Ajker Patrika

‘রাজাকারপুত্রের’ হাতে নৌকা

মনিরামপুর ও বাঘারপাড়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৫১
‘রাজাকারপুত্রের’ হাতে নৌকা

যশোরের দুই উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পাওয়া দুজন প্রার্থী রাজাকারপুত্র বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের নৌকার প্রতীক বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বরের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনিরামপুরের মনিরামপুরের ১১ নম্বর চালুয়াহাটি ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল ইসলামের বাবা দিনু রাজাকার। যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তাকারী ছিলেন।

আর বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে নৌকার প্রতীক পাওয়া বিল্লাল হোসেনের বাবা মৃত মোহাম্মদ আলীও ছিলেন রাজাকার। ১৯৭১ সালে তিনি পাক হানাদার বাহিনীর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগে গত শনি ও রোববার বাঘারপাড়া ও মনিরামপুরে মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। যদিও আবুল ইসলাম ২০০৪ সাল থেকে টানা ১৭ বছর মনিরামপুর উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। গত নির্বাচনে তিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আর বিল্লাল হোসেন পালন করছেন রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব।

মনিরামপুর: উপজেলা কৃষক লীগ নেতা আবুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে গত রোববার সন্ধ্যায় ইউনিয়নের নেংগুড়াহাট বাজারে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা–কর্মী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। চালুয়াহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিলন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত সপ্তাহে চালুয়াহাটি ও ঝাঁপা ইউনিয়নের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আবুল ইসলামকে রাজাকারপুত্র আখ্যায়িত করে তাঁকে মনোনয়ন না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত আবেদন দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবেদনে ১ নম্বরে স্বাক্ষর করা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন সরদার বলেন, ‘এটা যথাযথ সত্য। যুদ্ধের সময় আবুল ইসলামের বাবা দিনুর যে ভূমিকা ছিল তা খুবই বিতর্কিত।’

এ দিকে আবুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আমার বাবার নাম দীন ইসলাম। যুদ্ধের সময় এলাকায় যে কয়টা আওয়ামী লীগ পরিবার ছিল তার মধ্যে আমার বাবা একজন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সময় রিলিফ (ত্রাণ) কমিটির সদস্য ছিলেন।’

আবুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৯১ সালে আমি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ২০০৪ সাল থেকে টানা আমি উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। যারা দলে অনুপ্রবেশকারী তাঁরাই আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছেন।’

মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবুল ইসলামের বাবা যে রাজাকার ছিলেন তা আমার জানা নেই।’

বাঘারপাড়া : বাঘারপাড়ার রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেনকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় গত শনিবার বিকেলে রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে।

মানববন্ধনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন রায়পুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের বাবা মৃত মোহাম্মাদ আলী। ওই সময়ে তাঁর মেজো ভাই কাটা মোশারফ আল-বদর বাহিনীর প্রধান হয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক ও অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন। যুদ্ধের সময়ে মোশারফ একই ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর শেখের বড় ভাই জাহাঙ্গীর শেখকে ধরে খাজুরা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে পাশের চিত্রা নদীতে ভাসিয়ে দেন। এসব অভিযোগ তুলে বিল্লাল হোসেনের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

রায়পুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই বলেন, ‘বিল্লালের বাবা ছিলেন রাজাকার। তাঁর ভাই মোশারফ আমার বড় ভাই মোক্তার হোসনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ৭৫ এর পরে মোশারেফ বিএনপিতে যোগ দিয়ে গ্রামের নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণী বলেন, ‘একজন রাজাকারপুত্র কিভাবে স্বাধীনতার পক্ষের দল থেকে মনোনয়ন পান বুঝি না। এভাবে চলতে থাকলে দেশে আবারও অপশক্তির রাজত্ব শুরু হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভুয়া। আওয়ামী লীগ করার কারণে ২০০৪ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কোনো কাজ করেননি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী বলেন, ‘স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিৎ কুমার রায়কে এক সঙ্গে বসে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি না আসায় সভা হয়নি। ইউনিয়ন থেকে যেভাবে তালিকা এসেছে সেভাবেই জেলায় পাঠানো হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত