদলির পর সেখানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আরেকজনকে পদায়ন করায় পদ খালি না থাকায় আদেশটি স্থগিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাঁকেও ছেড়ে দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

ভারত ও তরুণ প্রজন্মের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রসঙ্গে যা বললেন মির্জা ফখরুল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত