দড়ি বেঁধে নদী পার

আসাদুজ্জামান মামুন, গাইবান্ধা
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৫০
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ৩৮

বালাশী একসময় যোগাযোগের মাধ্যম হলেও এখন শুধু দৃশ্যমান ঘাট। আধা কিলোমিটার দূরে শীর্ণ নদীতে ছোট নৌকায় মানুষ পারাপার হয় দুই পাড়ে দড়ি বেঁধে। ঘাট এলাকার মানুষের জীবিকার সংকট চরমে। উত্তরাঞ্চলের মানুষের রেলযোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল বালাশী-বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট। কিন্তু নাব্যতার সংকট ও যমুনা নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ায় ২০০৫ সালে ফেরিটি বন্ধ হয়ে যায়।

এর পরও নতুন করে ফেরিঘাটটি চালু করতে দুই দফায় ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয় করে নৌ টার্মিনালসহ অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়; কিন্তু এই অবকাঠামো এখন পরিত্যক্ত।

জানা যায়, বালাশী ঘাট গাইবান্ধা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে ফুলছড়ি উপজেলায় যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত নৌবন্দর। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৩৮ সালে ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাটে রেল ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। ২০০৫ সালের ১৫ জুন যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর বন্ধ হয়ে যায় বালাসী-বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট। বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের চাপ লাঘবের জন্য সেতুটির ধারণক্ষমতা নিয়ে আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় বিকল্প পথ তৈরির যুক্তি দেখিয়ে ২০১৪ সালে বালাসী ও বাহাদুরাবাদে ফেরিঘাট চালুর জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে একনেকে বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌ-রুটটি আবারও চালু করতে ফেরিঘাট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। পরে ব্যয় বাড়িয়ে ১৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা খরচ করে বাস টার্মিনাল, টোল আদায় বুথ, পুলিশ ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, গেস্টহাউস, আনসার ব্যারাকসহ বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এসব অবকাঠামো নির্মাণের পর বিআইডব্লিউটিএর কারিগরি কমিটি হঠাৎ করে নাব্যতা সংকট ও ২৬ কিলোমিটার বিশাল দূরত্বের নৌপথসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে নৌ-রুটটি নৌযান চলাচলের অনুপযোগী বলে মন্তব্য করে। এরপরই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআইডব্লিউটিএর প্রতিবেদনে জানানো হয়, নাব্যতা-সংকটের কারণে এই পথ ফেরি চলাচলের উপযোগী নয়।

সর্বশেষ গত বছরের জুনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এই প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষা প্রতিবেদনে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কিত কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ড্রেজিং বিভাগের তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে সরেজমিন বালাসী ও বাহাদুরাবাদ ঘাট পরিদর্শন করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনেও বলা হয়, নাব্যতা-সংকটের কারণে গাইবান্ধার বালাসী ঘাট থেকে ফেরি চলাচল সম্ভব নয়।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ড্রেজিং সমস্যার কারণে বালাসী থেকে বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটটি চালু করা সম্ভব হয়নি। নতুন করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এই নৌ-রুটে ফেরি চালুর পরিকল্পনা আছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত