স্বপ্না রেজা
সম্প্রতি মাধ্যমিক পর্যায়ে দুটি পাবলিক পরীক্ষা আর বাস্তবায়ন না হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পরীক্ষা দুটি হলো জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি)। বিগত তিন বছর অতিমারি করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশ থেকে জানা যায়, তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুযায়ী জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই ২০২২, ২০২৩ এবং পরে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা বাদ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’ আদেশে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে এই পরীক্ষা দুটি চালু হয়েছিল। এর আগে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা পিইসি চালু করা হয়েছিল, যেটা ছিল শিশুদের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ। পঞ্চম শ্রেণির সমমানের এই পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে হতো। এরপর শুরু হলো জেএসসি ও জেডেসি, যেটা মাধ্যমিক পর্যায়ে দ্বিতীয় পাবলিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণেও শিক্ষার্থীদের ছিল বাধ্যবাধকতা। মাধ্যমিক পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে সেই সময় অনেক আলোচনা-সমালোচনা, যুক্তি-তর্ক ছিল। স্কুল পর্যায়ে এ ধরনের এবং এতটা পরীক্ষার শিক্ষাক্রম আদতে কতটা ফলপ্রসূ ও শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে সক্ষম, তা নিয়ে অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকের মনে ছিল যথেষ্ট সংশয়। আবার একদল খুশি এই ভেবে, জেএসসি পরীক্ষাটি স্কুল মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষা সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা দেবে, যা স্কুল মাধ্যমিক পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি ও ফলাফল এনে দিতে পারে। কেউ ভাবল, শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষার ভীতি কেটে যাওয়ার এ এক উত্তম উপায়। অল্প বয়সেই শিশুশিক্ষার্থীরা দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। অথচ স্কুল পর্যায়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি বা মেধাসত্তার ওপর এই বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কতটা যৌক্তিক কিংবা যুক্তিযুক্ত কিংবা বিজ্ঞানসম্মত ছিল, সেই প্রশ্নের জবাব তাদের কাছে পাওয়া যাবে কি না, তা বলা মুশকিল। যাই হোক, এই পরীক্ষা প্রচলনের আগে কোনো সুচিন্তিত সমীক্ষা কিংবা গবেষণা করা হয়েছিল কি না, তা সম্ভবত অনেকেরই অজানা। জনমত যাচাইও সম্ভবত হয়নি। আমরা দেখি, সাধারণত কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে চলে তার সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ও নিরীক্ষা। অথচ শিক্ষার মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সেই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কোনো পদক্ষেপ দেখা গেছে বলে মনে পড়ে না। কেন জেএসসি বা জেডিসি বা পিইসি পাবলিক পরীক্ষা শুরুর আগে এর প্রভাব ও ফলাফল নিয়ে ভাবা হয়নি, প্রশ্নটা কিন্তু এসে যায়। অবস্থাদৃষ্টে এটাই বলা যায় যে শিক্ষাব্যবস্থা চলে আসছে যেনতেনভাবে। গুরুত্বসহকারে কেউ ভেবেছে, সেটা ভাবার সুযোগ খুবই কম। কারও কারও মতে, অনভিজ্ঞ, অযোগ্য, অদক্ষ ব্যক্তি-গোষ্ঠী কর্তৃক বাস্তবায়ন হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান মানবসম্পদ তৈরির এই অধ্যায়টি। আচমকা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো এসব পাবলিক পরীক্ষা। এই চাপ শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর পড়েনি, পড়েছে অভিভাবক এবং সমাজের ওপরও। অনেকের মতে, গোটা শিক্ষাব্যবস্থার ওপর পড়েছে এই বোঝার চাপ।
পিইসি বা জেএসসি পরীক্ষা চালুতে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়েছে সেটা হলো, এই দুই পর্যায়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য দেশের আনাচকানাচ, অলি-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো কোচিং সেন্টার গজিয়ে উঠেছে। এমনকি জেডিসিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় শিক্ষকদেরও সক্রিয় হতে দেখা গেছে, যা এখন ভয়ানকভাবে দৃশ্যমান। কোচিং সেন্টার তো আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটা নকল রূপ এবং প্রকৃত শিক্ষাব্যবস্থার একধরনের বড় ব্যর্থতা। কলঙ্ক বললেও সম্ভবত ভুল বলা হবে না। রীতিমতো শিক্ষকতার নৈতিক অবক্ষয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবিমুখ করার এক মহা কৌশল কোচিং সেন্টার। শিক্ষাকে বাণিজ্যে রূপান্তরিত করার চক্রান্তও বলা যায়। একসময় শিক্ষক সমাজ আদর্শ নিয়ে চলত। তার পরের অবস্থা দাঁড়িয়েছে, শিক্ষক সমাজ অগাধ অর্থ কামাই ছাড়া চলতে পারে না। তাই তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষাদানের বদলে কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের টেনে এনে শিক্ষাদান করাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, অনেক লাভজনক মনে করে। বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেসব শিক্ষক কোচিং সেন্টার চালান, তাঁদের ব্যক্তিগত ধন-সম্পদ ও মাসিক আয় দেখলে বোঝা যাবে, অন্য যেকোনো ব্যবসা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাঁদের শিক্ষা-বাণিজ্য কতটা নির্বিঘ্ন ও অবাধ এবং লাভজনক অবস্থায় রয়েছে।
একজন অভিমত ব্যক্ত করলেন, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার কারণে অনেক কোচিং সেন্টার ও গাইড বুক ব্যবসার প্রচলন ঘটেছে। বাংলাবাজারে গেলে গাইড বুকের স্তূপ সে কথাই বলে। এই গাইড বুককে কেন্দ্র করেই প্রকাশনা ব্যবসার একটা অংশ চলমান থাকছে বছরের পর বছর। লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আবার জেএসসি পরীক্ষার শুরু থেকে তেমন করেই যত্রতত্র কোচিং সেন্টার খুলে বসেছে শিক্ষকদের একটা অংশ। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাও এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি। শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে অন্যত্র শিক্ষাদানের সুযোগ নিয়ে তাঁরা অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ কামাই করেছেন এবং তা শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের অজুহাতেই। যে তৎপরতা বা প্রক্রিয়াটি ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কেবল, সেটা আরও ব্যাপক হয়ে উঠল জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে। সোজাসাপ্টা কথা, শিক্ষা নিয়ে কোচিং ব্যবসাটা ফুলেফেঁপে ভরে উঠল জেএসসি-জেডিসির কারণে। সে কথাটাই কিন্তু এখন বলা হচ্ছে যে কোচিং সেন্টার, গাইড বুক বন্ধ করার জন্যও এ দুটি পাবলিক পরীক্ষা বন্ধ হওয়া দরকার। এত সময় লাগল এই সত্যটা উপলব্ধি করতে! বারো বছর তো আর কম সময় নয়, তাই না?
আচ্ছা, কোচিং সেন্টার বন্ধ করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া কি খুব কঠিন একটা ব্যাপার? প্রশ্নটা আমার শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের প্রতি। তাঁরা যে উত্তরই দেন না কেন, উত্তর কিন্তু একটা নগদেই আছে। শিক্ষকদের পায়ে (বিবেক) শিকল পরিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিতে রাখার কঠোর ব্যবস্থা হলে শিক্ষার্থীরা তো আর কোচিং সেন্টার খুঁজে পাবে না। আবারও প্রশ্ন এসে গেল, শিক্ষকদের এই কঠিন নিয়মে আনবেটা কে? এর উত্তরও নগদে আছে। কাজটা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর। শেষ প্রশ্ন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যর্থ না হওয়ার উপায় কী? নগদ উত্তর, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রকৃত দেশপ্রেম।
পরিশেষে আবারও বলি, একটি রাষ্ট্রের বড় শক্তি তার উন্নত ও শিক্ষিত মানবসম্পদ, যা উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা বা কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে, অন্য কিছুতে নয়। শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষা নয়, নৈতিক মূল্যবোধ শেখার কপাট খুলতে হবে। নৈতিক মূল্যবোধহীন একজন শিক্ষক কখনোই নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন একজন নাগরিক গড়তে পারেন না। শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আর খেলা নাই-বা খেলি।
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
সম্প্রতি মাধ্যমিক পর্যায়ে দুটি পাবলিক পরীক্ষা আর বাস্তবায়ন না হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পরীক্ষা দুটি হলো জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি)। বিগত তিন বছর অতিমারি করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশ থেকে জানা যায়, তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুযায়ী জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই ২০২২, ২০২৩ এবং পরে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা বাদ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’ আদেশে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে এই পরীক্ষা দুটি চালু হয়েছিল। এর আগে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা পিইসি চালু করা হয়েছিল, যেটা ছিল শিশুদের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ। পঞ্চম শ্রেণির সমমানের এই পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে হতো। এরপর শুরু হলো জেএসসি ও জেডেসি, যেটা মাধ্যমিক পর্যায়ে দ্বিতীয় পাবলিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণেও শিক্ষার্থীদের ছিল বাধ্যবাধকতা। মাধ্যমিক পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে সেই সময় অনেক আলোচনা-সমালোচনা, যুক্তি-তর্ক ছিল। স্কুল পর্যায়ে এ ধরনের এবং এতটা পরীক্ষার শিক্ষাক্রম আদতে কতটা ফলপ্রসূ ও শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে সক্ষম, তা নিয়ে অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকের মনে ছিল যথেষ্ট সংশয়। আবার একদল খুশি এই ভেবে, জেএসসি পরীক্ষাটি স্কুল মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষা সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা দেবে, যা স্কুল মাধ্যমিক পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি ও ফলাফল এনে দিতে পারে। কেউ ভাবল, শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষার ভীতি কেটে যাওয়ার এ এক উত্তম উপায়। অল্প বয়সেই শিশুশিক্ষার্থীরা দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। অথচ স্কুল পর্যায়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি বা মেধাসত্তার ওপর এই বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কতটা যৌক্তিক কিংবা যুক্তিযুক্ত কিংবা বিজ্ঞানসম্মত ছিল, সেই প্রশ্নের জবাব তাদের কাছে পাওয়া যাবে কি না, তা বলা মুশকিল। যাই হোক, এই পরীক্ষা প্রচলনের আগে কোনো সুচিন্তিত সমীক্ষা কিংবা গবেষণা করা হয়েছিল কি না, তা সম্ভবত অনেকেরই অজানা। জনমত যাচাইও সম্ভবত হয়নি। আমরা দেখি, সাধারণত কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে চলে তার সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ও নিরীক্ষা। অথচ শিক্ষার মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সেই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কোনো পদক্ষেপ দেখা গেছে বলে মনে পড়ে না। কেন জেএসসি বা জেডিসি বা পিইসি পাবলিক পরীক্ষা শুরুর আগে এর প্রভাব ও ফলাফল নিয়ে ভাবা হয়নি, প্রশ্নটা কিন্তু এসে যায়। অবস্থাদৃষ্টে এটাই বলা যায় যে শিক্ষাব্যবস্থা চলে আসছে যেনতেনভাবে। গুরুত্বসহকারে কেউ ভেবেছে, সেটা ভাবার সুযোগ খুবই কম। কারও কারও মতে, অনভিজ্ঞ, অযোগ্য, অদক্ষ ব্যক্তি-গোষ্ঠী কর্তৃক বাস্তবায়ন হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান মানবসম্পদ তৈরির এই অধ্যায়টি। আচমকা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো এসব পাবলিক পরীক্ষা। এই চাপ শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর পড়েনি, পড়েছে অভিভাবক এবং সমাজের ওপরও। অনেকের মতে, গোটা শিক্ষাব্যবস্থার ওপর পড়েছে এই বোঝার চাপ।
পিইসি বা জেএসসি পরীক্ষা চালুতে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়েছে সেটা হলো, এই দুই পর্যায়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য দেশের আনাচকানাচ, অলি-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো কোচিং সেন্টার গজিয়ে উঠেছে। এমনকি জেডিসিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় শিক্ষকদেরও সক্রিয় হতে দেখা গেছে, যা এখন ভয়ানকভাবে দৃশ্যমান। কোচিং সেন্টার তো আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটা নকল রূপ এবং প্রকৃত শিক্ষাব্যবস্থার একধরনের বড় ব্যর্থতা। কলঙ্ক বললেও সম্ভবত ভুল বলা হবে না। রীতিমতো শিক্ষকতার নৈতিক অবক্ষয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবিমুখ করার এক মহা কৌশল কোচিং সেন্টার। শিক্ষাকে বাণিজ্যে রূপান্তরিত করার চক্রান্তও বলা যায়। একসময় শিক্ষক সমাজ আদর্শ নিয়ে চলত। তার পরের অবস্থা দাঁড়িয়েছে, শিক্ষক সমাজ অগাধ অর্থ কামাই ছাড়া চলতে পারে না। তাই তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষাদানের বদলে কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের টেনে এনে শিক্ষাদান করাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, অনেক লাভজনক মনে করে। বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেসব শিক্ষক কোচিং সেন্টার চালান, তাঁদের ব্যক্তিগত ধন-সম্পদ ও মাসিক আয় দেখলে বোঝা যাবে, অন্য যেকোনো ব্যবসা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাঁদের শিক্ষা-বাণিজ্য কতটা নির্বিঘ্ন ও অবাধ এবং লাভজনক অবস্থায় রয়েছে।
একজন অভিমত ব্যক্ত করলেন, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার কারণে অনেক কোচিং সেন্টার ও গাইড বুক ব্যবসার প্রচলন ঘটেছে। বাংলাবাজারে গেলে গাইড বুকের স্তূপ সে কথাই বলে। এই গাইড বুককে কেন্দ্র করেই প্রকাশনা ব্যবসার একটা অংশ চলমান থাকছে বছরের পর বছর। লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আবার জেএসসি পরীক্ষার শুরু থেকে তেমন করেই যত্রতত্র কোচিং সেন্টার খুলে বসেছে শিক্ষকদের একটা অংশ। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাও এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি। শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে অন্যত্র শিক্ষাদানের সুযোগ নিয়ে তাঁরা অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ কামাই করেছেন এবং তা শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের অজুহাতেই। যে তৎপরতা বা প্রক্রিয়াটি ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কেবল, সেটা আরও ব্যাপক হয়ে উঠল জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে। সোজাসাপ্টা কথা, শিক্ষা নিয়ে কোচিং ব্যবসাটা ফুলেফেঁপে ভরে উঠল জেএসসি-জেডিসির কারণে। সে কথাটাই কিন্তু এখন বলা হচ্ছে যে কোচিং সেন্টার, গাইড বুক বন্ধ করার জন্যও এ দুটি পাবলিক পরীক্ষা বন্ধ হওয়া দরকার। এত সময় লাগল এই সত্যটা উপলব্ধি করতে! বারো বছর তো আর কম সময় নয়, তাই না?
আচ্ছা, কোচিং সেন্টার বন্ধ করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া কি খুব কঠিন একটা ব্যাপার? প্রশ্নটা আমার শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের প্রতি। তাঁরা যে উত্তরই দেন না কেন, উত্তর কিন্তু একটা নগদেই আছে। শিক্ষকদের পায়ে (বিবেক) শিকল পরিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিতে রাখার কঠোর ব্যবস্থা হলে শিক্ষার্থীরা তো আর কোচিং সেন্টার খুঁজে পাবে না। আবারও প্রশ্ন এসে গেল, শিক্ষকদের এই কঠিন নিয়মে আনবেটা কে? এর উত্তরও নগদে আছে। কাজটা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর। শেষ প্রশ্ন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যর্থ না হওয়ার উপায় কী? নগদ উত্তর, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রকৃত দেশপ্রেম।
পরিশেষে আবারও বলি, একটি রাষ্ট্রের বড় শক্তি তার উন্নত ও শিক্ষিত মানবসম্পদ, যা উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা বা কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে, অন্য কিছুতে নয়। শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষা নয়, নৈতিক মূল্যবোধ শেখার কপাট খুলতে হবে। নৈতিক মূল্যবোধহীন একজন শিক্ষক কখনোই নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন একজন নাগরিক গড়তে পারেন না। শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আর খেলা নাই-বা খেলি।
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
১০ বছর ধরে নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াত। নাম দিয়েছেন ‘রবি পথ’। অবশেষে প্রকাশ হচ্ছে তাঁর আত্মজীবনী। আগামী ২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে রবি পথের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
১ ঘণ্টা আগেএকদিন ভোরবেলা জাকারবার্গ লক্ষ করলেন যে পৃথিবীতে একটা ছোট্ট দেশে তাঁর সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হচ্ছে। সামনের ফ্লোরটায় দেখলেন দেশটা ছোট বটে, কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। আর এই দেশের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুকে দেখতে পেলেন অসংখ্য বার্তা—সবই রাজনৈতিক এবং ছবিতে এ বিষয়ে বিপুল জনগণের
২ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৩ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের নেতা-কর্মীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে অসংখ্য আন্দোলনকারীকে হত্যা ও অনেকের জীবন বি
২ ঘণ্টা আগেইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম রোমান্টিক কবি ছিলেন জন কিটস। কবিতা ছাড়া কিটস কোনো গদ্য লেখার চেষ্টা করেননি। তাঁর কাব্যজীবন ছিল মাত্র ছয় বছরের। অর্থাৎ উনিশ থেকে চব্বিশ বছর বয়স পর্যন্ত। মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে তাঁর কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সমালোচকদের দ্বারা কিটসের কবিতা খুব একটা আলোচিত হয়নি। তবে মৃত্য
২ ঘণ্টা আগে