Ajker Patrika

কীটপতঙ্গ মারতে এত ক্ষতি!

আজিজুর রহমান, চৌগাছা
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২২, ২২: ১৬
কীটপতঙ্গ মারতে এত ক্ষতি!

যশোরের চৌগাছার মর্জাদ বাঁওড়ের ২৫ বিঘার হ্যাচারিতে বিষ প্রয়োগে মাছের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাখ্যা দিয়েছেন ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান। বাঁওড় মৎস্য প্রকল্পের পরিচালক নারায়ণ চন্দ্র দাসের কাছে দেওয়া অভিযোগের লিখিত ব্যাখ্যায় মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি পুকুর প্রস্তুত করার জন্য কীটপতঙ্গ মারতে বিষ প্রয়োগ করেছেন।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষি ভুট্টো মিয়ার দাবি, কীটপতঙ্গ নয়, বাঁওড়ের মাটি অবৈধভাবে ইটভাটায় বিক্রি করার সময় বাধা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান হ্যাচারিতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ মেরে ফেলেছেন।

গত ২ মার্চ মর্জাদ বাঁওড়ের হ্যাচারি অংশে বিষ প্রয়োগ করে ভুট্টো মিয়ার সব মাছ মেরে ফেলার ঘটনা ঘটে। পরে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বাঁওড় মৎস্য প্রকল্পের পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে বাঁওড় ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন মাছচাষি ভুট্টো মিয়া। সেখানে তিনি ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে বাঁওড়ের মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি, অবৈধভাবে বাঁওড় ইজারা দিয়ে টাকা পকেটে ঢোকানো নানা অভিযোগ তোলেন। তিনি মাটি বিক্রিতে বাঁধা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ তোলেন ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে।

ওই অভিযোগ পেয়ে গত ৮ মার্চ বাঁওড় মৎস্য প্রকল্পের পরিচালক নারায়ণ চন্দ্র দাস বাঁওড় ব্যবস্থাপকের কাছে ব্যাখ্যা জানতে নোটিশ পাঠান।

অবৈধভাবে বাঁওড় ইজারা দেওয়ার অভিযোগের ব্যাখ্যায় ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান উল্লেখ করেছেন, ‘আমি ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর মর্জাদ বাঁওড়ে যোগদান করি। যোগদানের পর পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপকের নিকট জানতে চাওয়া হলে আমাকে জানানো হয়, উক্ত পুকুরগুলো বাঁওড় পাড়ের কিছু প্রভাবশালী লোকের কাছে বাঁওড়ে মাছের পোনা দেওয়ার শর্তে চাষ করতে দেওয়া হয়েছে।’

অন্যদিকে বাঁওড়ের মাটি বিক্রির অভিযোগের জবাবে মাহবুবুর রহমান লিখেছেন, ‘নার্সারি পুকুরে জাল টানার জন্য মাটি কেটে পুকুরের উঁচু-নিচু পাড় সমান করি।’

কিন্তু তিনি যোগদানের পর সেই পুকুরগুলো ইজারামুক্ত করেনি। উল্টো ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর থেকে দেড় বছর ধরে ইজারার টাকা উশুল করে আসছেন ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান।

২ মার্চ বাঁওড়ের ২৫ বিঘার হ্যাচারির মাছ বিষ দিয়ে মারার বিষয়ে ভুট্টো মিয়া চৌগাছা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের বিষয়ে বাঁওড় ব্যবস্থাপক পুলিশকে মৌখিকভাবে জানা, ‘ভুট্টো মিয়া অবৈধ দখলদার।’

ভুট্টো মিয়ার প্রশ্ন, বাঁওড়ে মাছ দেওয়ার শর্তেই যদি পুকুরগুলো চাষ করতে দেওয়া হয়, তাহলে চাষিরা প্রভাবশালী হলেন কেমনে? আবার শর্তসাপেক্ষে যদি চাষিদের মাছ চাষ করতে দেওয়াই হয়ে থাকে তাহলে তাঁরা অবৈধ দখলদার হলেন কি করে?

তবে এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য বাঁওড় ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ

পাওয়া যায়।

তবে জাল টানার জন্য যে তিনি মাটি কেটে সমান করেননি, তা স্থানীয় বিভিন্নজনের ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিওতে দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে ভরে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিওতে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসার জবাবেও তাঁরা বলেছেন, মাটি হাকিমপুর বড় মার্কেটসহ বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।

একইভাবে কীটনাশক দিয়ে মাছ মেরে ফেলার ভিডিও এবং শত শত লোকের সেই মরা মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সে সময়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, ‘মর্জাদ বাঁওড়ের ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আগে মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে তিনি মাটি বিক্রির সত্যতা পেয়েছেন।’

ইউএনও ইরুফা সুলতানা আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে

জানানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজ করার নির্দেশ দিল সরকার

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

একাত্তর ও এক-এগারোর সময় বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন নীতি ভুল ছিল: ড্যানিলোভিচ

সীতাকুণ্ডে সৈকতে বন্ধুকে বেঁধে রেখে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত