রাজিউল হাসান, ঢাকা
দেশে ১৯৮২ সালে জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়নের পর ওষুধশিল্পে অগ্রগতির জোর হাওয়া বইতে শুরু করে। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। প্রায় তিন শ ওষুধ কোম্পানি এখন দেশেই প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি করছে। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এসব ওষুধ। কিন্তু অর্জনের এই পালকে কলঙ্কের দাগও রয়েছে। শুধু ঢাকার বাজারেই যত ওষুধ রয়েছে, তার প্রায় ১০ শতাংশ মানহীন। এর মধ্যে কিছু ওষুধ ভেজালও।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, জাপানের কানাজাওয়া ইউনিভার্সিটি ও জার্মানির এবাহার্ড কার্ল ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক গবেষণাটি করেছেন। ৭ জানুয়ারি এই গবেষণা ও ফলাফলের নিবন্ধ বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী নেচার-এ প্রকাশ হয়েছে। গবেষণাটি মূলত হয়েছে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ও জাপানের কানাজাওয়া ইউনিভার্সিটির পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে।
গবেষণা নিবন্ধে গবেষকেরা মন্তব্য করেছেন, ঢাকার বাজারে মানহীন ও ভেজাল ওষুধের হার তুলনামূলক কম হলেও তা উদ্বেগজনক। এ ছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের তৈরি একই ধরনের ওষুধের ক্ষেত্রে গুণগত মানের পার্থক্য রোগীকে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
এ ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কোন কোন এলাকায় নিম্নমানের, মানহীন ও ভেজাল ওষুধ বেশি বিক্রি হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মানহীন-ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সব সময়ই তৎপর। ভেজাল ওষুধ পাওয়া গেলে মামলা দেওয়া হচ্ছে, নিবন্ধন বাতিল করা হচ্ছে। নিবন্ধনহীন ওষুধ বাজারজাত করা হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে অধিদপ্তর।
গুণমানের ঘাটতি রয়েছে অথবা সেবনের পর আশানুরূপ ফল দিতে ব্যর্থ কিংবা উভয় ত্রুটিই রয়েছে এমন ওষুধকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মানহীন ওষুধ বলে অভিহিত করে। এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারে মানহীন ও ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য উল্লেখ করার মতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, আফ্রিকার বাজারে প্রাপ্ত ওষুধের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশই মানহীন ও ভেজাল। আর এশিয়ার বাজারে এ সংখ্যা ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। সে তুলনায় বাংলাদেশের বাজারে থাকা মানহীন ও ভেজাল ওষুধের হার কম। তবে তাও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় উদ্বেগজনক।
গবেষণার জন্য গবেষকেরা তিনটি ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। এগুলো হলো ইসোমিপ্রাজল, সেফিক্সিম ও অ্যামোক্সিসিলিন-ক্লাভুলানিক অ্যাসিড। বিভিন্ন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামে এসব ওষুধ বাজারজাত করে থাকে। ব্যবহার, সহজলভ্যতা ও বৈশিষ্ট্যগত দিক বিবেচনায় এই ওষুধগুলো গবেষণার জন্য বাছাই করা হয়।
এসব ওষুধের মধ্যে ইসোমিপ্রাজল গ্যাস্ট্রোইসোফিগাল রিফ্লাক্সের (জিইআরডি) জন্য ব্যবহার হয়। সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় এই ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেফিক্সিম এবং অ্যামোক্সিসিলিন-ক্লাভুলানিক অ্যাসিড অ্যান্টিবায়োটিক। নিউমোনিয়া, প্রস্রাবের সংক্রমণসহ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে লক্ষণভেদে এসব ওষুধ ব্যবহার হয়।
গবেষণার অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের এপ্রিলে গবেষকেরা ৯ দিন ধরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ২১০টি ওষুধের দোকান থেকে ১৮৯টি ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করেন। ওই ২১০টি দোকানের মধ্যে একটির অবস্থান ছিল হাসপাতালের ভেতরে। বাকিগুলো পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা। খুচরা বিক্রেতাদের থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ নমুনা। ২০ দশমিক ৯ শতাংশ নমুনা এসেছে পাইকারি বিক্রেতার থেকে। সব মিলিয়ে ঢাকা উত্তর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ১০০টি নমুনা। বাকিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ থেকে। নমুনা সংগ্রহের সময় কোনো দোকান থেকেই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র চাওয়া হয়নি।
নমুনা সংগ্রহের সময় ওষুধের দোকানগুলোর ওষুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থাও পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকেরা। এ ক্ষেত্রে শুধু ১৩টি দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ছিল। ৪টির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা থাকলেও তা বন্ধ ছিল। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকান ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নেই এমন দোকানের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় সমান পাওয়া গেছে নমুনা সংগ্রহের সময়। নমুনা যাচাইয়ের সময় একই বাক্স থেকে বের করা একটি ইসোমিপ্রাজল নমুনায় ভিন্ন ব্যাচ নম্বর দেখা গেছে। দুটি নমুনার বাক্সে কোনো নির্দেশিকা পাওয়া যায়নি, যার একটি পরবর্তী সময়ে রাসায়নিক পরীক্ষায় ভেজাল প্রমাণিত হয়।
মোক্সিসিলিন-ক্লাভুলানিক অ্যাসিডের একটি নমুনায় নির্দেশিকায় বানান ভুল দেখা গেছে। এই অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ফিল্ম কোটেড হলেও ওই নমুনার বাক্সে থাকা কোনো ট্যাবলেটেই এমন আস্তরণ ছিল না। বরং ট্যাবলেটের ওপরের স্তরটি ময়লা ছিল। রাসায়নিক পরীক্ষায় এই নমুনাটিও ভেজাল বলে জানা গেছে।
এদিকে যেসব ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেফিক্সিম উৎপাদনকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের এই ওষুধ তৈরির নিবন্ধনই নেই। আরেক উৎপাদকের শুধু সেফিক্সিম ট্যাবলেট উৎপাদনের নিবন্ধন থাকলেও বাজারে তাদের তৈরি সেফিক্সিম ক্যাপসুল হরহামেশা পাওয়া যায়।
রাসায়নিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, সংগৃহীত নমুনাগুলোর মধ্যে ১৮টি মানহীন। এর মধ্যে আবার ২টি ভেজাল। অর্থাৎ সংগৃহীত নমুনাগুলোর সাড়ে ৯ শতাংশ মানহীন ও ভেজাল। আলাদা করে বললে, ১৮৯টি নমুনার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ মানহীন। আর ১ দশমিক ১ শতাংশ ভেজাল ওষুধ।
এই গবেষণায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের স্কুল অব মেডিসিনের ডিন ও ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিটা ওষুধই নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাঁরা যে তিনটি ওষুধ নিয়ে কাজ করেছেন, সেগুলো কক্ষ তাপমাত্রায় (সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) সংরক্ষণ করতে হয়। এতে ওষুধের গুণগত মান ঠিক থাকে। কিন্তু ঢাকার পরিবেশের তাপমাত্রা তো আর ২৫ ডিগ্রি থাকে না সব সময়। গরমে তা বেড়ে যায়। কাজেই ওষুধের গুণগত মানে এর প্রভাব পড়ে। এ কারণে ওষুধের দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা থাকা উচিত।
অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া আরও বলেন, ওষুধের দোকানগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখতে চায় না। দেশে এমনিতেই অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রিতে এই প্রবণতা আরও বাড়ছে। এতে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার কয়েকটি ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি নামীদামি ব্র্যান্ডের নকল ওষুধসহ ফয়সাল আহমেদ, সুমন চন্দ্র মল্লিক ও মো. লিটন গাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দেশে তৈরি ভেজাল ওষুধ ও বিদেশ থেকে চোরাইপথে আনা কালোবাজারির ওষুধ বিক্রির দায়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর আরমান নামের একজনকে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার আলেখারচর এলাকার প্রিয়াংকা ফার্মেসি থেকে আটক করে র্যাব।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফার্মেসিতে মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা থেকে বিক্রি হয়ে নকল ওষুধ সারা দেশে ছড়িয়ে যায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির সহসভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, নামকরা ওষুধ কোম্পানির নামে ভেজাল ওষুধ তৈরি করে বিক্রি করা হয়। খালি চোখে অনেক সময় সেগুলো আসল না নকল তা বোঝার উপায় থাকে না। তিনি আরও বলেন, ‘মিটফোর্ড এলাকায় নকল ওষুধ তৈরি ও বিক্রির একটি চক্র রয়েছে। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে মনিটরিং করি। ৫০০ টাকার কোনো ওষুধ যখন ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়, তখন সেটা নিঃসন্দেহে নকল। কারণ আসল ওষুধ এত কম দামে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। পয়সা কামানোর জন্য, বেশি লাভের জন্য মানুষ এতটা নিচে নামছে।’
দেশে ১৯৮২ সালে জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়নের পর ওষুধশিল্পে অগ্রগতির জোর হাওয়া বইতে শুরু করে। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। প্রায় তিন শ ওষুধ কোম্পানি এখন দেশেই প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি করছে। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এসব ওষুধ। কিন্তু অর্জনের এই পালকে কলঙ্কের দাগও রয়েছে। শুধু ঢাকার বাজারেই যত ওষুধ রয়েছে, তার প্রায় ১০ শতাংশ মানহীন। এর মধ্যে কিছু ওষুধ ভেজালও।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, জাপানের কানাজাওয়া ইউনিভার্সিটি ও জার্মানির এবাহার্ড কার্ল ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক গবেষণাটি করেছেন। ৭ জানুয়ারি এই গবেষণা ও ফলাফলের নিবন্ধ বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী নেচার-এ প্রকাশ হয়েছে। গবেষণাটি মূলত হয়েছে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ও জাপানের কানাজাওয়া ইউনিভার্সিটির পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে।
গবেষণা নিবন্ধে গবেষকেরা মন্তব্য করেছেন, ঢাকার বাজারে মানহীন ও ভেজাল ওষুধের হার তুলনামূলক কম হলেও তা উদ্বেগজনক। এ ছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের তৈরি একই ধরনের ওষুধের ক্ষেত্রে গুণগত মানের পার্থক্য রোগীকে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
এ ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কোন কোন এলাকায় নিম্নমানের, মানহীন ও ভেজাল ওষুধ বেশি বিক্রি হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মানহীন-ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সব সময়ই তৎপর। ভেজাল ওষুধ পাওয়া গেলে মামলা দেওয়া হচ্ছে, নিবন্ধন বাতিল করা হচ্ছে। নিবন্ধনহীন ওষুধ বাজারজাত করা হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে অধিদপ্তর।
গুণমানের ঘাটতি রয়েছে অথবা সেবনের পর আশানুরূপ ফল দিতে ব্যর্থ কিংবা উভয় ত্রুটিই রয়েছে এমন ওষুধকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মানহীন ওষুধ বলে অভিহিত করে। এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারে মানহীন ও ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য উল্লেখ করার মতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, আফ্রিকার বাজারে প্রাপ্ত ওষুধের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশই মানহীন ও ভেজাল। আর এশিয়ার বাজারে এ সংখ্যা ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। সে তুলনায় বাংলাদেশের বাজারে থাকা মানহীন ও ভেজাল ওষুধের হার কম। তবে তাও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় উদ্বেগজনক।
গবেষণার জন্য গবেষকেরা তিনটি ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। এগুলো হলো ইসোমিপ্রাজল, সেফিক্সিম ও অ্যামোক্সিসিলিন-ক্লাভুলানিক অ্যাসিড। বিভিন্ন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামে এসব ওষুধ বাজারজাত করে থাকে। ব্যবহার, সহজলভ্যতা ও বৈশিষ্ট্যগত দিক বিবেচনায় এই ওষুধগুলো গবেষণার জন্য বাছাই করা হয়।
এসব ওষুধের মধ্যে ইসোমিপ্রাজল গ্যাস্ট্রোইসোফিগাল রিফ্লাক্সের (জিইআরডি) জন্য ব্যবহার হয়। সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় এই ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেফিক্সিম এবং অ্যামোক্সিসিলিন-ক্লাভুলানিক অ্যাসিড অ্যান্টিবায়োটিক। নিউমোনিয়া, প্রস্রাবের সংক্রমণসহ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে লক্ষণভেদে এসব ওষুধ ব্যবহার হয়।
গবেষণার অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের এপ্রিলে গবেষকেরা ৯ দিন ধরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ২১০টি ওষুধের দোকান থেকে ১৮৯টি ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করেন। ওই ২১০টি দোকানের মধ্যে একটির অবস্থান ছিল হাসপাতালের ভেতরে। বাকিগুলো পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা। খুচরা বিক্রেতাদের থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ নমুনা। ২০ দশমিক ৯ শতাংশ নমুনা এসেছে পাইকারি বিক্রেতার থেকে। সব মিলিয়ে ঢাকা উত্তর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ১০০টি নমুনা। বাকিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ থেকে। নমুনা সংগ্রহের সময় কোনো দোকান থেকেই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র চাওয়া হয়নি।
নমুনা সংগ্রহের সময় ওষুধের দোকানগুলোর ওষুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থাও পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকেরা। এ ক্ষেত্রে শুধু ১৩টি দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ছিল। ৪টির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা থাকলেও তা বন্ধ ছিল। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকান ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নেই এমন দোকানের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় সমান পাওয়া গেছে নমুনা সংগ্রহের সময়। নমুনা যাচাইয়ের সময় একই বাক্স থেকে বের করা একটি ইসোমিপ্রাজল নমুনায় ভিন্ন ব্যাচ নম্বর দেখা গেছে। দুটি নমুনার বাক্সে কোনো নির্দেশিকা পাওয়া যায়নি, যার একটি পরবর্তী সময়ে রাসায়নিক পরীক্ষায় ভেজাল প্রমাণিত হয়।
মোক্সিসিলিন-ক্লাভুলানিক অ্যাসিডের একটি নমুনায় নির্দেশিকায় বানান ভুল দেখা গেছে। এই অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ফিল্ম কোটেড হলেও ওই নমুনার বাক্সে থাকা কোনো ট্যাবলেটেই এমন আস্তরণ ছিল না। বরং ট্যাবলেটের ওপরের স্তরটি ময়লা ছিল। রাসায়নিক পরীক্ষায় এই নমুনাটিও ভেজাল বলে জানা গেছে।
এদিকে যেসব ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেফিক্সিম উৎপাদনকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের এই ওষুধ তৈরির নিবন্ধনই নেই। আরেক উৎপাদকের শুধু সেফিক্সিম ট্যাবলেট উৎপাদনের নিবন্ধন থাকলেও বাজারে তাদের তৈরি সেফিক্সিম ক্যাপসুল হরহামেশা পাওয়া যায়।
রাসায়নিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, সংগৃহীত নমুনাগুলোর মধ্যে ১৮টি মানহীন। এর মধ্যে আবার ২টি ভেজাল। অর্থাৎ সংগৃহীত নমুনাগুলোর সাড়ে ৯ শতাংশ মানহীন ও ভেজাল। আলাদা করে বললে, ১৮৯টি নমুনার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ মানহীন। আর ১ দশমিক ১ শতাংশ ভেজাল ওষুধ।
এই গবেষণায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের স্কুল অব মেডিসিনের ডিন ও ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিটা ওষুধই নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাঁরা যে তিনটি ওষুধ নিয়ে কাজ করেছেন, সেগুলো কক্ষ তাপমাত্রায় (সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) সংরক্ষণ করতে হয়। এতে ওষুধের গুণগত মান ঠিক থাকে। কিন্তু ঢাকার পরিবেশের তাপমাত্রা তো আর ২৫ ডিগ্রি থাকে না সব সময়। গরমে তা বেড়ে যায়। কাজেই ওষুধের গুণগত মানে এর প্রভাব পড়ে। এ কারণে ওষুধের দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা থাকা উচিত।
অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া আরও বলেন, ওষুধের দোকানগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখতে চায় না। দেশে এমনিতেই অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রিতে এই প্রবণতা আরও বাড়ছে। এতে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার কয়েকটি ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি নামীদামি ব্র্যান্ডের নকল ওষুধসহ ফয়সাল আহমেদ, সুমন চন্দ্র মল্লিক ও মো. লিটন গাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দেশে তৈরি ভেজাল ওষুধ ও বিদেশ থেকে চোরাইপথে আনা কালোবাজারির ওষুধ বিক্রির দায়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর আরমান নামের একজনকে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার আলেখারচর এলাকার প্রিয়াংকা ফার্মেসি থেকে আটক করে র্যাব।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফার্মেসিতে মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা থেকে বিক্রি হয়ে নকল ওষুধ সারা দেশে ছড়িয়ে যায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির সহসভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, নামকরা ওষুধ কোম্পানির নামে ভেজাল ওষুধ তৈরি করে বিক্রি করা হয়। খালি চোখে অনেক সময় সেগুলো আসল না নকল তা বোঝার উপায় থাকে না। তিনি আরও বলেন, ‘মিটফোর্ড এলাকায় নকল ওষুধ তৈরি ও বিক্রির একটি চক্র রয়েছে। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে মনিটরিং করি। ৫০০ টাকার কোনো ওষুধ যখন ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়, তখন সেটা নিঃসন্দেহে নকল। কারণ আসল ওষুধ এত কম দামে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। পয়সা কামানোর জন্য, বেশি লাভের জন্য মানুষ এতটা নিচে নামছে।’
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে