যশোরের শার্শায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বাড়ছেই। এক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আরেক প্রার্থীর সমর্থক নিহত হওয়ার এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের তাঁদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল শুক্রবার গোগা ইউপিতে নৌকা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর দ্বন্দ্বের জেরে গুলিতে দুজন আহত হন। একই সময় বোমা হামলায় আহত হয়েছেন আরও একজন।

এদিকে বেনাপোলে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের এক প্রার্থীর বৈঠকে তিনটি বোমা নিক্ষেপ করে পালিয়েছে প্রতিপক্ষ। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।

এলাকাবাসী হামলাকারীদের ফেলে যাওয়া দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯টায় বেনাপোল সীমান্তের পুটখালী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে এ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ শার্শার গোগা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুজন গুলিবিদ্ধ ও একজন বোমার স্প্লিন্টারে বিদ্ধ হন। আহত তিনজনকেই যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে গোগা ইউনিয়নের পাঁচভুলোট দাখিল মাদ্রাসার সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

আহতরা হলেন গোগা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তবিবরের সমর্থক ও যুবলীগের কর্মী ফজের আলী, আশরাফুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম।

আহতরা জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী আব্দুর রশিদের বিপক্ষে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য তবিবর রহমান। নির্বাচনী প্রচার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।

আহত যুবকেরা আরও জানান, সকালে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকেরা পাঁচভুলোট এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী তবিবর রহমানের নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।

তবিবর রহমানের লোকজন বাধা দিলে নৌকার সমর্থকেরা কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। একপর্যায়ে তাঁরা গুলিবর্ষণও শুরু করেন। এতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ফজর আলী, আশরাফুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন এবং রবিউল ইসলাম নামে অপর একজন বোমার স্প্লিন্টারে বিদ্ধ হন।

স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে নিয়ে দুপুরে তাঁদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহিনুর রহমান সোহাগ জানান, আহতদের মধ্যে ফজর আলীর হাতে ও আশরাফুল ইসলাম ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আশরাফুলের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া রবিউল ইসলাম নামে অপর একজন বোমার স্প্লিন্টারে আহত হয়েছেন। তাঁদের ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।

শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম খান বলেন, ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ মামলা দেয়নি এবং কাউকে আটকও করা সম্ভব হয়নি।’

গত ২৩ অক্টোবর এই প্রার্থীর মধ্যেই সহিংসতায় আওয়ামী লীগ নেতা আলী হোসেন জখম হন। পরে ১৮ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত ১১ নভেম্বর তিনি মারা যান। তিনি পাঁচভুলোট ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের গ্রাম কমিটির সভাপতি এবং স্বতন্ত্র ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী তবিবরের সমর্থক ছিলেন।

এদিকে বেনাপোল সীমান্তের পুটখালী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও এবারের নির্বাচনের প্রার্থী মুক্তার আলী জানান, তিনি রাতে কর্মী–সমর্থকদের নিয়ে রাস্তার ধারে বৈঠক করছিলেন। এ সময় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস মার্কার পোস্টার লাগানো বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে থাকা যুবকেরা বৈঠকের স্থলে পর পর তিনটি হাত বোমা নিক্ষেপ করে পালিয়ে যান। এতে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে হামলাকারীদের ধাওয়া করলে তাঁরা ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যান।

সদস্য পদপ্রার্থী মুক্তার আলী বলেন, ‘আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ বোমা হামলা করা হয়েছে। দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ দেব।’

বেনাপোল বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রোকনুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’

এদিকে বেনাপোল পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক শুকুমার দেবনাথ বলেন, শার্শা উপজেলাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে নৌকার প্রার্থীরা। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করছেন।

শুকুমার দেবনাথ আরও বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দল থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যদি প্রশাসন নাশকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ না হয় তবে সামনে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।’