নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিতে ৮ ব্যাংক

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮: ৩২

খেলাপি ঋণের চাপে ঝুঁকিতে রয়েছে ব্যাংকিং খাত। ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতির (প্রভিশন) ঘাটতি দেখা দিয়েছে বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে। আর প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে আটটি ব্যাংক। এ তালিকায় রয়েছে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত, একটি বিশেষায়িত ও তিনটি বেসরকারি খাতের ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যেসব ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি রয়েছে সেখানে আমানতের নিরাপত্তা কম। এ জন্য খেলাপি ঋণ, পুনঃ তফসিল, প্রভিশন ঘাটতি সমস্যার সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে ৮ ব্যাংকের মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১৯ হাজার ৪৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। কিছু কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করায় পুরো ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে সরকারি বেসিক ব্যাংকের। জুন থেকে ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর পরই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৪ হাজার ৪২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ৮১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে নানা সমস্যায় জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৬ হাজার ৬১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৬ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) ঘাটতির পরিমাণ ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। ব্যাংক যদি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের মূলধন ঘাটতির শঙ্কা থাকে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের ওপর। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় আমানত। ব্যাংকিং খাতে সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে সমাধান টানার সময় এসে গেছে। কেননা, ব্যাংকিং কমিশনের মাধ্যমে আগেও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে শ্রেণীকৃত বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।মোট ঋণের অনুপাতে ছিল ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর ২০২১ সাল শেষে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা ঋণ স্থিতির বিপরীতে খেলাপি ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল খেলাপি। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত