Ajker Patrika

সংগীতের ঝরনাধারায় নবতিপূর্ণা সন্জীদা খাতুন

মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১০: ৫৫
সংগীতের ঝরনাধারায় নবতিপূর্ণা সন্জীদা খাতুন

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা ছুঁই ছুঁই। ছায়ানট মিলনায়তন সংগীতপিয়াসীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ। উপলক্ষ ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুনের ৯১ বছরে পদার্পণ। এ উপলক্ষে সুর-বাণী-ছন্দের পরিবেশনায় আনন্দ আয়োজন করে ছায়ানট। এই আয়োজনে ছিল গান, নৃত্য, আবৃত্তি। শ্রোতাদের জন্য মিলনায়তনের বাইরে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সেই আয়োজন দেখারও ব্যবস্থা ছিল।

সন্জীদা খাতুন একাধারে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সংগীতজ্ঞ এবং শিক্ষক। পাঁচ বছর বয়সে প্রসিদ্ধ ঠুমরি গায়ক ওস্তাদ মহম্মদ হোসেনের কাছে তাঁর গানে হাতেখড়ি হয়েছিল।

ঠিক ১০টায় হুইলচেয়ারে বসে মঞ্চে আসেন সন্জীদা খাতুন। তাঁকে বসানো হয় নির্ধারিত স্থানে। মিলনায়তনের সবাই দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানান।

ছায়ানটের ‘আনন্দ আয়োজন’ শুরু হয় রাগ বৃন্দাবনী সারং পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। মিলনায়তনে উপস্থিত সবাই অভিজিৎ কুণ্ডের এই ধ্রুপদ পরিবেশনা স্তব্ধ হয়ে শোনেন। এরপর প্রিয় মানুষকে নিয়ে ‘কথন’ পাঠ করে শোনান ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। শুরুতে তিনি বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবরে দুঃখ প্রকাশ করেন। কথন পাঠে সারওয়ার আলী বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মিনু আপার নব্বই বছর পূর্ণ হলো। আমাদের পরম সৌভাগ্য, বয়সের কারণে দেহ কিছুটা অসমর্থ হলেও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও চিন্তাধারার ক্ষেত্রে তিনি সচল ও সক্রিয় রয়েছেন। এটি কেবল তাঁর হাতে গড়া ছায়ানট, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ ও নালন্দা নয়, যাঁরা বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির সুস্থ ধারা এবং মানবিক সমাজ গড়ায় আগ্রহী, তাঁদের সকলের জন্য সুসংবাদ।...’

কথন পাঠের পর ছায়ানটের শিক্ষার্থীরা সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে মণিপুরি নৃত্য দল।

এরপর নিজের কথা প্রসঙ্গে সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘আমার জীবনের নব্বইটি বছর পার হয়ে গেল। আজ ভাবতে বসেছি, জীবনটাকে আমি কী রকম করে সাজাতে চেয়েছিলাম আর বাস্তবে কী হয়েছে। আমার মা ভিখারিকে কিছু দেবার কাজটি আমাদের দিয়ে করাতেন। বলতেন, তাতে গরিব মানুষদের প্রতি আমাদের মনে মায়া-মমতা জন্মাবে। এ শিক্ষা মানুষকে ভালোবাসবার মানসিকতা গড়ে দিয়েছিল বাল্যকাল থেকে।’

বড় বোনের কথা স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘গানের সুর আর ছন্দ আমাকে আবাল্য মোহিত করেছে। শেষ বিকেলে দক্ষিণের বারান্দায় পাটি পেতে বড়দি গান গাইতে বসতেন। নানা ধরনের গান। আমার আকর্ষণ ছিল একটি গানে, “এসো এসো হে তৃষ্ণার জল”। অপেক্ষা করতাম, বড়দি কতক্ষণে গাইবেন।’ এ কথা বলার পর তিনি মিলনায়তনের সবার উদ্দেশে “এসো এসো হে তৃষ্ণার জল, কলকল্‌ ছলছল্‌ ...’ গানটি পরিবেশন করেন। ছায়ানট মিলনায়তন আর মিলনায়তনের বাইরে উপস্থিত সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর গান শোনেন।

বেলা বাড়ে। মিলনায়তনে শ্রোতার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। সন্জীদা খাতুনের বক্তব্যের পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্লান্ত বাঁশির শেষ রাগিণী’ গানটি পরিবেশন করেন ফাহমিদা খাতুন। এরপর ‘আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা’ পরিবেশন করেন ইফ্ফাত আরা দেওয়ান, রাম বসুর ‘ভাষণ’ কবিতা আবৃত্তি করে শোনান জহিরুল হক খান, লাইসা আহমদ লিসা পরিবেশন করেন রবিঠাকুরের ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’, লালন শাহর গান ‘আমারে কি রাখবেন গুরু চরণদাসী’ পরিবেশন করেন চন্দনা মজুমদার। তারপর সমবেত নাচ। পরিবেশন করে ভরতনাট্যম দল। ফারহানা আক্তার শ্যার্লি পরিবেশন করেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘আমি সারা সকালটি বসে বসে’, অতুলপ্রসাদ সেনের ‘ওগো নিঠুর দরদি, এ কি খেলছ অনুক্ষণ’ পরিবেশন করেন সুমন মজুমদার, কাজী নজরুল ইসলামের ‘পাষাণের ভাঙালে ঘুম’ পরিবেশন করেন শারমিন সাথী ইসলাম। সর্বশেষ ছোটদের দলীয় গান শাহ আবদুল করিমের ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আনন্দ আয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত