পথ হারানো মেয়েটিই এখন পথপ্রদর্শক

অর্চি হক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১০: ২৭
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১০: ৪৮

কারও স্টলে বিক্রি হচ্ছে বাহারি রঙের পোশাক, কোনো স্টলে গয়নাগাটি-প্রসাধনী, কোথাও আবার আচার-পিঠাসহ নানা ধরনের খাবার। ক্রেতারা আসছেন, দেখছেন, দরদাম করে কিনে নিচ্ছেন সেগুলো। আর একটু একটু করে আত্মবিশ্বাস জমা হচ্ছে পসরা সাজিয়ে বসা বিক্রেতাদের বুকে। বলছি, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ‘হুর নুসরাত শরৎ উৎসব’ মেলায় অংশ নেওয়া নারী উদ্যোক্তাদের কথা।

তাঁরা কেউই প্রচলিত অর্থে ব্যবসায়ী নন— কেউ গৃহিণী, কেউবা শিক্ষার্থী। কিন্তু সবার স্বপ্ন সফল উদ্যোক্তা হওয়া। এই স্বপ্ন বোনার পেছনে যিনি আছেন, তিনি হলেন ফ্যাশন ব্র‍্যান্ড হুর নুসরাতের স্বত্বাধিকারী নুসরাত আক্তার লোপা। অর্ধশত নারী উদ্যোক্তাকে নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

আজকের পত্রিকাকে নুসরাত আক্তার লোপা বলেন, ‘মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা হাতে নিয়ে আমি হুর নুসরাতের যাত্রা শুরু করেছিলাম। এখন আমাদের কারখানায় সাড়ে তিন শর মতো কর্মী কাজ করছেন। সামাজিক মাধ্যমে হুর নুসরাতের অনুসারী ১০ লাখের বেশি। শূন্য থেকে শুরু করে বারবার হোঁচট খেয়ে আমাকে এ জায়গায় পৌঁছাতে হয়েছে। সে সময়ের কথা চিন্তা করেই আমি নতুন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছি। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে যাঁরা এগোতে পারছেন না, তাঁদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি।’

মেলায় অংশ নেওয়া গৃহিণী তাসনিম আক্তার বলেন, ‘ফেসবুকে নুসরাত আপাকে দেখে দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন মাথায় চেপে বসে। শূন্য হাতেও যে কিছু করা যায়, সেই পথটা তিনিই দেখিয়েছেন।’

যিনি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের পথ দেখাচ্ছেন, সেই নুসরাত আক্তারের যাত্রাটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। নুসরাত বলেন, ‘আমরা চার বোন, কোনো ভাই নেই। ছোটবেলা থেকেই শুনতে হয়েছে, ভাই না থাকলে চলবে কী করে, বাবা-মা বুড়ো হয়ে গেলে দেখাশোনা করবে কে? এসব শুনতে শুনতে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সংকল্পটা আমার ভেতরে চলে এসেছিল।’

নুসরাতের বেড়ে ওঠা ফেনীতে। উচ্চমাধ্যমিকের পরে চলে আসেন ঢাকায়। ভর্তি হন লালমাটিয়া কলেজে। স্নাতক প্রথম বর্ষেই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। এরপর স্বামী, সন্তান, সংসার সামলে দিন কাটত নুসরাতের। কিন্তু স্বাবলম্বী হওয়ার সংকল্পটাও পিছু ছাড়ছিল না। সে কারণেই একটি মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করে বসেন। সেই চাকরিটা হয়েও যায়। শুরুতেই ছিল ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ পর্ব।

নুসরাত বলেন, ‘প্রশিক্ষণের ১৩তম দিনে অফিসে যাওয়ার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আমাকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিল। আমিও পথ হারিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। চাকরিটার সেখানেই পরিসমাপ্তি। এরপর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। ঘুমের ওষুধ খেয়ে সারা দিন ঘুমিয়ে দিন কাটতে লাগল। হঠাৎ একদিন মনে হলো এভাবে তো চলবে না। কিছু তো করতে হবে। ২০১৩ সালের দিকে নিজের হাতে থাকা ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে আমার ডিজাইনে একটি কুর্তি বানিয়ে সেটার ছবি সামাজিক মাধ্যমে আপ করি। সেই কুর্তিটারই ২০ থেকে ২২টি অর্ডার এল। শুরু হলো হুর নুসরাতের যাত্রা।’

নিজের ব্র‍্যান্ডের নাম হুর নুসরাত কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে নুসরাত বলেন, ‘হুর সম্পর্কে আমাদের ধারণাটা হলো, তাদের কোনো দুঃখ থাকে না। হাসি-আনন্দের জীবন তাদের। প্রতিটি মেয়ের জীবন হুরদের মতো দুঃখ-কষ্টহীন হবে—সেই ভাবনা থেকেই হুর শব্দটি বেছে নেওয়া। সেটির সঙ্গে নিজের নামটা যুক্ত করেছি।’

নুসরাতের ভাবনা এখন শুধু নিজের ব্যবসাকে ঘিরে নয়। নতুন নারী উদ্যোক্তাদের কীভাবে শক্ত ভিত গড়ে দেওয়া যায়, তাঁদের ছোট ছোট উদ্যোগকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেসব নিয়েও পরিকল্পনা সাজান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত