Ajker Patrika

খাল ভরাট, ডুবে থাকে শহর

জাহিদ হাসান, যশোর
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯: ৪১
খাল ভরাট, ডুবে থাকে শহর

যশোর শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদ হয়ে শহরের উত্তরাংশে এবং মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে দক্ষিণাংশে পানি নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু গত এক যুগ শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদীতে নামতে পারছে না। দেড় কিলোমিটারের একটি খাল এবং রেললাইনের তিনটি কালভার্ট বেদখল ও ভরাটের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অল্প বৃষ্টিতেই নিমজ্জিত হচ্ছে শহরের দক্ষিণাংশ। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে ওই এলাকার প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা। দখল হওয়া খাল, কালভার্ট উদ্ধার ও সংস্কারে পৌর কর্তৃপক্ষ আহ্বান জানালেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সাড়া মেলেনি।

যশোর জেলা শহরের খড়কি এলাকার বাসিন্দা প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘খড়কি এলাকাটা শহরের অন্য জায়গার চেয়ে তুলনামূলক নিচু। রাস্তার পাশে পয়োনিষ্কাশনের নালা দিয়ে অন্য এলাকার পানি আসে। ওই পানি বের হতে পারছে না। আবার পানি বের হওয়ার কালভার্ট দখল, খাল ভরাটের কারণে পানি জমে থাকছে। জলাবদ্ধতার কারণে বিটুমিনের আস্তরণ উঠে রাস্তার মধ্যে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এক যুগেও সমস্যার সমাধান হয়নি।’

গত মঙ্গলবার সকালে শহরের খড়কি এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহ আবদুল করিম সড়কের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এম এম) কলেজের দক্ষিণ ফটক থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি, কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমেছে। জুতা হাতে নিয়ে অনেককে পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। খড়কি দক্ষিণপাড়া ও পশ্চিমপাড়া, হাজামপাড়া, খড়কি রেললাইন পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

খড়কি কলাবাগান পাড়া এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ও রুহুল জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে তাঁরা ওই এলাকায় বসবাস করছেন। একসময় এলাকায় জলাবদ্ধতা হতো না। পরে পানি নিষ্কাশনের পথ দখল ও ভরাট হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই ডুবে যায় এলাকাটি।

এদিকে যশোর পৌর কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসী মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে পানি নামতে না পারার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

খাল দখল
শহরের গাজীর বাজার-চাঁচড়াগামী সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের মাধ্যমে পানি মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে খালটির বিভিন্ন জায়গায় মাটি ফেলে আড় বাঁধ দিয়ে চলাচলের অস্থায়ী রাস্তা নির্মাণ করেছে স্থানীয়রা। দখল-দূষণে খালটি এখন মৃতপ্রায়। খালটি সংস্কার বা উদ্ধারে উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না। উল্টো এবার সড়ক উন্নয়নের নামে ভরাট শুরু করেছে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ। যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক ছয় লেন করার জন্য খালটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। পয়োনিষ্কাশন নালার জায়গা রেখে খালটি ভরাট করার অনুরোধ জানিয়ে সওজকে গত বছর চিঠি দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ, কিন্তু ফল মেলেনি। 

৩ কালভার্টের দুটি ভরাট, অন্যটি বেদখল 
শহরের দক্ষিণাংশে রয়েছে খুলনা-বেনাপোল ও খুলনা-ঢাকা রুটের রেললাইন। রেললাইনের এই অংশে তিনটি কালভার্ট রয়েছে। খড়কি কলাবাগান, পশ্চিমপাড়া ও খড়কি পীরবাড়ি কবরস্থানের সামনে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ওই কালভার্টগুলোর। এর মধ্যে খড়কি কলাবাগান ও পশ্চিমপাড়ার কালভার্টটি ভরাট হয়ে গেছে। ভরাট হওয়ার কারণে বর্তমানে খুব ধীরগতিতে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। আর খড়কি পীরবাড়ি এলাকার কালভার্টটির দুই মুখ বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এই তিন কালভার্ট দিয়ে খড়কি এলাকার পানি খাল হয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। এর মধ্যে ভরাটের কারণে দুটি কালভার্টের মুখ ছোট হয়ে গেছে। আর পীরবাড়ি এলাকায় মাছ চাষের জন্য কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন হাসান মিলন মিনু নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হাসান মিলন বলেন, ‘আমরা কোনো কালভার্ট বন্ধ করিনি। পুরোনো কালভার্ট দেবে গেছে। পরে রেল বিভাগ ঢালাই করার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, ‘খড়কি অঞ্চলে রেলের কালভার্ট দখল ও ভরাটের কারণে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। আবার খালও ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়া শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।’

যশোর রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গৌতম বিশ্বাস বলেন, ‘আমি তিনটি কালভার্ট পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। যে দুটি সংস্কারের দরকার, সেটা আমরা দপ্তরে জানিয়েছি। আর যে কালভার্টটি দখলে রয়েছে, সেটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত