বিভুরঞ্জন সরকার
জুন মাস এলেই অনেকের মধ্যেই একটি অন্য রকম চাঙাভাব চলে আসে। এ মাসজুড়েই প্রায় সংসদ সরগরম থাকে। সংসদের বাইরের উত্তেজনাও কম নয়। এই সবকিছুর কারণ বাজেট। এ মাসে জাতীয় বাজেট সংসদে প্রথমে পেশ হয় এবং পরে পাস হয়। বাজেট বিষয়টি যাঁরা বোঝেন, তাঁরা এ নিয়ে বিস্তর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। বাজেট কেমন হওয়া উচিত ছিল, কেমন হলো এবং এতে কার কী লাভ, কার কী ক্ষতি, তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়। আমার মতো যারা আমজনতা (কী আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের দেশে আমের মৌসুমেই বাজেট পেশ হয়। সেটা কী ‘ম্যাঙ্গোপিপলের’ কথা মাথায় রেখেই?), বাজেট খায় না গায়ে মেখে রং ফরসা করে, সে সম্পর্কে যাদের তেমন জ্ঞান নেই, তারাও বাজেট নিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকে না! যেমন আজ আমি বাজেট নিয়ে লিখতে বসেছি!
বাজেট বলতে আমি বুঝি, সরকারের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা। সরকার সারা বছর কী কী কাজ করতে চায়, সেসব করার জন্য কত ব্যয় হবে এবং সেই অর্থ কোথা থেকে, কীভাবে জোগাড় হবে তা-ই বাজেটে উল্লেখ করা হয়। যাঁদের নিয়ে সরকার তাঁরা কিন্তু নিজের টাকা দিয়ে দেশের কাজ করেন না; বরং উল্টো তাঁরা কাজের জন্য সরকারি তহবিল থেকে টাকা নেন, মানে বেতন-ভাতা ইত্যাদি না নিলে তাঁদেরও জীবন চলে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকারের তহবিলটা কোত্থেকে আসে? একটা কথা আছে, লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন? এই গৌরী সেন বাবুর সন্ধান আবার কারও জানা নেই।
আসলে দেশের মানুষের খাজনা-ট্যাক্সের পয়সায় তৈরি হয় সরকারি তহবিল। সরকার বেশি বেশি উন্নয়ন করার জন্য বা আর কোনো মতলবেও বিদেশ থেকেও ধারকর্জ করে থাকে সুদের বিনিময়ে। তবে এই ধারকর্জ কেউ লিল্লাহ বা খয়রাত হিসেবে দেয় না, সুদে-আসলে তা পরিশোধ করতে হয়। এই পরিশোধের দায়ও কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কাঁধেই বর্তায়। সংবিধান অনুযায়ী জনগণ দেশের মালিক হলেও বসবাসের জন্য সরকারকে জনগণকেই খাজনা-ট্যাক্স দিতে হয়। বিনিময়ে দেশ পরিচালকেরা নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন। বিষয়টা ‘ফেলো কড়ি, মাখো তেলে’র মতো; অর্থাৎ আপনি টাকা দেবেন, তারপর সরকার আপনার জন্য রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল ইত্যাদি বানিয়ে দেবে। আপনার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। দেশের নিরাপত্তাও রক্ষা করবে।
এটাও ঠিক যে ট্যাক্স, খাজনা, ভ্যাট ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি সরকারি কোষাগারে যা জমা দেন তার সবই আপনি সেবার নামে ফেরত পাওয়ার হকদার। কিন্তু অনেক সময় সরকার তেলা মাথায় একটু বেশি তেল দেওয়ার নীতি অনুসরণ করে থাকে। এখানে হয়তো যুক্তি এটাই যে তেলা মাথায় তেল দিতে কম তেল লাগে! যা-ই হোক, আদায় ও বণ্টনে সমতার নীতি অনুসরণ করা না হলে বৈষম্য তৈরি হয়। বৈষম্য আবার সামাজিক অস্থিরতারও সৃষ্টি করে!
আজ পর্যন্ত যত সরকার যত বাজেট দিয়েছে, কোনো বাজেটকেই কি গরিব বাঁচানোর বাজেট বলে কেউ অভিহিত করেছে? যাঁরা সরকারে থেকে বাজেট দেন, তাঁরা অবশ্য বাজেটকে গরিবের বাজেট না বললেও সুষম বাজেট বলে দাবি করেন। আবার যাঁরা বিরোধী দলে থাকেন, তাঁরা বাজেটকে গরিব মারার বাজেট বলে সমালোচনা করে থাকেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশের পর যেসব প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তা-ও গতানুগতিকতার বাইরে নয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ এমন উন্নয়ন করেছে যে দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে; অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে ৪২ জন দরিদ্র। তাদের ক্রয়ক্ষমতা নেই। সেই মানুষদের জন্য গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে আওয়ামী লীগ সরকার কিছুই করেনি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেছেন, ‘যখন মানুষ চাল, ডাল, তেল, লবণ—এসব কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে, তার মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। এর অর্থ হচ্ছে, এই সরকারের দেশের মানুষের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই।’
বাজেট কৃষক-শ্রমিকদের বাঁচার পথ দেখাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন , ‘জনপ্রশাসন, আমলা, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর জন্য ব্যয় হবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। চোখ বন্ধ করে বিভিন্ন দেশ থেকে যে ধার করেছেন, সেই ধার বাবদ যাবে প্রায় ১৬ শতাংশ। এর সবই শ্রমিক-কৃষকদের টাকা থেকে যাবে। বাজেটে কৃষকের জন্য, শ্রমিকের জন্য কোথায় বরাদ্দ? উচ্চপর্যায়ের অফিসারদের ঠিকই বরাদ্দ দিয়েছেন। এই বাজেট কৃষক-শ্রমিকদের বাঁচার পথ দেখাতে পারেনি।’
অবশ্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজে বলেছেন, ‘গরিব হওয়া কত কষ্টের, আমি হাড়ে হাড়ে বুঝি। তাই প্রত্যেকটি গরিব মানুষকে সামনে রেখে আমরা এই বাজেট দিয়েছি।’
সত্যিই কি সবাইকে সমান চোখে দেখে বাজেট দেওয়া হয় বা হয়েছে? কী বলছেন অর্থনীতির অধ্যাপক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তক এম এম আকাশ? অধ্যাপক আকাশ বলেছেন: বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের জন্য। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে সিরিয়াসলি বৈষম্য কমানোর চেষ্টা বা বিবেচনা করা হতো। উদাহরণ দিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্যের হার হবে ১ অনুপাত ৫। পুঁজির সিলিং ছিল, জমির মালিকানারও সিলিং ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশের কাছ থেকে গ্যাস কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ও বাঙালিদের বৃহৎ সম্পত্তিও জাতীয়করণ করা হয়েছিল। ন্যায্যমূল্যের দোকান ও রেশন চালু হয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষ, বৈজ্ঞানিক ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্যকেও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মতো সর্বজনীন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এসব নীতি বাহাত্তরের সংবিধানের মূল চার নীতির অন্যতম দুই নীতি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য অভিমুখে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু এসব নীতি বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ দলটি উপযুক্ত ছিল না। বাম শক্তিও ছিল বিভক্ত, দুর্বল ও পরস্পরবিরোধী।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাকশাল গঠন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর ওই চেষ্টাও শুরুতেই বিপর্যয়ের শিকার হয়। আওয়ামী লীগের মার্কিন লবির দক্ষিণপন্থী ও নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। এর পর থেকে আমরা না পেয়েছি গণতন্ত্র, না পেয়েছি সমতাভিত্তিক অর্থনীতি। এখন চলছে ধনীকে আরও ধনী আর গরিবকে আপেক্ষিকভাবে আরও গরিব রাখার তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতি। এতে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি অনেক হয়েছে, ক্ষমতাসীন ধনীদের উন্নতি হয়েছে রকেটগতিতে, ক্ষমতাবলয়ের বাইরের বা সাধারণভাবে নিচে অবস্থিত লোকদের উন্নতি হয়েছে শামুকের গতিতে। গ্রামে হতদরিদ্র বা ক্ষুধার্ত লোকের মোট সংখ্যা আপেক্ষিকভাবে কম দেখতে পাওয়া যায় (মাত্র ১০ শতাংশ), কিন্তু অতিউচ্চ ধনী কোটিপতি লোক অনেক দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামে চরম দারিদ্র্য কমেছে ঠিকই, কিন্তু বৈষম্য কয়েক গুণ বেড়েছে।
অনেক গুরুগম্ভীর কথা হলো। শেষ করি একটু হালকা চালে।
বাজেটে মুড়ির দাম কমার কথা থাকায় আমি একটু খুশি হয়েছিলাম। কারণ মুড়ি আমার একটি প্রিয় খাবার। কিন্তু আমার খুশির খবর স্ত্রীকে বলায়, মুখ গোমড়া করে বলল, ‘তোমার আর কোনো দিনই কাণ্ডজ্ঞান হবে না। চালের দাম না কমলে মুড়ির দাম কমবে কীভাবে? চাল ছাড়া মুড়ি বানানোর কোনো উপায় কি অর্থমন্ত্রী বাজেটে উল্লেখ করেছেন?’
আজকের পত্রিকা অফিসে বাজেটের একগাদা পুস্তক আছে, ওগুলো ঘেঁটে চালের বদলে মুড়ি বানানোর উপায় আছে কি না, তা বের করাও আমার কম্ম নয়।
শেষ পর্যন্ত কী কী পণ্যের দাম কমবে ও বাড়বে—সেই তালিকায় চোখ বুলিয়ে দেখলাম গাড়ির দাম বাড়বে এবং হুইলচেয়ারের দাম কমবে। আমি ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার করে উঠলাম। জীবনে তো আর গাড়ি কেনার মুরোদ হবে না। শেষ বয়সে একটি হুইলচেয়ার কিনতে পারলেও মন্দ কি!
জুন মাস এলেই অনেকের মধ্যেই একটি অন্য রকম চাঙাভাব চলে আসে। এ মাসজুড়েই প্রায় সংসদ সরগরম থাকে। সংসদের বাইরের উত্তেজনাও কম নয়। এই সবকিছুর কারণ বাজেট। এ মাসে জাতীয় বাজেট সংসদে প্রথমে পেশ হয় এবং পরে পাস হয়। বাজেট বিষয়টি যাঁরা বোঝেন, তাঁরা এ নিয়ে বিস্তর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। বাজেট কেমন হওয়া উচিত ছিল, কেমন হলো এবং এতে কার কী লাভ, কার কী ক্ষতি, তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়। আমার মতো যারা আমজনতা (কী আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের দেশে আমের মৌসুমেই বাজেট পেশ হয়। সেটা কী ‘ম্যাঙ্গোপিপলের’ কথা মাথায় রেখেই?), বাজেট খায় না গায়ে মেখে রং ফরসা করে, সে সম্পর্কে যাদের তেমন জ্ঞান নেই, তারাও বাজেট নিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকে না! যেমন আজ আমি বাজেট নিয়ে লিখতে বসেছি!
বাজেট বলতে আমি বুঝি, সরকারের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা। সরকার সারা বছর কী কী কাজ করতে চায়, সেসব করার জন্য কত ব্যয় হবে এবং সেই অর্থ কোথা থেকে, কীভাবে জোগাড় হবে তা-ই বাজেটে উল্লেখ করা হয়। যাঁদের নিয়ে সরকার তাঁরা কিন্তু নিজের টাকা দিয়ে দেশের কাজ করেন না; বরং উল্টো তাঁরা কাজের জন্য সরকারি তহবিল থেকে টাকা নেন, মানে বেতন-ভাতা ইত্যাদি না নিলে তাঁদেরও জীবন চলে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকারের তহবিলটা কোত্থেকে আসে? একটা কথা আছে, লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন? এই গৌরী সেন বাবুর সন্ধান আবার কারও জানা নেই।
আসলে দেশের মানুষের খাজনা-ট্যাক্সের পয়সায় তৈরি হয় সরকারি তহবিল। সরকার বেশি বেশি উন্নয়ন করার জন্য বা আর কোনো মতলবেও বিদেশ থেকেও ধারকর্জ করে থাকে সুদের বিনিময়ে। তবে এই ধারকর্জ কেউ লিল্লাহ বা খয়রাত হিসেবে দেয় না, সুদে-আসলে তা পরিশোধ করতে হয়। এই পরিশোধের দায়ও কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কাঁধেই বর্তায়। সংবিধান অনুযায়ী জনগণ দেশের মালিক হলেও বসবাসের জন্য সরকারকে জনগণকেই খাজনা-ট্যাক্স দিতে হয়। বিনিময়ে দেশ পরিচালকেরা নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন। বিষয়টা ‘ফেলো কড়ি, মাখো তেলে’র মতো; অর্থাৎ আপনি টাকা দেবেন, তারপর সরকার আপনার জন্য রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল ইত্যাদি বানিয়ে দেবে। আপনার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। দেশের নিরাপত্তাও রক্ষা করবে।
এটাও ঠিক যে ট্যাক্স, খাজনা, ভ্যাট ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি সরকারি কোষাগারে যা জমা দেন তার সবই আপনি সেবার নামে ফেরত পাওয়ার হকদার। কিন্তু অনেক সময় সরকার তেলা মাথায় একটু বেশি তেল দেওয়ার নীতি অনুসরণ করে থাকে। এখানে হয়তো যুক্তি এটাই যে তেলা মাথায় তেল দিতে কম তেল লাগে! যা-ই হোক, আদায় ও বণ্টনে সমতার নীতি অনুসরণ করা না হলে বৈষম্য তৈরি হয়। বৈষম্য আবার সামাজিক অস্থিরতারও সৃষ্টি করে!
আজ পর্যন্ত যত সরকার যত বাজেট দিয়েছে, কোনো বাজেটকেই কি গরিব বাঁচানোর বাজেট বলে কেউ অভিহিত করেছে? যাঁরা সরকারে থেকে বাজেট দেন, তাঁরা অবশ্য বাজেটকে গরিবের বাজেট না বললেও সুষম বাজেট বলে দাবি করেন। আবার যাঁরা বিরোধী দলে থাকেন, তাঁরা বাজেটকে গরিব মারার বাজেট বলে সমালোচনা করে থাকেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশের পর যেসব প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তা-ও গতানুগতিকতার বাইরে নয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ এমন উন্নয়ন করেছে যে দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে; অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে ৪২ জন দরিদ্র। তাদের ক্রয়ক্ষমতা নেই। সেই মানুষদের জন্য গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে আওয়ামী লীগ সরকার কিছুই করেনি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেছেন, ‘যখন মানুষ চাল, ডাল, তেল, লবণ—এসব কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে, তার মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। এর অর্থ হচ্ছে, এই সরকারের দেশের মানুষের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই।’
বাজেট কৃষক-শ্রমিকদের বাঁচার পথ দেখাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন , ‘জনপ্রশাসন, আমলা, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর জন্য ব্যয় হবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। চোখ বন্ধ করে বিভিন্ন দেশ থেকে যে ধার করেছেন, সেই ধার বাবদ যাবে প্রায় ১৬ শতাংশ। এর সবই শ্রমিক-কৃষকদের টাকা থেকে যাবে। বাজেটে কৃষকের জন্য, শ্রমিকের জন্য কোথায় বরাদ্দ? উচ্চপর্যায়ের অফিসারদের ঠিকই বরাদ্দ দিয়েছেন। এই বাজেট কৃষক-শ্রমিকদের বাঁচার পথ দেখাতে পারেনি।’
অবশ্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজে বলেছেন, ‘গরিব হওয়া কত কষ্টের, আমি হাড়ে হাড়ে বুঝি। তাই প্রত্যেকটি গরিব মানুষকে সামনে রেখে আমরা এই বাজেট দিয়েছি।’
সত্যিই কি সবাইকে সমান চোখে দেখে বাজেট দেওয়া হয় বা হয়েছে? কী বলছেন অর্থনীতির অধ্যাপক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তক এম এম আকাশ? অধ্যাপক আকাশ বলেছেন: বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের জন্য। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে সিরিয়াসলি বৈষম্য কমানোর চেষ্টা বা বিবেচনা করা হতো। উদাহরণ দিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্যের হার হবে ১ অনুপাত ৫। পুঁজির সিলিং ছিল, জমির মালিকানারও সিলিং ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশের কাছ থেকে গ্যাস কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ও বাঙালিদের বৃহৎ সম্পত্তিও জাতীয়করণ করা হয়েছিল। ন্যায্যমূল্যের দোকান ও রেশন চালু হয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষ, বৈজ্ঞানিক ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্যকেও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মতো সর্বজনীন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এসব নীতি বাহাত্তরের সংবিধানের মূল চার নীতির অন্যতম দুই নীতি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য অভিমুখে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু এসব নীতি বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ দলটি উপযুক্ত ছিল না। বাম শক্তিও ছিল বিভক্ত, দুর্বল ও পরস্পরবিরোধী।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাকশাল গঠন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর ওই চেষ্টাও শুরুতেই বিপর্যয়ের শিকার হয়। আওয়ামী লীগের মার্কিন লবির দক্ষিণপন্থী ও নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। এর পর থেকে আমরা না পেয়েছি গণতন্ত্র, না পেয়েছি সমতাভিত্তিক অর্থনীতি। এখন চলছে ধনীকে আরও ধনী আর গরিবকে আপেক্ষিকভাবে আরও গরিব রাখার তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতি। এতে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি অনেক হয়েছে, ক্ষমতাসীন ধনীদের উন্নতি হয়েছে রকেটগতিতে, ক্ষমতাবলয়ের বাইরের বা সাধারণভাবে নিচে অবস্থিত লোকদের উন্নতি হয়েছে শামুকের গতিতে। গ্রামে হতদরিদ্র বা ক্ষুধার্ত লোকের মোট সংখ্যা আপেক্ষিকভাবে কম দেখতে পাওয়া যায় (মাত্র ১০ শতাংশ), কিন্তু অতিউচ্চ ধনী কোটিপতি লোক অনেক দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামে চরম দারিদ্র্য কমেছে ঠিকই, কিন্তু বৈষম্য কয়েক গুণ বেড়েছে।
অনেক গুরুগম্ভীর কথা হলো। শেষ করি একটু হালকা চালে।
বাজেটে মুড়ির দাম কমার কথা থাকায় আমি একটু খুশি হয়েছিলাম। কারণ মুড়ি আমার একটি প্রিয় খাবার। কিন্তু আমার খুশির খবর স্ত্রীকে বলায়, মুখ গোমড়া করে বলল, ‘তোমার আর কোনো দিনই কাণ্ডজ্ঞান হবে না। চালের দাম না কমলে মুড়ির দাম কমবে কীভাবে? চাল ছাড়া মুড়ি বানানোর কোনো উপায় কি অর্থমন্ত্রী বাজেটে উল্লেখ করেছেন?’
আজকের পত্রিকা অফিসে বাজেটের একগাদা পুস্তক আছে, ওগুলো ঘেঁটে চালের বদলে মুড়ি বানানোর উপায় আছে কি না, তা বের করাও আমার কম্ম নয়।
শেষ পর্যন্ত কী কী পণ্যের দাম কমবে ও বাড়বে—সেই তালিকায় চোখ বুলিয়ে দেখলাম গাড়ির দাম বাড়বে এবং হুইলচেয়ারের দাম কমবে। আমি ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার করে উঠলাম। জীবনে তো আর গাড়ি কেনার মুরোদ হবে না। শেষ বয়সে একটি হুইলচেয়ার কিনতে পারলেও মন্দ কি!
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে