নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এখন যে জিনিসটা সবচেয়ে আমাদের জন্য পীড়াদায়ক, সেটা হচ্ছে মেয়েদের ওপর সহিংসতা। যদিও আমরা আইন করে দিয়েছি। আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন করেছি, আমরা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করেছি। কিন্তু শুধু আইন করলে হবে না, এখানে মানসিকতাওবদলাতে হবে। চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে।’

‘বেগম রোকেয়া দিবস-২০২১’ ও ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত এ অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ‘বেগম রোকেয়া পদক’ বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন। এ সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুরুষশাসিত সমাজ আমরা বলি। কিন্তু মেয়েদের ছাড়া পুরুষেরা কি পথ চলতে পারে? পারে না। মায়ের পেটে জন্ম নিতে হবে, বোনের হাত ধরে হাঁটা শিখে, বড় হয়ে স্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল থাকে, বৃদ্ধ হয়ে গেলে তো কন্যাসন্তানই বেশি দেখে, সেই যত্ন নেয় বেশি, এটাও তাদের মনে রাখতে হবে।’

বেগম রোকেয়া আমাদের আদর্শ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি নারীদের পথ দেখিয়েছেন। তাঁর সময়ে সমাজে নারীদের লেখাপড়া যেন অপরাধ ছিল। সেই অবস্থা থেকে তিনি নারী জাগরণে কাজ করেছেন। এখন মেয়েরা কোনো দিক থেকে পিছিয়ে নেই। বরং পুরুষরা যেটা পারে নারীরা তার থেকে আরও ভালো পারে, বেশি পারে; এতে কোনো সন্দেহ নাই। সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।’

নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর পাঁচ বিশিষ্ট নারীকে বেগম রোকেয়া পদক দেওয়া হয়েছে। নারীশিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য কুমিল্লা জেলার অধ্যাপিকা হাসিনা জাকারিয়া বেলা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় যশোরের অর্চনা বিশ্বাস, নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখায় কুমিল্লার শামসুন্নাহার রহমান পরাণ (মরণোত্তর), সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোকেয়া হলের প্রভোস্ট জিনাত হুদা এবং পল্লি উন্নয়নে অবদান রাখায় কুষ্টিয়ার গবেষক সারিয়া সুলতানা পদক পেয়েছেন।

পদকপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৪ লাখ টাকার চেক, রেপ্লিকাসহ একটি ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণপদক ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।

মেয়ের জন্য দোয়া চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

গতকাল ৯ ডিসেম্বর ছিল প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন। এ দিনে সমাজকর্মী মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘একটু অনুরোধ করব। আজকে আমার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন। সবার কাছে দোয়া চাই।’

অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পুতুল কাজ করছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটা বিরাট পরিবর্তন পুতুল আনতে পেরেছেন। একসময় অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা জন্ম নিলে বাবা-মা তাদের লুকিয়ে রাখত। বলতে পারত না। এখন কেউ আর লুকিয়ে রাখে না। বরং গর্বের সঙ্গে বলে।