সুতপা বেদজ্ঞ
স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্র পরিচালনায় যে দল বা জোট এসেছে, তারা কেউই জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নেয়নি। এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যন্ত এমনভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা জনগণের শাসক ও শোষকে পরিণত হয়েছেন। নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশ যাঁদের বয়স ত্রিশের নিচে, তাঁরা এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগ প্রায় ১৬ বছর যাবৎ আইন করে, ভয় দেখিয়ে, কৌশলে দেশে অগণতান্ত্রিক এক পরিবারকেন্দ্রিক দুর্নীতিগ্রস্ত জবাবদিহিহীন দখলদারত্বের ধারাকে পাকাপোক্ত করেছে, যা সাধারণ মানুষ এবং নতুন প্রজন্মকে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করেছে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে।
কেবল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পুলিশ-বিজিবির নির্বিচার গুলিবর্ষণ, শিশুমৃত্যু, সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসা নৃশংসতার চিত্র মানুষকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে নিয়ে গিয়েছে। কারফিউ, ইন্টারনেট শাটডাউন মানুষকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি, বরং ঐক্যবদ্ধ করেছে। সরকার কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করেও আন্দোলনকারীদের মনোবল ভাঙতে পারেনি। জেল-জুলুম-নির্যাতন কোনোকিছুই আন্দোলনকে দমাতে পারেনি।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কে হিন্দু, কে মুসলিম বা কে বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নাকি মাদ্রাসাছাত্র—এসব প্রশ্ন ওঠেনি। এই আন্দোলনে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্যবোধ ও সংহতি তৈরি হয়েছিল। বিশ্বাসের পার্থক্য, রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য, ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা, শ্রেণিগত পার্থক্য—সবকিছু ছাপিয়ে তারা একটি উদ্দেশে মিলিত হয়েছিল। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ যে অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছেন, তা কোনোভাবেই ভুলে যাওয়ার নয়।
এ কৃতিত্ব একক কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ন্যায্য এই আন্দোলনে ক্রমে বিভিন্ন শক্তি, রাজনৈতিক দল একাত্ম হয়ে ভূমিকা রেখেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পরেই কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এ আন্দোলনের ফসল আত্মসাতের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ আওয়ামী কায়দায় বাজারঘাট, স্টেশন, নদী, সিন্ডিকেট দখলের কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছে। জনগণ এসব কর্মকাণ্ড ভালো চোখে দেখছে না। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে একদল লোক মন্দির-মাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আক্রমণ করেছে।
যেকোনো সফল অভ্যুত্থানে সম্ভাবনা যেমন তৈরি হয়, তেমনি পদে পদে ঝুঁকিও থাকে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রেও সে কথা একইভাবে প্রযোজ্য। তবে এ আন্দোলনের সফলতা ও ন্যায্যতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা গেলে জনগণের দ্বিধাদ্বন্দ্ব যেমন দূর করা সম্ভব, একই সঙ্গে ঝুঁকি মোকাবিলা করাটাও সহজসাধ্য হয়। ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান প্রথমত, নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে বাংলাদেশে হাসিনার যে একদলীয় ও এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক লুটেরা স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই লুটেরা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই অভ্যুত্থান সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্র ও সমাজে জেঁকে বসা দুর্নীতি, লুটপাট, দখলদারত্ব, অর্থ পাচার, বিচারহীনতা ও ঋণখেলাপি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। তৃতীয়ত, রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি উত্থাপিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা দ্বিদলীয় ধারার বাইরে নতুন রাজনৈতিক পরিসর বিকশিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
অনেকেই এ আন্দোলনকে কালিমা লেপন করতে একে মুক্তিযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিতর্ক জুড়ে দিয়েছেন। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, আওয়ামী লীগসহ যেসব দল এ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা—সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার ধারকাছ দিয়েও যায়নি।
এবারের গণ-অভ্যুত্থান চরিত্রগতভাবে বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক চেতনার বার্তা সামনে নিয়ে এসেছে। এর সঙ্গে ’৭১-এর গণচেতনার কোনো বিরোধ নেই। মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ শহীদের আত্মদানের পেছনে যে স্বপ্ন ছিল, সেটা আবার বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য কেবল হাসিনা রেজিম চেঞ্জ করা নয়, একই সঙ্গে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে সঞ্চারিত করা। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। আন্দোলনের সময় ও আন্দোলনের পর কয়েক লাখ গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র এঁকেছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি দেয়ালচিত্রে ফুটে উঠেছে গণ-অভ্যুত্থানের গল্প, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন, ধর্মীয় ও জাতিগত সহাবস্থানের আকাঙ্ক্ষা। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে এ বিজয় সংহত করতে হবে। বিজয় অর্জন যতটা সহজ, তাকে সংহত করে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া ততটাই কঠিন। এ সময়ে কে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বা কোন দলের বেশি কর্মী পরিচয় লুকিয়ে মাঠে ছিল- এসব প্রশ্ন টেনে আনলে গুজব ছড়ানো চক্র নতুন গুজব ছড়ানোর রসদ হাতে পাবে। সেটি কোনোমতেই ঠিক হবে না।
গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। রাষ্ট্রের এমন কোনো বিভাগ নেই যেখানে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা নেই। সরকার পরিচালনার বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অতীতের স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগী ও সুবিধাভোগী প্রশাসনকে নিয়েই সরকার চালানো। প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে উদার, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছেন। সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্দেশে ১০টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংস্কারের জন্য দেশপ্রেমিক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এই সুযোগ আর আসবে না।
বিগত সময়ে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকার হিসাব-নিকাশ কষে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও দলকে সঙ্গে নিয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ করে এবারের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের রাজনৈতিক দলের পরামর্শ যেমন নিতে হবে, তেমনি গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যকেও মনে রাখতে হবে। চাপ এলেই নতিস্বীকার সরকারকে টালমাটাল করে দিতে পারে। সুতরাং সংস্কারের উদ্দেশে গঠিত কমিশনকে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে কোনো দুর্বলতা বা ভুল ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে। বর্তমান বিপদ কেবল দেশে নয়, গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের ঘটনায় আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি, সে কথা প্রতিমুহূর্তে মনে রেখে গণ-অভ্যুত্থানের ধারাকে তার লক্ষ্য অভিমুখে পরিচালিত করা অপরিহার্য কর্তব্য। শহীদদের আত্মত্যাগ কোনোমতেই যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। বর্তমান সরকারকে এসব ক্ষেত্রে আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে।
লেখক: সুতপা বেদজ্ঞ
লেখক ও অধিকারকর্মী
স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্র পরিচালনায় যে দল বা জোট এসেছে, তারা কেউই জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নেয়নি। এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যন্ত এমনভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা জনগণের শাসক ও শোষকে পরিণত হয়েছেন। নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশ যাঁদের বয়স ত্রিশের নিচে, তাঁরা এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগ প্রায় ১৬ বছর যাবৎ আইন করে, ভয় দেখিয়ে, কৌশলে দেশে অগণতান্ত্রিক এক পরিবারকেন্দ্রিক দুর্নীতিগ্রস্ত জবাবদিহিহীন দখলদারত্বের ধারাকে পাকাপোক্ত করেছে, যা সাধারণ মানুষ এবং নতুন প্রজন্মকে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করেছে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে।
কেবল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পুলিশ-বিজিবির নির্বিচার গুলিবর্ষণ, শিশুমৃত্যু, সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসা নৃশংসতার চিত্র মানুষকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে নিয়ে গিয়েছে। কারফিউ, ইন্টারনেট শাটডাউন মানুষকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি, বরং ঐক্যবদ্ধ করেছে। সরকার কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করেও আন্দোলনকারীদের মনোবল ভাঙতে পারেনি। জেল-জুলুম-নির্যাতন কোনোকিছুই আন্দোলনকে দমাতে পারেনি।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কে হিন্দু, কে মুসলিম বা কে বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নাকি মাদ্রাসাছাত্র—এসব প্রশ্ন ওঠেনি। এই আন্দোলনে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্যবোধ ও সংহতি তৈরি হয়েছিল। বিশ্বাসের পার্থক্য, রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য, ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা, শ্রেণিগত পার্থক্য—সবকিছু ছাপিয়ে তারা একটি উদ্দেশে মিলিত হয়েছিল। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ যে অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছেন, তা কোনোভাবেই ভুলে যাওয়ার নয়।
এ কৃতিত্ব একক কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ন্যায্য এই আন্দোলনে ক্রমে বিভিন্ন শক্তি, রাজনৈতিক দল একাত্ম হয়ে ভূমিকা রেখেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পরেই কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এ আন্দোলনের ফসল আত্মসাতের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ আওয়ামী কায়দায় বাজারঘাট, স্টেশন, নদী, সিন্ডিকেট দখলের কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছে। জনগণ এসব কর্মকাণ্ড ভালো চোখে দেখছে না। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে একদল লোক মন্দির-মাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আক্রমণ করেছে।
যেকোনো সফল অভ্যুত্থানে সম্ভাবনা যেমন তৈরি হয়, তেমনি পদে পদে ঝুঁকিও থাকে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রেও সে কথা একইভাবে প্রযোজ্য। তবে এ আন্দোলনের সফলতা ও ন্যায্যতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা গেলে জনগণের দ্বিধাদ্বন্দ্ব যেমন দূর করা সম্ভব, একই সঙ্গে ঝুঁকি মোকাবিলা করাটাও সহজসাধ্য হয়। ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান প্রথমত, নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে বাংলাদেশে হাসিনার যে একদলীয় ও এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক লুটেরা স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই লুটেরা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই অভ্যুত্থান সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্র ও সমাজে জেঁকে বসা দুর্নীতি, লুটপাট, দখলদারত্ব, অর্থ পাচার, বিচারহীনতা ও ঋণখেলাপি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। তৃতীয়ত, রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি উত্থাপিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা দ্বিদলীয় ধারার বাইরে নতুন রাজনৈতিক পরিসর বিকশিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
অনেকেই এ আন্দোলনকে কালিমা লেপন করতে একে মুক্তিযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিতর্ক জুড়ে দিয়েছেন। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, আওয়ামী লীগসহ যেসব দল এ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা—সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার ধারকাছ দিয়েও যায়নি।
এবারের গণ-অভ্যুত্থান চরিত্রগতভাবে বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক চেতনার বার্তা সামনে নিয়ে এসেছে। এর সঙ্গে ’৭১-এর গণচেতনার কোনো বিরোধ নেই। মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ শহীদের আত্মদানের পেছনে যে স্বপ্ন ছিল, সেটা আবার বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য কেবল হাসিনা রেজিম চেঞ্জ করা নয়, একই সঙ্গে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে সঞ্চারিত করা। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। আন্দোলনের সময় ও আন্দোলনের পর কয়েক লাখ গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র এঁকেছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি দেয়ালচিত্রে ফুটে উঠেছে গণ-অভ্যুত্থানের গল্প, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন, ধর্মীয় ও জাতিগত সহাবস্থানের আকাঙ্ক্ষা। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে এ বিজয় সংহত করতে হবে। বিজয় অর্জন যতটা সহজ, তাকে সংহত করে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া ততটাই কঠিন। এ সময়ে কে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বা কোন দলের বেশি কর্মী পরিচয় লুকিয়ে মাঠে ছিল- এসব প্রশ্ন টেনে আনলে গুজব ছড়ানো চক্র নতুন গুজব ছড়ানোর রসদ হাতে পাবে। সেটি কোনোমতেই ঠিক হবে না।
গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। রাষ্ট্রের এমন কোনো বিভাগ নেই যেখানে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা নেই। সরকার পরিচালনার বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অতীতের স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগী ও সুবিধাভোগী প্রশাসনকে নিয়েই সরকার চালানো। প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে উদার, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছেন। সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্দেশে ১০টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংস্কারের জন্য দেশপ্রেমিক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এই সুযোগ আর আসবে না।
বিগত সময়ে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকার হিসাব-নিকাশ কষে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও দলকে সঙ্গে নিয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ করে এবারের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের রাজনৈতিক দলের পরামর্শ যেমন নিতে হবে, তেমনি গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যকেও মনে রাখতে হবে। চাপ এলেই নতিস্বীকার সরকারকে টালমাটাল করে দিতে পারে। সুতরাং সংস্কারের উদ্দেশে গঠিত কমিশনকে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে কোনো দুর্বলতা বা ভুল ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে। বর্তমান বিপদ কেবল দেশে নয়, গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের ঘটনায় আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি, সে কথা প্রতিমুহূর্তে মনে রেখে গণ-অভ্যুত্থানের ধারাকে তার লক্ষ্য অভিমুখে পরিচালিত করা অপরিহার্য কর্তব্য। শহীদদের আত্মত্যাগ কোনোমতেই যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। বর্তমান সরকারকে এসব ক্ষেত্রে আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে।
লেখক: সুতপা বেদজ্ঞ
লেখক ও অধিকারকর্মী
এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৫ ঘণ্টা আগেবৈষম্যবিরোধী সফল ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের তিন মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারেরও তিন মাস পূর্ণ হলো। এ কথা ঠিক, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান ছিল মূলত মানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আর বেদনার বহিঃপ্রকাশ। তবে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন, এটা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফল। তাঁরা বলার চেষ্টা করেন, আন্দো
৬ ঘণ্টা আগেআবদুল বারেক সরকার ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের একজন পিয়ন ছিলেন। কিন্তু ২০১৫ সালে অবসরে গিয়েও এই অফিসের কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন ৫ আগস্ট পর্যন্ত। তিনি হয়েছেন ২০০ কোটি টাকার মালিক! কীভাবে হলেন? তিনি কি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলেন?
৬ ঘণ্টা আগেপর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
৯ দিন আগে