Ajker Patrika

ভোগান্তি কমাচ্ছে মাড়াই মেশিন

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ০৯
ভোগান্তি কমাচ্ছে মাড়াই মেশিন

একসময় কৃষিতে ধান কাটা ও মাড়াই করা ছিল বড় সমস্যা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা কাটতে শুরু করেছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ছোঁয়া লাগার পর একদিকে যেমন কৃষকের ভোগান্তি কমেছে, অন্যদিকে বেঁচেছে শ্রমিকের খরচ। এ ছাড়া অল্প সময়েই এখন শস্য কেটে মাড়াই করে ঘরে তোলা যাচ্ছে। যান্ত্রিকীকরণের এই ছোঁয়া সবচেয়ে বেশি লেগেছে নওগাঁয়। এই জেলা থেকে বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ২ হাজার ধানমাড়াইয়ের মেশিন (পাওয়ার থ্রেসার) সরবরাহ হচ্ছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর এসব মেশিন তৈরিতে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে শিল্পটি বিকশিত হতে পারছে না।

এক যুগ আগে নওগাঁর পত্নীতলার নজিপুর বাজার, ধামইরহাট উপজেলা সদর ও বদলগাছী উপজেলা বাজারে ধানমাড়াইয়ের মেশিনের কারখানা গড়ে ওঠে। এরপর মাড়াই মেশিনের চাহিদা কেবলই বেড়েছে। এখন এই তিন উপজেলায় কারখানা রয়েছে প্রায় ৮২টি। এসব কারখানা বছরে প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০টি ধানমাড়াইয়ের মেশিন তৈরি ও বিপণন করছে। এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে সাত শতাধিক মানুষের। স্থানীয়ভাবে এসব মেশিনকে বঙ্গা বলে।

নজিপুর বাজারে ২০০৮ সালে নজিপুর ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নাম দিয়ে ধানমাড়াই মেশিনের কারখানা করেন হারুনুর রশিদ। সে সময় ছোট আকারে ধানমাড়াই মেশিন তৈরি করতেন তিনি।

ধানের সঙ্গে খড়কুটো থাকায় আলাদা করে বাতাস করতে হতো। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাড়াই যন্ত্রে কিছুটা আধুনিকায়ন শুরু করেন তিনি। ২০১০ সালে অটো মাড়াই মেশিন তৈরি শুরু করেন হারুনুর। বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক বলে জানান তিনি। হারুনুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কারখানায় ১৮ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। মাড়াই মেশিনটি তৈরি করতে কারিগরদের ১৮-২০ হাজার টাকায় চুক্তি দেওয়া হয়। এর সঙ্গে তিন বেলা খাবার দিতে হয়। শ্যালো মেশিনসহ মাড়াই মেশিনের ওজন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কেজি। মেশিন বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ থাকছে না বললেই চলে।

হারুনুর রশিদ বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়ায় কৃষকদের মাঝে কৃষি যন্ত্রাংশ নেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও আধুনিক মানের মাড়াই মেশিন তৈরি করা সম্ভব হবে। এসব মাড়াই মেশিনে ধান মাড়াই করা হলে খড়গুলো কেটে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। খড় যেন কেটে টুকরো না হয়ে গোটা খড় বেরিয়ে আসে, ভবিষ্যতে এমন মাড়াই মেশিন তৈরির চেষ্টা করছি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিটি ধান মাড়াই মেশিন তৈরিতে পাঁচ-ছয়জন শ্রমিকের পাঁচ-সাত দিন সময় লাগে। করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর এসব মেশিন তৈরিতে ইস্পাতের শিট, অ্যাঙ্গেল, পাতিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এক বছর আগে প্রতি কেজি শিটের দাম ছিল ৯২-৯৩ টাকা। এখন তা ১৪৮-১৫০ টাকা কেজি। অ্যাঙ্গেল ছিল ৫৬-৫৮ টাকা কেজি, যা এখন ৭৭-৭৮ টাকা কেজি। পাতি ছিল ৪২-৪৩ টাকা কেজি, বর্তমানে তা ৬৮ টাকা কেজি।

এ ছাড়া শ্যালো মেশিনের ৩২ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিনের দাম ছিল ৪২ হাজার টাকা। এখন তা ৫৩ হাজার টাকা। ৩৬ হর্স পাওয়ার চাংচাই মডেলের ইঞ্জিনের দাম ৬২ হাজার থেকে বেড়ে ৭৮ হাজার টাকা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৬ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিনের বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন শ্যালো মেশিনের দাম আগে ছিল ৮২ হাজার টাকা, যা এখন ৯৭ হাজার টাকা। প্রতিটি ধান মাড়াই মেশিনের দাম ২ লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে ২ হাজার মাড়াই মেশিনের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। ধান মাড়াইয়ের এসব মেশিন দিয়ে ধান পরিষ্কারও করা যায়। বোরো ও আমন মৌসুমে মাড়াই মেশিন বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, এসব মাড়াই মেশিন বেশি বিক্রি হয় নোয়াখালী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কৃষ্টিয়া, মেহেরপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায়। ধান মাড়াইয়ের পাশাপাশি এসব মেশিন দিয়ে সরিষা, তিল, তিসি, গম, ধনিয়া ও কালাই মাড়াই করা সম্ভব।

নজিপুর বঙ্গা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম রেজা বলেন, ‘আমরা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। করোনা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী আমাদের কাঁচামাল বাকিতে দিচ্ছেন না। আমরা যতটুকু পারছি নিজেদের চেষ্টায় বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে মালামাল কিনছি। বেসরকারি সংস্থা থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করছে না। ব্যাংক থেকে বলা হয় জামানত দিতে। কিন্তু আমাদের পক্ষে ব্যাংকের চাহিদামতো জামানত দেওয়া সম্ভব না। যদি সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হতো, তাহলে আমাদের ব্যবসার পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব হতো।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এখানে যথেষ্ট ভালো ও মানসম্মত পাওয়ার থ্রেসার তৈরি হয়। কর্তৃপক্ষ এসে কারখানাগুলো দেখে গেছে। আমরা এ শিল্পকে আরও সম্প্রসারণের জন্য চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এ শিল্পটা আরও সম্প্রসারিত হোক। কোনো উদ্যোক্তার ঋণের প্রয়োজন হলে আমরা চেষ্টা করব ব্যাংক যেন সহজ শর্তে ঋণ দেয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত