কর্মসংস্থান সষ্টি ও আত্মকর্মসংস্থানে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন টুঙ্গিপাড়ার স্বপন মজুমদার। গত ১ নভেম্বর স্বপনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।

এদিকে যুব পুরস্কার পাওয়ায় গত শুক্রবার বিকেলে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় উপজেলা প্রশাসন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেদারুল ইসলাম, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম, উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি ইমরান শেখ প্রমুখ।।

জানা যায়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান স্বপন মজুমদার। ৬ ভাই-বোনের বিশাল পরিবারের মধ্যে পড়াশোনার খরচ চালানো তার কৃষক বাবার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে এক বছর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্বপনের। এসএসসি পাশ করার পর কি করবেন এ ভাবনায় সে যখন দিশেহারা তখন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা তাঁকে যুব প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরামর্শ দেন। সে অনুয়ায়ী ২০১৫ সালে শহীদ শেখ জামাল যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি বিষয়ক তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন তিনি।

প্রশিক্ষণ শেষে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ ও ধারের ৩০ হাজারসহ মোট ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ৪০ শতাংশ জায়গায় একটি পুকুরে মিশ্র মাছ শুরু করেন। প্রথম বছর লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়।

পরবর্তীতে সঠিক নিয়মে সমন্বিত পোলট্রি পালন ও মাছ চাষ করার সঙ্গে সবজি চাষ করে লাভবান হন স্বপন। এসব কাজে পর্যাপ্ত শ্রম দিয়ে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তিনি ৫টি পুকুর ও ৫টি পোলট্রি খামারে সমন্বিতভাবে মাছ ও পোলট্রি চাষ করে এলাকায় আত্মকর্মী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বর্তমানে তাঁর মূলধনের পরিমাণ ৭০ লাখ টাকা। বার্ষিক নিট মুনাফা ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

বর্তমানে তাঁর খামারে স্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা ১৭ জন। এর বাইরে অস্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন। তার কর্মকাণ্ডে এলাকার যুবকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে সমন্বিত খামার করে লাভবান হচ্ছেন। এ ছাড়া কর্মসংস্থান ও আত্ম-কর্মসংস্থানের অবদান রাখার পাশাপাশি তিনি বাল্যবিবাহ, যৌতুক বিরোধী প্রচারণা অনুষ্ঠান, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, স্যানিটারি ল্যাট্রিন বিতরণসহ নানা সামাজিক ও জনসচেতনতামূলক কাজে অংশ নিচ্ছেন।

আত্মকর্মী স্বপন মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঋণের টাকায় ৪০ শতাংশের একটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। প্রথম বছর বেশ লাভবান হওয়ায় পরের বছর আরও দুইটি পুকুর লিজ নিয়ে পাঙাশ, তেলাপিয়া পুঁটি, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন মাছ ও পুকুরের ওপরে ঘর করে পোলট্রি চাষ শুরু করি। মাছ চাষের পাশাপাশি পুকুরগুলোর পাশে শিম, কপি, টমেটো ও শসা চাষাবাদ করছি। এতে বেশ বাড়তি রোজগার হচ্ছে। পড়ালেখার পাশাপাশি সমন্বিত মাছ, পোলট্রি ও শাকসবজি চাষ করে আমি স্বাবলম্বী।’

তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বপন বলেন, নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত টুঙ্গিপাড়ায় মাছ ও শাকসবজি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মাছ চাষ বেশ লাভজনক। তাই আত্মকর্মী হয়ে উঠলে তরুণেরা নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারবে, তেমনি নিজ এলাকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম হেদায়েতুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বড় চ্যালেঞ্জ বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান তৈরি। সেই জন্য স্বপনের মতো উদ্যোক্তা তৈরি হওয়া প্রয়োজন। কারণ উদ্যোক্তারা নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার মানুষেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন।