শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ঋণের বিশাল প্রকল্প মাউশির

রাহুল শর্মা, ঢাকা
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০: ৪৪
Thumbnail image

দেশের মাধ্যমিক স্তরে ১ কোটির বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বেশ কিছু কৌশল নির্ধারণ করা আছে। সেসব কৌশল বাস্তবায়নে এবার ৩ হাজার ৩০৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন (লেইস)’। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, দেশের মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমিয়ে আনা, শিখনের গতি বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানো।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। মাউশি সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে এটিই মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য নেওয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রকল্প ব্যয়ের ৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক, আর সরকার দেবে ৪৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে নেওয়া এই প্রকল্প গত ৩১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। এরপর ৩ ডিসেম্বর প্রকল্প পাসের অফিস আদেশ জারি করে এনইসি-একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগ।

প্রকল্পের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, এ প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫৭ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ পাবেন ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯০ জন শিক্ষক। আর স্থানীয় প্রশিক্ষণে ভালো ফল করা ১ হাজার ৪৬৭ জন শিক্ষক বিদেশে প্রশিক্ষণ পাবেন। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫৮ শতাংশ।

প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৩৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে। প্রতিটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে থাকবে ডেস্কটপ, ইউপিএস, স্মার্ট টিভি, ওয়্যারলেস মাইক্রোফোনসহ স্পিকার, রাউটার, নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার ও নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার।

এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের জন্য কম্পিউটার ও অফিস সামগ্রী কেনা হবে। এসব কেনাকাটার জন্য প্রকল্পে মূলধন ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাকি অর্থ পরিবেশ দিবস উদ্‌যাপন, গবেষণা, পরামর্শক সেবা, লাইব্রেরি উন্নয়ন, সেমিনার, ভেন্যু ভাড়া ইত্যাদি খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. আব্দুল মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এটিই মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কাজ করা হবে। আশা করছি, শিগগির প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের মধ্য দিয়ে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।’

দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রায় ১৯ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে ৮৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। তবে স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটির বেশি। মাউশির তথ্য বলছে, মাধ্যমিকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে বেশ পিছিয়ে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থীর ইংরেজি দক্ষতা খুবই খারাপ। একই শ্রেণিতে গণিতে ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থা খারাপ বা গড়পড়তা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই শিখন-প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে লেইস প্রকল্পটি নেওয়া হয়।

প্রকল্পের পটভূমিতে বলা হয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈশ্বিক রূপান্তরের ফলে মাধ্যমিক শিক্ষায় আইসিটির প্রয়োগ এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে সংগতি রেখে মাধ্যমিক শিক্ষার আরও রূপান্তর প্রয়োজন। এ ছাড়া মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি, আইসিটি ইত্যাদি বিষয়ের যোগ্য শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ যেন মানসম্মত হয় সেদিকে নজর দিতে আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন। এ দুটি ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়ে যেন মানসম্মত হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কেননা, প্রশিক্ষণ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত