মইনুল হাসান
এই মুহূর্তে পৃথিবী একটি ব্যাপক এবং ভয়াবহ যুদ্ধের ঝুঁকিতে কাঁপছে। মানুষের হানাহানি এখন জল-স্থল-অন্তরীক্ষ ছাড়িয়ে দূর মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভীতিকর সে আশঙ্কা দিন দিনই এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মহাকাশের দিকে যাঁরা সার্বক্ষণিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছেন, তাঁদেরই একজন হচ্ছেন বেঞ্জামিন স্ট্যাটস, মার্কিন স্পেস কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার। তিনি বলেছেন, ‘মহাকাশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র রাশিয়া এবং চীনের হাতে রয়েছে। মহাযুদ্ধ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ার বিভিন্ন নিদর্শন দেখা যাচ্ছে।’
মার্কিন স্পেস কমান্ড এবং বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কারণ, গত মে মাসে রাশিয়া পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে একটি উপগ্রহ পাঠিয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, এটি একটি ‘যুদ্ধ উপগ্রহ’, অন্য উপগ্রহকে আক্রমণ করে, কক্ষচ্যুত বা নিষ্ক্রিয়, এমনকি ধ্বংস করতে সক্ষম। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ কথা বলেছেন। এদিকে পরাশক্তি চীনও বসে নেই, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মহাকাশে একটি উপগ্রহ পাঠিয়েছে। সেই উপগ্রহ থেকে একটি অজ্ঞাত বস্তু ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই অজ্ঞাত বস্তুটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক উপগ্রহের পাশ ঘেঁষে তীব্র গতিতে ছুটে যায়।
দূর আকাশে আধিপত্য বিস্তারের অদম্য বাসনায় আরও বেশ কিছু দেশ হন্য হয়ে উঠছে। সিকিউর ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন নামক প্রতিষ্ঠানটি ছয় বছর থেকে মহাকাশে ছয়টি দেশের সামরিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছে। এ নিয়ে সংস্থাটি প্রতিবছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। ভবিষ্যতে এই ফাউন্ডেশন দূর আকাশে মোট ১২টি দেশের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জাপান, ইরান, ইসরায়েল, উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া।
এই প্রতিষ্ঠানটির মতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইসরায়েল—এই চারটি দেশ মহাকাশে তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে এবং তাদের হাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। সমরবিদ ঐতিহাসিকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে যুক্তরাষ্ট্র আজ থেকে ৬২ বছর আগে, সেই ১৯৬২ সালের ৯ জুলাই ২৫০ মাইল বা ৪০০ কিলোমিটার ঊর্ধ্বাকাশে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সামরিক এবং প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিল। ১ দশমিক ৪ মেগাটনের প্রচণ্ড শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে সেই সময়ে নিম্ন কক্ষপথের এক-তৃতীয়াংশ উপগ্রহের কলকবজা বিগড়ে গিয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের ডামাডোলে মার্কিনরা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছিল যে শুধু ভূমিতে পারমাণবিক বোমা নয়, দূরের আকাশে আধিপত্য রক্ষায় তাদের হাতে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ রয়েছে।
সমরবিদরা মনে করেন, ভূমিতে আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে হলে মহাকাশে নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। পরাশক্তিগুলো মহাকাশে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে ‘স্পেস আর্মি’ নাম দিয়ে বিশেষ একটি বাহিনী তাদের সেনাবাহিনীতে যুক্ত করেছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার মাত্র দুই ঘণ্টা আগে রাশিয়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত স্যাটেলাইট যোগাযোগ সিস্টেমকে বিগড়ে দিয়েছিল। ফলে প্রথম ধাক্কায় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পড়েছিল।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজায় ভূমি থেকে উপগ্রহের জিপিএস সংকেত বিঘ্নিত করে, শত্রুপক্ষকে অনেকটা বিপাকে ফেলতে সক্ষম হয়। যুদ্ধরত দেশগুলোতে সাইবার হামলার সঙ্গে শত্রু দেশের উপগ্রহগুলোর কাজকে বিঘ্নিত করা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিককালে মহাকাশে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত ভূমি থেকে মিসাইল ছুড়ে কক্ষপথে ঘূর্ণমান উপগ্রহ ধ্বংস করে দেখিয়েছে। এ কাজটি করতে গিয়ে লক্ষ্য হিসেবে তারা তাদের নিজেদের স্যাটেলাইট বেছে নিয়েছিল। এতে করে কেউ কারও প্রতি ক্ষিপ্ত না হলেও, পৃথিবীর কক্ষপথে আরেকটি মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। মিসাইলের আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত উপগ্রহ শতসহস্র খণ্ডে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই টুকরাগুলোর সঙ্গে সচল বা অচল উপগ্রহগুলোর সংঘর্ষ ঘটলে, তা হবে এক মহাদুর্যোগ।
যেসব দেশ উপগ্রহ ধ্বংসের মহড়া দিয়েছে, সে দেশগুলোর সচল উপগ্রহও এমন সংঘর্ষের ঝুঁকিমুক্ত নয়। এ ধরনের অস্ত্র পরীক্ষা নিম্ন কক্ষপথে আন্তর্জাতিক এবং চীনের মহাকাশ স্টেশনের অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। এদিকে ফরাসি সেনাবাহিনী মহাকাশে সম্ভাব্য সংঘাতের আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এ বছর ৪ মার্চ মোট ১৫টি দেশ মিলে ১০ দিনব্যাপী এক মহাকাশযুদ্ধ মহড়ার আয়োজন করেছিল। ফরাসি সেনাবাহিনীর ইতিহাসে মহাকাশযুদ্ধের এমন সামরিক মহা মহড়া এই প্রথম।
উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর রাশিয়ার উৎক্ষেপিত স্পুতনিক-১-এর মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষ কৃত্রিম উপগ্রহের যুগে প্রবেশ করেছিল।আজ ৬৭ বছর পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে বিশ্বের মোট ৪০টি দেশের প্রায় ১০ হাজার সক্রিয় কৃত্রিম উপগ্রহ আমাদের পৃথিবীকে ঘিরে আছে। আজকের মানুষেরা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের জন্য এসব কৃত্রিম উপগ্রহের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উপগ্রহগুলো নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারলে শত্রু দেশকে পরাস্ত করতে বেগ পেতে হবে না।
এই মুহূর্তে পৃথিবীতে দুটি বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। একটি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে এবং অন্যটি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে। পরাশক্তি রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশাল বাহিনী নিয়ে দুর্বল প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল। রাশিয়া ভেবেছিল খুব সহজেই এবং স্বল্প সময়ে ইউক্রেনকে কাবু করা সম্ভব হবে। অথচ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এমন ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের তিন বছর পূর্ণ হতে চলছে। তারপরও এ যুদ্ধ কবে শেষ হবে বা আদৌ শেষ হবে কি না, তা কেউ বলতে পারছে না।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে। হামাসের এমন আক্রমণের জবাবে বিলম্ব না করে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাকে ‘জনমানবহীন’ করার ঘোষণা দেন এবং এরপর ইতিহাসে মানবনিধনের কলঙ্কজনক নজির স্থাপন করেন। এ বছর ৭ অক্টোবর এ যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হলেও গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ ধ্বংস, দয়াহীন, দায়হীন নিধনযজ্ঞ থামার কোনো লক্ষণ নেই। বরং যুদ্ধ বিস্তৃত হচ্ছে, ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। ইয়েমেন হয়ে লেবাননে ছড়িয়ে পড়েছে। ইরান হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারছে না। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দিন দিনই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সরাসরি যুদ্ধে জড়িত না হলেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের উত্থানে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে একধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে।সম্পর্কের টানাপোড়েন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। অন্যদিকে ইরান আক্রান্ত হলে চীন তখন ইরানের পক্ষ নেবে। কারণ, ইরান ও চীন নিজেদের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি এক নিরাপত্তা চুক্তি করে রেখেছে।
বর্তমানে বিশ্ব এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন যে পরাশক্তিগুলো আরেকটি মহাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে, সে যুদ্ধ হবে কল্পনাতীতভাবে ভয়াবহ এবং যুদ্ধক্ষেত্রের বিস্তৃতি ঘটবে সুদূর মহাকাশ পর্যন্ত। তাই আজ প্রশ্ন উঠেছে, মানব ইতিহাসের প্রথম মহাকাশে মহাযুদ্ধ কি অনিবার্য?
মইনুল হাসান, ফ্রান্সপ্রবাসী লেখক
এই মুহূর্তে পৃথিবী একটি ব্যাপক এবং ভয়াবহ যুদ্ধের ঝুঁকিতে কাঁপছে। মানুষের হানাহানি এখন জল-স্থল-অন্তরীক্ষ ছাড়িয়ে দূর মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভীতিকর সে আশঙ্কা দিন দিনই এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মহাকাশের দিকে যাঁরা সার্বক্ষণিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছেন, তাঁদেরই একজন হচ্ছেন বেঞ্জামিন স্ট্যাটস, মার্কিন স্পেস কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার। তিনি বলেছেন, ‘মহাকাশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র রাশিয়া এবং চীনের হাতে রয়েছে। মহাযুদ্ধ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ার বিভিন্ন নিদর্শন দেখা যাচ্ছে।’
মার্কিন স্পেস কমান্ড এবং বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কারণ, গত মে মাসে রাশিয়া পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে একটি উপগ্রহ পাঠিয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, এটি একটি ‘যুদ্ধ উপগ্রহ’, অন্য উপগ্রহকে আক্রমণ করে, কক্ষচ্যুত বা নিষ্ক্রিয়, এমনকি ধ্বংস করতে সক্ষম। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ কথা বলেছেন। এদিকে পরাশক্তি চীনও বসে নেই, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মহাকাশে একটি উপগ্রহ পাঠিয়েছে। সেই উপগ্রহ থেকে একটি অজ্ঞাত বস্তু ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই অজ্ঞাত বস্তুটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক উপগ্রহের পাশ ঘেঁষে তীব্র গতিতে ছুটে যায়।
দূর আকাশে আধিপত্য বিস্তারের অদম্য বাসনায় আরও বেশ কিছু দেশ হন্য হয়ে উঠছে। সিকিউর ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন নামক প্রতিষ্ঠানটি ছয় বছর থেকে মহাকাশে ছয়টি দেশের সামরিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছে। এ নিয়ে সংস্থাটি প্রতিবছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। ভবিষ্যতে এই ফাউন্ডেশন দূর আকাশে মোট ১২টি দেশের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জাপান, ইরান, ইসরায়েল, উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া।
এই প্রতিষ্ঠানটির মতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইসরায়েল—এই চারটি দেশ মহাকাশে তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে এবং তাদের হাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। সমরবিদ ঐতিহাসিকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে যুক্তরাষ্ট্র আজ থেকে ৬২ বছর আগে, সেই ১৯৬২ সালের ৯ জুলাই ২৫০ মাইল বা ৪০০ কিলোমিটার ঊর্ধ্বাকাশে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সামরিক এবং প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিল। ১ দশমিক ৪ মেগাটনের প্রচণ্ড শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে সেই সময়ে নিম্ন কক্ষপথের এক-তৃতীয়াংশ উপগ্রহের কলকবজা বিগড়ে গিয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের ডামাডোলে মার্কিনরা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছিল যে শুধু ভূমিতে পারমাণবিক বোমা নয়, দূরের আকাশে আধিপত্য রক্ষায় তাদের হাতে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ রয়েছে।
সমরবিদরা মনে করেন, ভূমিতে আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে হলে মহাকাশে নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। পরাশক্তিগুলো মহাকাশে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে ‘স্পেস আর্মি’ নাম দিয়ে বিশেষ একটি বাহিনী তাদের সেনাবাহিনীতে যুক্ত করেছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার মাত্র দুই ঘণ্টা আগে রাশিয়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত স্যাটেলাইট যোগাযোগ সিস্টেমকে বিগড়ে দিয়েছিল। ফলে প্রথম ধাক্কায় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পড়েছিল।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজায় ভূমি থেকে উপগ্রহের জিপিএস সংকেত বিঘ্নিত করে, শত্রুপক্ষকে অনেকটা বিপাকে ফেলতে সক্ষম হয়। যুদ্ধরত দেশগুলোতে সাইবার হামলার সঙ্গে শত্রু দেশের উপগ্রহগুলোর কাজকে বিঘ্নিত করা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিককালে মহাকাশে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত ভূমি থেকে মিসাইল ছুড়ে কক্ষপথে ঘূর্ণমান উপগ্রহ ধ্বংস করে দেখিয়েছে। এ কাজটি করতে গিয়ে লক্ষ্য হিসেবে তারা তাদের নিজেদের স্যাটেলাইট বেছে নিয়েছিল। এতে করে কেউ কারও প্রতি ক্ষিপ্ত না হলেও, পৃথিবীর কক্ষপথে আরেকটি মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। মিসাইলের আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত উপগ্রহ শতসহস্র খণ্ডে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই টুকরাগুলোর সঙ্গে সচল বা অচল উপগ্রহগুলোর সংঘর্ষ ঘটলে, তা হবে এক মহাদুর্যোগ।
যেসব দেশ উপগ্রহ ধ্বংসের মহড়া দিয়েছে, সে দেশগুলোর সচল উপগ্রহও এমন সংঘর্ষের ঝুঁকিমুক্ত নয়। এ ধরনের অস্ত্র পরীক্ষা নিম্ন কক্ষপথে আন্তর্জাতিক এবং চীনের মহাকাশ স্টেশনের অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। এদিকে ফরাসি সেনাবাহিনী মহাকাশে সম্ভাব্য সংঘাতের আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এ বছর ৪ মার্চ মোট ১৫টি দেশ মিলে ১০ দিনব্যাপী এক মহাকাশযুদ্ধ মহড়ার আয়োজন করেছিল। ফরাসি সেনাবাহিনীর ইতিহাসে মহাকাশযুদ্ধের এমন সামরিক মহা মহড়া এই প্রথম।
উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর রাশিয়ার উৎক্ষেপিত স্পুতনিক-১-এর মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষ কৃত্রিম উপগ্রহের যুগে প্রবেশ করেছিল।আজ ৬৭ বছর পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে বিশ্বের মোট ৪০টি দেশের প্রায় ১০ হাজার সক্রিয় কৃত্রিম উপগ্রহ আমাদের পৃথিবীকে ঘিরে আছে। আজকের মানুষেরা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের জন্য এসব কৃত্রিম উপগ্রহের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উপগ্রহগুলো নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারলে শত্রু দেশকে পরাস্ত করতে বেগ পেতে হবে না।
এই মুহূর্তে পৃথিবীতে দুটি বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। একটি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে এবং অন্যটি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে। পরাশক্তি রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশাল বাহিনী নিয়ে দুর্বল প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল। রাশিয়া ভেবেছিল খুব সহজেই এবং স্বল্প সময়ে ইউক্রেনকে কাবু করা সম্ভব হবে। অথচ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এমন ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের তিন বছর পূর্ণ হতে চলছে। তারপরও এ যুদ্ধ কবে শেষ হবে বা আদৌ শেষ হবে কি না, তা কেউ বলতে পারছে না।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে। হামাসের এমন আক্রমণের জবাবে বিলম্ব না করে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাকে ‘জনমানবহীন’ করার ঘোষণা দেন এবং এরপর ইতিহাসে মানবনিধনের কলঙ্কজনক নজির স্থাপন করেন। এ বছর ৭ অক্টোবর এ যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হলেও গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ ধ্বংস, দয়াহীন, দায়হীন নিধনযজ্ঞ থামার কোনো লক্ষণ নেই। বরং যুদ্ধ বিস্তৃত হচ্ছে, ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। ইয়েমেন হয়ে লেবাননে ছড়িয়ে পড়েছে। ইরান হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারছে না। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দিন দিনই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সরাসরি যুদ্ধে জড়িত না হলেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের উত্থানে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে একধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে।সম্পর্কের টানাপোড়েন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। অন্যদিকে ইরান আক্রান্ত হলে চীন তখন ইরানের পক্ষ নেবে। কারণ, ইরান ও চীন নিজেদের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি এক নিরাপত্তা চুক্তি করে রেখেছে।
বর্তমানে বিশ্ব এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন যে পরাশক্তিগুলো আরেকটি মহাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে, সে যুদ্ধ হবে কল্পনাতীতভাবে ভয়াবহ এবং যুদ্ধক্ষেত্রের বিস্তৃতি ঘটবে সুদূর মহাকাশ পর্যন্ত। তাই আজ প্রশ্ন উঠেছে, মানব ইতিহাসের প্রথম মহাকাশে মহাযুদ্ধ কি অনিবার্য?
মইনুল হাসান, ফ্রান্সপ্রবাসী লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে