স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণের বিধান

আবদুল আযীয কাসেমি
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯: ৩০
Thumbnail image

বিয়ে মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি যেমন বৈধভাবে নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণ করার মাধ্যম, তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও বটে। এ দায়িত্ব পালনে ভুল বা অবহেলা করা অমার্জনীয় অপরাধ। এ জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলা স্বামীদের স্ত্রীদের অভিভাবক বানিয়েছেন। তার অভিভাবক হওয়ার কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘যেহেতু তারা স্ত্রীদের জন্য নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে।’ (সুরা নিসা: ৩৪) এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ভরণপোষণ দেওয়া স্বামীর প্রতি আল্লাহপ্রদত্ত দায়িত্ব। এই দায়িত্বে অবহেলা করলে সে অভিভাবকত্ব হারায়।

স্বামী এ দায়িত্ব আদায় করার কারণে স্ত্রীর ওপর অনুগ্রহ করছে না; বরং এটা তার প্রাপ্য অধিকার এবং স্বামীর কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস উদ্ধৃত করি। মুআবিয়া আল কুশাইরি নামের এক সাহাবি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, স্ত্রীদের প্রতি আমাদের কী কী কর্তব্য রয়েছে?’ মহানবী (সা.) বললেন, ‘তুমি খেলে তাকেও খাওয়াবে। তুমি কাপড় পরলে তাকেও পরাবে। তার চেহারায় আঘাত করবে না। তাকে গালাগাল করবে না। কখনো রাগান্বিত হয়ে তাকে ঘর থেকে বের করে দেবে না। (সর্বোচ্চ, ঘরে রেখে পৃথক বিছানায় থাকবে)।’ (আহমদ, আবু দাউদ)

খরচ না দিলে স্ত্রী চাইলে স্বামীর অজান্তেই পরিমাণমতো খরচ তার সম্পদ থেকে নিতে পারবে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উতবা একবার নবীজির কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আবু সুফিয়ান অত্যন্ত কৃপণ। আমার ও সন্তানদের পর্যাপ্ত খরচ দেয় না। তবে আমি মাঝেমধ্যে তার অজান্তে কিছু নিয়ে নিই (এভাবেই আমাদের প্রয়োজন পূরণ করি)।’ নবীজি তাকে বললেন, ‘তোমার ও তোমার সন্তানদের জন্য ন্যায়ানুগভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ খরচ তুমি নিতে পারো।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ভরণপোষণের পরিমাণের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অবস্থা বিবেচিত হবে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে গরিব হলে একজন গরিব সাধারণত যে পরিমাণ খরচ করে থাকে, সে পরিমাণই করতে বাধ্য থাকবে। উভয় জন মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত হলে একজন মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত তার সামাজিক মর্যাদার দিকে লক্ষ রেখে যে পরিমাণ স্ত্রীর জন্য খরচ করে, সে পরিমাণই খরচ করতে বাধ্য থাকবে। উভয়ের অবস্থায় যদি ভিন্নতা থাকে একজন উচ্চবিত্ত, আরেকজন নিম্নবিত্ত, তাহলে মাঝামাঝি একটি পরিমাণ নির্ধারিত হবে। এসব ব্যাপারে ইসলাম সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্ক চাপিয়ে দেয়নি; বরং সামাজিকভাবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ন্যায়ানুগ ভরণপোষণ দিতে হবে। তবে অনেক স্কলার বলেছেন, এ ক্ষেত্রে স্বামীর অবস্থাই বিবেচ্য; অর্থাৎ স্বামী যদি অবস্থাসম্পন্ন হয়, তাহলে সে তার মতো করে খরচ করবে। গরিব ও নিম্নবিত্ত হলে সে অনুপাতে খরচ করবে। (হিদায়া)

হজ ও ওমরাহ সফরে যাওয়ার সময় স্ত্রী ও অপ্রাপ্ত বয়সের সন্তানদের প্রয়োজনীয় খরচ দেওয়া আবশ্যক। যদি কারও কাছে তার অনুপস্থিতির সময়ে স্ত্রী-সন্তানদের খরচ দেওয়ার সামর্থ্য না থাকে, তার জন্য হজ ফরজই হয় না। এমন ব্যক্তিদের জন্য স্ত্রী-সন্তানদের ক্ষুধার্ত রেখে হজ ও ওমরাহর সফরে যাওয়া বৈধ নয়। সুতরাং দাওয়াত, তাবলিগসহ অন্যান্য সফরে যেতে হলে যে স্ত্রী-সন্তানের পর্যাপ্ত খরচ দিতে হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত