Ajker Patrika

কৃষকবন্ধু আইয়ুব ভাই

কৃষকবন্ধু আইয়ুব ভাই

সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টা ছুঁয়ে গেলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। শুক্রবার। নিজের কাঁকরোলখেতে কাজ করছিলেন উসমান গণি। কাদামাটি মাড়িয়ে খেতে হাজির হন মো. আইয়ুব হোসেন। তাঁকে দেখে পাশের খেত থেকে এগিয়ে আসেন সে গ্রামেরই কৃষক দেলোয়ার হোসেন। এ সময় আইয়ুব হোসেন তাঁদের কাঁকরোলের অধিক ফলন পেতে কৃত্রিম পরাগায়নের সঠিক নিয়ম দেখান।

আইয়ুব হোসেনের কাছে ফোন আসে আইয়ুব আলী নামে এক কৃষকের—সমস্যা, খরার পর বৃষ্টি হওয়ায় শিমের ফুল ঝরে যাচ্ছে। কথা শেষ করে তিনি ছুটে যান সেখানে। এতক্ষণ যে আইয়ুব হোসেনের কথা বলছিলাম, তিনি ঝিকরগাছার বোধখানা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। এলাকায় তিনি ‘কৃষকবন্ধু’ হিসেবে পরিচিত। এ বছর তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারে মনোনীত হয়েছেন।

আইয়ুব হোসেনকে ২০১২ সালে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে বোধখানা ব্লকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একসময়ের ভগ্নদশা কাটিয়ে বছর তিনেকের মধ্যে তিনি এই ব্লকের কৃষিতে আমূল পরিবর্তন আনেন। আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তির সমন্বয়ে কৃষিতে সাফল্য অর্জন করেন এখানকার কৃষকেরা। এই ব্লকে জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রোগ্রামের (এনএটিপি-২) অধীনে তিনটি রেজিস্ট্রেশন করা সিআইজি (ফসল) গ্রুপ এবং কৃষকদের নিয়ে আইপিএম ক্লাব আছে তিনটি।

২০১৬ সালে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া কৃষক বোধখানা গ্রামের আলী হোসেন বলেন, ‘আইয়ুব ভাই শিখিয়েছেন কীভাবে নিরাপদ সবজি উৎপাদন এবং আদর্শ বীজতলা তৈরি ও ফলন বাড়াতে লাইন লোগো পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়।’ আলী হোসেন জানান, এই ব্লকের চাষাবাদে এখন ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার হয় অধিকাংশ ফসলে। ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং, সেক্সফেরোমন ফাঁদ, পোকার উপস্থিতি নিরূপণে আলোক ফাঁদসহ জৈব কীটনাশক ব্যবহারে এই ব্লকের কৃষকদের অভ্যস্ত করে তোলেন আইয়ুব হোসেন।

বোধখানা ব্লকের বোধখানা ও বারবাকপুর গ্রামকে ‘ভার্মি কম্পোস্ট ভিলেজ’ হিসেবে গড়ে তুলেছেন আইয়ুব হোসেন। এখানকার কৃষকেরা জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে বাড়ির আঙিনায় পড়ে থাকা উপকরণ দিয়ে নিজেরা জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করেন। এই ব্লকে বর্তমান ২৯৫ জন নারী ২ হাজার চাড়িতে বছরে ১০০ মেট্রিক টন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। এ ছাড়া চালা কম্পোস্ট পদ্ধতিতেও সার তৈরি করছেন তাঁরা। রাস্তার দুই পাশে বোনা হয়েছে বারোমাসি শজনেগাছ।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেন জানিয়েছেন, চাকরি হিসেবে নয়, তিনি আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করেন। কৃষি ও কৃষকের উন্নতি এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুনাম বাড়াতে চেষ্টা করেন। এসব কাজ করে কৃষকদের কাছে ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছেন তিনি।

বারবাকপুর গ্রামের শিক্ষার্থী নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘আইয়ুব ভাইয়ের পরামর্শে ২০১৫ সালে লেখাপড়ার পাশাপাশি ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি শুরু করি। বর্তমানে ১৫০টি চাড়িতে এ সার তৈরি করি। এ জন্য আমি এ বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারে মনোনীত হয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

বাংলাদেশে-ভারত সম্পর্কের অবনতিতে দায়ী মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা: কংগ্রেস

তখন অন্য একটা সংগঠন করতাম, এখন বলতে লজ্জা হয়: জামায়াতের আমির

কুতুবদিয়ায় ছাত্রলীগ নেতার ছুরিকাঘাতে ২ ছাত্রদল নেতা আহত

আইসিসির শাস্তি নিয়ে খেলতে নামা পাকিস্তানকে হেসেখেলে হারাল নিউজিল্যান্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত