দেশে প্রথমবারের মতো জাঁকজমকপূর্ণভাবে জাতীয় ভোটার দিবস পালিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ১ মার্চ। সরকারের সিদ্ধান্তে পরের বছর থেকে প্রতিবছর ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবস পালন করা হচ্ছে। তবে দিন দিন দিবসটি জৌলুশ হারাচ্ছে। আগে দিবসটি উপলক্ষে সকালে শোভাযাত্রাসহ দিনব্যাপী নানা আয়োজন থাকত। ব্যয় সাশ্রয় করতে এবার শোভাযাত্রাও করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার ভোটার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সঠিক তথ্যে ভোটার হব, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব’। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভোটার দিবসের আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভোটার দিবসের উদ্বোধন হবে বেলা সাড়ে ৩টায়। তারপর বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা আছে। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। তিনি বলেন, ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য এবার শোভাযাত্রা হবে না। দিবসটির গুরুত্ব কমল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমেনি, বরং বেড়েছে। র‍্যালি (শোভাযাত্রা) না করলেই গুরুত্ব কমে যায় না।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম শুরু করা সব অনুষ্ঠানই একটু জাঁকজমকভাবে করা হয়। কোনো কমিশন এটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেবে, কোনো কমিশন দেবে না। আবার বাজেটের একটা বিষয় আছে। সেই কারণেও হয়তো জাঁকজমকপূর্ণ হবে না। আবার যেহেতু কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, সে কারণেও হতে পারে।’

অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ সামনে রেখে এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে। একটি স্মার্ট দেশের প্রথম ধাপ হচ্ছে স্মার্ট নাগরিক। স্মার্ট দেশ হতে গেলে স্মার্ট ভোটার লাগবে। ভোটারদের স্মার্ট করার জন্য ইসির কোনো ভূমিকা থাকবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে এই কাজ করছি। নাগরিকদের ফিঙ্গার প্রিন্ট, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নিয়ে তথ্যভান্ডারে রাখা হচ্ছে। এর ফলে যাতে কেউ দুবার ভোটার হতে না পারে, সে ব্যবস্থা করছি।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটার আছে কিন্তু ভোট নেই, ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। ভোট সঠিকভাবে গণনার কোনো নিশ্চয়তাও নেই। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছেন একটি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র সাকিব আল হাসান। তিনি বলেন, ‘ভালো পরিবেশেই ভোট দিয়েছি। তবে আগে নির্বাচন নিয়ে যে উৎসব ছিল, এবার তেমনটা চোখে পড়েনি।’

২০২০ সালে ভোটার হয়েছেন ঢাকায় ফল বিক্রেতা মো. রায়হান। তিনি জানান, গত সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য গ্রামের বাড়ি বরিশাল যান। ভোট গ্রহণের দিন কয়েক বন্ধু মিলে কেন্দ্রে গেলেও ‘গন্ডগোলের’ কারণে ভোট দেননি। রায়হানের ভাষ্য, ভোট দিলেও যা, না দিলেও তা। তাই পরে আর ভোট দিতে আগ্রহ হয়নি তাঁর।

গত ২১ জানুয়ারি ইসির ঘোষিত খসড়া তালিকা অনুযায়ী, দেশে ভোটার এখন ১২ কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার ১৩৭, নারী ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৯ এবং হিজড়া ৯২৪ জন। আজ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। এতে এই সংখ্যা কমবেশি হতে পারে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটার বাড়লেও ভোটারের মর্যাদা তো বাড়েইনি, বরং কমেছে। ভোটার দিবসটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে।