‘বল সুন্দরী’ চাষে স্বপ্নপূরণ

শেখ জাবেরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮: ১৮
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ১০

আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএলবি) শেষ করে এস এম জসীম রহমান ঢাকা জজকোর্টে শিক্ষানবিশ হিসেবে ওকালতির অনুশীলন করছিলেন। করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় জজকোর্ট। এতে আর্থিকভাবে সমস্যায় পড়ে যান তিনি। এ সময় অনুশীলন ছেড়ে পরিবার নিয়ে চলে যান গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরপুখুরিয়া গ্রামে। পরে বড় ভাইয়ের পরামর্শে কুল চাষের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন।

গ্রামের সাত বিঘা জমি ইজারা নিয়ে তিনি কুল চাষ শুরু করেন। মাত্র দুই বছরে ‘বল সুন্দরী’ জাতের কুল চাষ করে সফল হয়েছেন জসীম রহমান। গ্রামের অনেকেই তাঁর এই কুলের বাগান দেখতে ভিড় করেন। বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় ৭ / ৮ জনের।

বল সুন্দরী কুল দেখতে অনেকটা আপেলের মতো। খেতেও বেশ সুস্বাদু। ২০২০ সালে মাগুরা থেকে ২ হাজার ৫০টি বল সুন্দরী কুলের চারা সংগ্রহ করেন। এতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়। মাত্র সাত মাসেই গাছে ফলন ধরা শুরু করে। সে বছরই ৭০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেন। এ বছর তাঁর বাগানে প্রায় ১ হাজার ৮০০ গাছে ভালো ফল ধরেছে। তাই ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন জসীম।

জসীম রহমানের সফলতার খবরে অনেকেই কুলের বাগান দেখতে আসছেন, পরিকল্পনা করছেন এ ধরনের বাগান করার। কুল বাগান দেখতে আসা সেকেন্দার হোসেন কালু বলেন, বাগান দেখে তাঁর ভালো লেগেছে। বাগানের মালিক জসীম রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাগান করার বিষয়ে বিভিন্ন জিনিস জানতে পেরেছেন।

কুল বাগান দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত একই গ্রামের মো. এনামুল হক বলেন, কুল বাগানে কাজ করে তিনি পরিবার নিয়ে আগের চেয়ে ভালো আছেন।

কুল বাগান দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত অপর এক কর্মী মো. মারুফ মুন্সী বলেন, আগে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। এখন কুল বাগানে কাজ করে ভালো আছেন।

কুলচাষি এস এম জসীম রহমান বলেন, করোনায় কর্মহীন হয়ে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের চর পুখুরিয়া চলে আসেন। সময় নষ্ট না করে বড় ভাইয়ের পরামর্শে সাত বিঘা জমি ইজারা নিয়ে বল সুন্দরী কুল চাষ করেন। এতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। মাগুরা থেকে ২০২০ সালের মে মাসে ২ হাজার ৫০টি বল সুন্দরী কুলের চারা আনেন। সেখান থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ চারা বেঁচে আছে এবং ফল ধরছে।

প্রথম বছর মাত্র ৭০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এ বছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, কুলে ভিটামিন সি, মিনারেল ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান রয়েছে। বল সুন্দরী আমাদের দেশের জাত নয়, এটি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতীয় একটি জাত। এটি আকারে অনেক বড় হয়, দেখতে অনেকটা আপেলের মতো, মিষ্টি ও সুস্বাদু। কুলটা খুবই ভালো। এ জাতের কুলের ফলন হয় প্রচুর, খুবই লাভজনক একটি ফসল। জেলায় অন্যান্য কৃষকদের বল সুন্দরী জাতের আবাদ করে লাভবান হওয়ার পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত