Ajker Patrika

হকার পুনর্বাসনে জটিলতা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৩৩
হকার পুনর্বাসনে জটিলতা

উচ্ছেদের দুই মাসেও পুনর্বাসন না হওয়ায় ময়মনসিংহের গাঙ্গিনারপাড়ের ফুটপাতের হকারদের ঘরে ঘরে চলছে চাপা কান্না। অনেকে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে জীবন পার করছেন। দেনা করে কোটি টাকায় কেনা পণ্য বিক্রির সুযোগ চান তাঁরা। জেলা প্রশাসক বলছেন, এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন মেয়রের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হকার আব্দুল হাই বলেন, হকারি ব্যবসা করে সাত সদস্যের সংসার চলতো। দুই মাস ধরে কোনো ব্যবসা নেই। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ দিতে পারছি না।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র এ বি গুহ রোড, যা গাঙ্গিনারপাড় হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। সেই শহরে দীর্ঘদিনের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গণদাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ শাপলা স্কয়ার মোড় থেকে তাজমহল মোড় পর্যন্ত সড়কের প্রায় দুই শতাধিক হকারকে উচ্ছেদ করে।

উচ্ছেদের পর গাঙ্গিনারপাড়ে মানুষের চলাচলে স্বস্তি ফিরলেও ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হকাররা। শীতের জন্য অগ্রিম কেনা পণ্যও বিক্রি করতে না পেরে দেনার অঙ্ক বাড়ছে হকারদের। এসব পণ্য বিক্রির সুযোগের পাশাপাশি পুনর্বাসন চান ১২০ জন হকার। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, তাঁদের মালগুদামে বসতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি।

হকার শাহরুখ মিয়া বলেন, ‘ছোটকাল থেকে ব্যবসা বলতে হকারিই বুঝি। হঠাৎ দোকান বন্ধ করে দেওয়ায় খুব সমস্যায় পড়েছি। কোনো গলিতেও বসতে পারি না, পুলিশ দৌড়ায়। আমাদের একটা স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোথাও বসতে দেওয়া হোক।’

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ ফুটপাতের ভরসায় দুই লাখ টাকার শীতের কাপড় কিনেছিলাম। কিন্তু উচ্ছেদ করায় পণ্য নষ্ট হচ্ছে।’

শুকতারা মার্কেটের নিচে কাপড় বিক্রি করেন মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, কাপড় বিক্রির সময় পুলিশের একজন ১৫ হাজার টাকার পণ্য নিয়ে যায়। পাঁচ দিন পর আবার ফেরত দেয়।

নেত্রকোনা সরকারি কলেজে বিবিএ করার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে ২০১৮ সাল থেকে গাঙ্গিনারপাড় হকারি করছেন মো. শরীফ মিয়া। তিনি বলেন, যানজটমুক্ত করতে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে ভালো কথা, কিন্তু আমাদের বেঁচে থাকার তাগিদে কোথাও তো বসার সুযোগ দিতে হবে। মাঝে মধ্যে চুরি করে বসলেও পুলিশ আসলে উঠে পড়তে হয়।

এ বিষয়ে গাঙ্গিনারপাড় হকার ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সভাপতি শাহীন তালুকদার বলেন, ‘শহরের তাজমহল রোড, মালগুদামে অনেক জায়গা আছে। সিটি করপোরেশন ইচ্ছে করলেই ১২০ জনকে বসার সুযোগ করে দিতে পারে। আমরা নিরীহ, তাই না খেয়ে মরছি। কিন্তু কোনো আন্দোলন করতে পারছি না।

শাহীন তালুকদার বলেন, আমাদের পক্ষে কোনো নেতা কিংবা প্রশাসনের কেউ নেই। সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে আমার মতো প্রতিটি হকার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের জন্য প্রত্যেকের পণ্য কেনা ছিল, তা গুদামেই নষ্ট হচ্ছে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, গণদাবির পরিপ্রেক্ষিতে যানজট নিরসনে আমরা হকার উচ্ছেদ করেছি। এখনো কোনো হকারকে বসতে দিচ্ছি না। তাঁরা কোথায় বসবে না বসবে, সেটি সিটি করপোরেশন দেখবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, হকারদের সমস্যার বিষয়ে তিনি অবগত নন। যদি হকাররা সমস্যায় পড়ে, তাহলে সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে সমন্বয়ন করে তাঁদের বিষয়টি সমাধান করা হবে।

সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, শহরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফুটপাতের হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে। হকারদের মালগুদামে বসার জন্য বলা হয়েছে। তবে তাঁরা না বসলে কিছু করার নেই। তবুও দেখছি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত