তিস্তার চরে সস্তায় আবাদ, ৪০ কোটি টাকার প্রত্যাশা

মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১০: ০১
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১১: ১১

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় তিস্তা নদীতে জেগে ওঠা চরের আয়তন বাড়ছে ক্রমাগত। এতে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমলেও উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ১৬ চরে চাষ বেড়েছে ফসলের। চলতি মৌসুমেই আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১ হাজার হেক্টর বেড়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানায়, চরের জমিতে যে ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে, তা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চরে আলু, পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এবার চরগুলোতে ৪০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের।

তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ভালো ফসল উৎপাদন হলেও ভালো দাম পান না বলে অভিযোগ চরের কৃষকদের। সে ক্ষেত্রে গুদাম নির্মাণ ও পরিকল্পিত নদীশাসনের দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তিস্তা নদীবেষ্টিত এ উপজেলার ৬ ইউনিয়ন ঝুনাগাছ চাপানী, খালিশা চাপানি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, পশ্চিম ও পূর্ব ছাতনাইতে ১৬টি চরের সবই আবাদযোগ্য। চলতি মৌসুমে এসব চরে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে; গত মৌসুমের চেয়ে যা ১ হাজার হেক্টর বেশি। 

সম্প্রতি চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, নদীর বুকে চাষ করা হয়েছে ভুট্টা, আলু, ধান, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাকসহ নানা ধরনের রবিশস্য। পাশাপাশি প্রস্তুতি চলছে গম, ছোলা, মসুর, সরিষা ও বাদাম চাষের।

চরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরই চরের জমিতে ২০ থেকে ২৫ ধরনের ফসল চাষ করা হয়। বন্যার পর চরের মাটিতে পলি জমে। এ কারণে সার খুব একটা লাগে না। পোকামাকড়েরও আক্রমণ কম। কীটনাশকের ব্যয় তেমন নেই। তাই ফসল উৎপাদনে খরচও কম।

খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল লতিফ (৬০) পাঁচ একর জমিতে ভুট্টা, পেঁয়াজ, আলু, মরিচ ও শাকসবজি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বালুচরে যে এত প্রকার আবাদ হচ্ছে, তা তাঁদের ভাগ্য। বন্যায় চরাঞ্চলের মানুষের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারছেন এমন আবাদে।

পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ছাতুনামা চরের আলিমা বেগম বলেন, ‘নিজের ঘর, আবাদি জমিও সোউগ আছিল। নদীর বান আইসা জমির সাথে ঘরটাও নিয়া গ্যাছে (নদীগর্ভে বিলীন)। তহন থাইকাই বান্দের ওপর থাহি। সারা দিন চরে কাম করি। চরোত যদি ফসল না অইতো হয়, আমগো যে কী দশা, কী খাইতাম তা আল্লায় জানে।’

তবে ফসল ঘরে তোলা আর বিক্রি নিয়ে আছে চরের কৃষকদের নানা অভিযোগ। খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চর কিসামতের কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশাল চর আর নদী পাড়ি দিয়ে ফসল নিয়ে যেতে হয় হাটে। ফলে উৎপাদন বেশি হলেও ব্যয়ও বৃদ্ধি পায় বহনে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত বীজের ছোঁয়ায় বদলে গেছে তিস্তা চরের কৃষি চিত্র। প্রতিবছর উজানের ঢলে ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই এলাকার চাষিদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে। পানি-সহনীয় জাতের ধান চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’ এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমানে চরে আবাদযোগ্য জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিকল্পিত নদীশাসন করে চরের জমি আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত